টর্চ লাইট বিভ্রাট ও পদ্ম পাতায় প্রেমের গল্প
নাসিম হোসেন
প্রকাশিত : ০৭:৫২ পিএম, ৮ অক্টোবর ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৩:৪৭ পিএম, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ সোমবার
‘স্যার, একটা টর্চ লাইট পাইছি, দেখেন তো এটা আপনাদের কিনা?’ -আমার আদ্রকছড়া ক্যাম্পের সুহৃদ, বিরু কারবারী মাথা চুলকাতে চুলকাতে অনেকটা বিষণ্ণ বদনে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো। বিরু কারবারীর (পাড়া প্রধান) সঙ্গে ওর পাড়ার দুজন লোক। একজন আমার ক্যাম্প লাগোয়া অনিল। ওর চিন্তিত মুখ, সর্বোপরি ওর প্রশ্নের ধরণ আমাকে অস্বাভাবিক একটা কিছু ঘটেছে- এমনই ইঙ্গিত দিলো।
বিরু কারবারী আমার ক্যাম্পে নানা প্রয়োজনে অবাধে আসতো। ওকে আমি ‘বিরু আজু (দাদু)’ বলে ডাকতাম। একেবারেই হালকা পাতলা গড়নের খর্বাকায় এই কারবারীর মাথায় শুভ্র সাদা চুল নিয়ে নানা সময় ওর সঙ্গে অনেক রসিকতা করেছি। মাঝে মাঝেই সকালের নাস্তার টেবিলে আমার সাথে মিলিত হতো। ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ক্যাম্প কমান্ডার এবং পাহাড়ি গণ্ডি পেরিয়ে অন্য একটি মাত্রা পেয়েছিল। ওর বাড়িতেও আমার অবাধ যাতায়াত ছিলো।
যে বিরুর সঙ্গে আমার এমন গভীর সম্পর্ক, তার এই চিন্তিত মুখ আমাকে বেশ অবাক করে। আমিও কিছু একটা হয়েছে আঁচ করতে পেরে ওকে প্রশ্ন করি- ‘কেন আজু কী হয়েছে?’
বিরু তার দু’উরুর মাঝে গামছায় ঢাকা তিন ব্যাটারির একটি টর্চ লাইট আমার টেবিলের ওপর রাখে। কাচু মাচু করতে করতে বলে, ‘স্যার এ লাইটটা আপনাদের ক্যাম্পের কেউ অনিলের ঘরে ফেলে গেছে।’
আমার হাত পা শীতল হয়ে গেল পরবর্তী বর্ণনা শুনে।
‘স্যার, আপনি তো অনিলের মেয়ে উষাকে দেখেছেন। ওর ঘরে আপনাদের একজন লোক গেছিলো। সে টর্চের আলো ফেলে, তাতেই অনিলের ছোট মেয়ে এষা জেগে উঠে চিৎকার দেয়। মেয়ের চিৎকার শুনে অনিল জেগে উঠলে লোকটা দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় হাত থেকে টর্চটা পড়ে যায়।’
আমি বিরুর বর্ণনা শুনতে শুনতে কল্পনায় সামরিক আদালতের লাল-সালু ঘেরা এজলাসে আসামির বেশে নিজেকে দেখতে পাচ্ছিলাম। বিরু কারবারী বলতে থাকে- ‘স্যার, আপনি লোকটার উপযুক্ত বিচার করে দিবেন।’
এবার রহস্যজনকভাবে আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে, ‘স্যার লোকটার চাকুরি যেন থাকে।’
আমি তাৎক্ষণিক অনিলকে জিজ্ঞাসা করি-তুমি লোকটাকে চিনবে? অনিলের জবাব, ‘না স্যার, অন্ধকারে মুখটা দেখিনি।’
আমি ক্যাম্প জেসিওকে ডাকি। বিরু আর অনিলকে বসিয়ে রেখে জেসিওকে এক পাশে নিয়ে উদ্ধার পাওয়া টর্চটা তার হাতে দিয়ে বলি, ‘এই টর্চের মালিককে বের করেন।’
আমি ভাবতে লাগলাম, কী করে ক্যাম্প থেকে একটা সৈনিক সবার অলক্ষ্যে রাতের অন্ধকারে বের হতে পারলো? কেউ দেখলো না? আমার নিরাপত্তা কোথায়? আমাদের সব সম্মান তো ধুয়ে মুছে যাবে!
বিচ্ছিন্নতাবাদী অপারেশনে এ ধরনের একটি ঘটনাই তো পুরো ব্যাটালিয়নের সব কষ্টকর অর্জনকে মুহূর্তে ধূলিসাৎ করে দিবে। বিরু কারবারী নানাভাবে আমাকে সাহায্য করেছে ওর পাড়ার সবার সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে।
আদ্রকছড়ার প্রতিটি ঘরের সঙ্গে আমার একটা মোটামুটি প্রীতির সম্পর্ক। সবার নাম আমি জানতাম, সবাইকে তার নাম ধরে সম্বোধন করতাম। কারো অসুখে যথা সম্ভব সাহায্য করতাম। ক্যাম্পের টিভি রুমে বাচ্চাদের তাদের জীবনে প্রথমে টিভি দেখার সুযোগ করে দিয়েছি। পাড়ার ছেলেদের সাথে প্রতিদিন বিকালে ফুটবল খেলি। ১৯৯১’র ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলকে মেরামত করে দিয়েছি। জন্ডিসে মারা যাওয়া বালক রুবেলের শবদাহে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি আজ সব ম্লান হয়ে যেতে চলেছে কোন এক সৈনিকের প্রেমোচ্ছ্বাসের কাছে।
মিনিট দশেক পরে ক্যাম্প জেসিও সামনে এসে দাঁড়ালো। কালপ্রিট বক্সার সানোয়ার।
দ্রুত অধিনায়ককে সেটে জানালাম। অধিনায়ক শুনে আঁতকে উঠলেন, তার তিল তিল করে গড়া ক্যারিয়ারে কমান্ড ফেইলারের কলঙ্কের কথা মনে করে।
‘শালার নুনু কেটে দাও’- সিও’র ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।
আমি আশ্বস্ত হলাম, নিজেরটা রক্ষা পেল বলে।
বিরু আর অনিল সু-বিচারের আশ্বাস পেয়ে বাড়ি চলে গেল।
আমি আর ক্যাম্প জেসিও ঘটনার আদ্যপ্রান্ত উদঘাটনে নিবৃত হলাম:
উষার সাথে সানোয়ারের একটা প্রেম পর্ব চলছিলো বেশ কয়েকদিন থেকে সবার অলক্ষ্যে। একটু ডানপিটে স্বভাবের, ১৮/১৯ বছরের তরুণীকে আমাদের কেউ কেউ পাগলি বলে ডাকতো। প্রায়ই তাকে দেখা যেত ওদের পোষা মহিষের রাখাল হিসাবে। মহিষগুলোর দিকে ছুঁড়ে দেওয়া খিস্তি গুলো ক্যাম্প থেকেও আমরা শুনতে পেতাম।
ক্যাম্প আর পাড়ার মাঝ দিয়ে চলা ছড়ার একটু গভীর অংশে এলে মহিষগুলো শুয়ে পরতো গা জুড়াতে। আমাদের সৈনিকদের গোসলের জায়গাও ছিল এই অংশে। এখানে একটি নলকূপ ছিল, যার পানি পাড়ার লোকেরাও ব্যবহার করতো। উষাও পানি নিতে আসতো। এই ‘ওয়াটার কালেকশন পয়েন্ট’টির উপর নজর রাখা হতো ক্যাম্পের প্রবেশ মুখের একটি পোস্ট থেকে। এখানেই ডিউটিরত অবস্থায় কোন এক মাহেন্দ্রক্ষণে চার চোখের মিলন ঘটে। সুঠামদেহী সুপুরুষ সানোয়ারের হৃদয়ে আলোড়ন উঠে, প্রশ্ন জাগে মনে-
‘তুমি রোজ বিকেলে আমার বাগানে
ফুল নিতে আসতে, জানি না তুমি ফুল না
আমাকেই বেশি ভালোবাসতে’
এক দুপুরে যখন অধিকাংশ সদস্য আহার শেষে ‘ভাত ঘুম’ এ মগ্ন, সানোয়ার পোস্ট ছেড়ে নলকূপের কাছে চলে আসে উষাকে দেখে। নিজের পানির বোতলে পানি ভরার বানানো অজুহাতে। টিউবওয়েল চাপতে সাহায্য করে সে। টিউবওয়েলের মুখ দিয়ে সেদিন শুধু পানিই বের হয়নি প্রেমের সূধাও বের হয়েছে দুজনের হৃদয় থেকে।
ক্যাম্পের তিন স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাঁদরকে ভেদ করে শেষ রাতে টয়লেটে যাওয়ার ভান করে নিরাপত্তা রক্ষীর চোখে ধূলো দিয়ে টিলার ঢাল বেয়ে নীচে গড়িয়ে পড়ে। জাত-পাত আর সেনা শৃঙ্খলাকে উপেক্ষা করে পঁচিশ বছরের রোমিও ছুটে চলে আঠারোর জুলিয়েটের বাড়ির দিকে। মনে তার প্রেমের সেই দুর্নিবার সংগীত
‘পেয়ার কিয়া তো ডরনা কিয়া’
অনিলের নৈশ প্রহরী পোষা কুকুরের মুখও সে বন্ধ করে ফেলেছে ঘুষ দিয়ে। পকেটে থাকা কয়েক টুকরো মাংস সে আগেই সংগ্রহ করে রেখেছিলো রাতের ডিনার টেবিল থেকে। তা মাংসের গন্ধ পেয়ে সারমেয়টি তার বিশ্বস্ততা হারিয়ে ফেলে। কয়েকবার অনুচ্চ স্বরে ডেকে সানোয়ারের প্রেম প্রহরী বনে যায়।
মাচাং ঘরের খোলা চত্ত্বরে নিঃশব্দে উঠে আসে সে। ঘরের দরজার ফোকর দিয়ে টর্চের আলো ফেলে।
কিন্তু উষা সারাদিনের পরিশ্রমে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আর দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থেকে নৈশ অভিসারের ক্ষণটিতে সাড়া দেওয়ার জন্য সে আর নিজেকে সজাগ রাখতে পারেনি।
উষা কি জানতো তুমি ওর সাথে দেখা করতে আসবা? আমাদের এমন প্রশ্নের জবাবে সানোয়ারের দৃঢ় উত্তর-‘অবশ্যই’
আমাদের কোন সুযোগ নাই এই ‘মিউচুয়াল কনসেন্ট বা পারস্পরিক সমঝোতার বিষয়টি যাচাই করার। তো কিভাবে অভিসারের শুভক্ষণটি ভুণ্ডল হলো?
আমাদের এমন জিজ্ঞাসার জবাবে সানোয়ার জানালো-
ওর টর্চের আলো উষার ঘুম না ভাঙ্গিয়ে এষার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়। রং নাম্বারে হিট করায় এষা চিৎকার করে উঠে। দ্রুত মাচা থেকে নামতে গিয়ে খাঁজ কাটা হেলানো কাঠের গুড়িতে পা হড়কে গিয়ে উল্টে পড়ে সে। আর তাতে হাত থেকে ছিটকে পড়ে টর্চ।
একটা গুরুত্বপূর্ণ আলামত হারিয়ে সে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। রাতেই ধরণা দেয় বিরু কারবারীর কাছে যেন ঘটনাকে ম্যানেজ করে। সকালে অনিলও রাতের ঘটনা বিরুকে জানায়। ক্যাম্পে জানাতে বলে। উভয় সংকটে পড়ে যায় বিরু।
অনিলের আস্থা ছিল ক্যাম্পে গেলে গত রাতের ঘটনার একটা বিহিত হবে।
সানোয়ারের প্রেমের ফুল ফোটার আগেই ঝরে পড়ে। ফুল না ফুটুক, দূর জোন সদরে সামরিক আদালতের বিউগল বেজে উঠলো দুদিন পর। সামরিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে চাকরিটা হারালো সে।
তাও ভালো সিও ‘ওটা’ কেটে নেয়নি।
সানোয়ারের প্রেম একতরফা না দুতরফা ছিলো তা আমরা জানার চেষ্টা করিনি।
তবে ২০০৬ সালে রেজামনি ক্যাম্পের সৈনিক পারভেজ আর দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া পূরবীর প্রেম এক দুর্দান্ত রূপ নিতে গিয়ে ‘নিষ্ঠুর নজরদারীর’ কারণে কোন লাইলি-মজনু উপাখ্যান তৈরি করতে পারেনি।
পারভেজ সদ্য চাকুরিতে যোগ দেওয়া এক নবীন সৈনিক। বিশ একুশ বছরের এক তরুণ। চেহারা আর চাল চলনে কেতা দূরস্ত। সামরিক পোষাকে ওকে মানায় ভালো। চলনে বলনে হালের উঠতি নায়ক শাকিব খানের মতো। তো নায়ক শাকিব খান রূপী পারভেজের মনে নায়িকা পূর্নিমা হিসাবে ধরা পড়লো ত্রিপুরা কিশোরী পূরবী। রেজামনি স্কুলের কাছে একটা রুট প্রটেকশন পোস্টে ডিউটি করার সময় তম্বী কিশোরী পূরবীর সাথে তার দেখা হয়।
তারপর যা হয়-‘পড়ে না চোখের পলক, কী তোমার রূপের ঝলক।’ দু’পাশে বেনী করা চুলের মাঝে পারভেজ হারিয়ে ফেলে জাত-কূল এবং সেনা শৃংখলার পরিমিতি বোধ।
এদিকে পূরবীরও দফা সারা। ঐ ছোট চুল ওয়ালার চোখের যাদুর সম্মোহনে কিশোরীর তনুমনে উত্তাল প্রেমের পাহাড়ি ঢল। ‘হয়নি তো কোনো কথা হয়েছে শুধু অনুভূতি’। বালামের গানের মতো দুজনেই খুজতে থাকে অনুভূতি প্রকাশের সেই চিরায়ত বাক্য ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলার সুযোগের।
পূরবী থাকতো ওর বোনের বাড়িতে। বোনের বাড়িটি ক্যাম্পের ৩নং পোস্টের নীচে। এ পোস্টের ঢাল দিয়ে একটা পায়ে চলা পথ ওদের বাড়ির দিকে গেছে। এ পথটা আবার কাঁটাতার দিয়ে ক্যাম্পকে আলাদা করেছে। তা কাঁটাতার তো আর হৃদয়ের স্পন্দনকে আলাদা করতে পারে না। পারভেজ তার ডিউটি পোস্ট থেকে সবার অলক্ষ্যে প্রথম প্রেমের অনুভূতির কথা লেখা চিঠিটি একটি মাটির ঢেলা দিয়ে পুরে অপেক্ষায় থাকে। বিকেলে পূরবী স্কুল থেকে ফেরার পথে ঐ মাটির ঢেলাটি ছুঁড়ে মারে ওর সামনে।
‘To Whom it May Concern’ পূরবী ঠিকই টের পায় ঐ মাটির ঢেলার গুরুত্ব।
এবার পূরবীর জবাব দেবার পালা। কিন্তু ক্যাম্পের বেষ্টনী পার হয়ে কিভাবে পাঠাবে তার মনের কথা। উপায় খুঁজতে থাকে সে। পারভেজ আর পূরবীর মাঝে বার্লিন ওয়ালের মতো নিরাপত্তা বেষ্টনী। প্রেমে পড়লে নাকি বুদ্ধি বাড়ে। পূরবীর মাথাতে এলো এক অভিনব পদ্ধতি-জলে ভাসা পদ্ম পাতা হলো তার চিঠির বাহন।
সৈনিকরা গোসলের জন্য ব্যবহার করতো ছড়ার একটি অংশ। সেখান থেকে পঞ্চাশ গজ দূরে উজানে পূরবীরাও নামতো গৃহস্থলী কাজে। পানি ধরে রাখার জন্য ছড়ার এক পাশে বালির বস্তা দিয়ে একটু বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এতে পানির উচ্চতা বেড়ে যায়। বাঁধের একপাশে একটু ফাঁক রাখা হয় যাতে কিছু পানি বের হয়ে যেতে পারে। এতে ছড়ার ঐ অংশে একটু স্রোত তৈরি হয়। পানির এই মৃদু স্রোত উজান থেকে ছেড়ে দেওয়া যে কোন লতা পাতাকেই বয়ে নিতে পারে ভাটিতে। পূরবী তার প্রথম প্রেমের ছোট্র চিঠি খানি একটি বড় পদ্ম পাতায় রেখে ভাটিতে ভাসিয়ে দেয়। দুপুরে গোসলে আসা পারভেজের দৃষ্টি এড়ায় না। ছড়ার পানির মৃদু আলোড়ন তার বুকে সমুদ্রের ঢেউ আনে। কয়েক মিনিট পর ওটা তার কাছে পৌঁছালে উঠিয়ে নেয় সে। এটা ছিলো তার দেওয়া চিঠির উত্তর। পূরবীর তরফ থেকে প্রথম চিঠি।
তো চিঠি চালাচালির এই অভিনব পদ্ধতি গ্রীনিজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পেতে পারে।
সৈনিকদের গোসলের স্থানটি সার্বক্ষণিক নজরে রাখে ক্যাম্পেরই একটি পোস্ট। এ পোস্ট থেকেই একদিন কর্পোরাল রহিম লক্ষ্য করে পূরবী এবং পারভেজকে ছড়ার দুপাশে দাঁড়িয়ে কথা বলতে।
আর যায় কোথায়, বাংলা ছবির রহিমা খালার মতো সারা ক্যাম্পে ভাইরাল করে দেয় কিশোরী-তরুণের অবুঝ প্রেমের কথা। কর্পোরাল রহিমের অধিকতর গোয়েন্দা তৎপরতায় পারভেজের বিছানা তল্লাশি করে বালিশের ভেতর পাওয়া যায় আরও তিনটি চিঠি।
কাঁচা প্রেমের উচ্ছাসে ভরা প্রতিটি লাইন। জাত পাতের বাঁধা না মানার দৃঢ় প্রত্যয়। স্বপনের আঁকিবুকি নতুন কোন জীবনের প্রত্যাশায়-
‘আশা ছিল মনে মনে প্রেম করিমু তোমার সনে
তোমায় লয়ে ঘর বান্ধিমু গহীন বালুর চরে’
পারভেজ-উষার প্রেম গহীন বালুচরের দেখা পায়নি। পারভেজ স্থানান্তরিত হয় গহীন উত্তরের প্রায় জনবিরল রোমনিপাড়া ক্যাম্পে।
পাথুরে পাহাড়ের ফাটলে যেমন বীজ অঙ্কুরিত হয়, তেমনি সেনা নিষেধাজ্ঞা কঠিন কঠোর বিধান উপেক্ষা করেও কারো কারো জীবনে প্রেম এসেছিলো। কেউ কেউ প্রেম করার প্রচেষ্টা নিয়ে জীবন না হলেও জীবিকা বিসর্জন দিয়েছে। তবুও জগতে প্রেম থাকবে, যতদিন পাহাড়ে ঝর্ণা ধারা থাকবে, পদ্ম পাতায় প্রেমের পাতায় চিঠি আসবেই।
লেখক: সাবেক সেনা কর্মকর্তা