মরিচ ক্যান্সারের কারণ নাকি প্রতিরোধক?
প্রকাশিত : ০৪:০০ পিএম, ১১ মে ২০১৭ বৃহস্পতিবার
কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়, মরিচ খেলে ক্যান্সার হতে পারে। এটা যতদূর সম্ভব কম খাওয়া উচিত। আবার কোনো কোনো রিপোর্টের ভাষ্য, মরিচ ক্যান্সারের শত্রু। মরিচ ক্যান্সার প্রতিরোধক। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে: মরিচ কেমন খাবার? এটা খেল ক্যান্সার হতে পারে, নাকি এটা ক্যান্সার প্রতিরোধক? চলনু খুঁজে নেয়া যাক এসব প্রশ্নের উত্তর।
ক্যান্সার-প্রতিরোধক হিসেবে মরিচ :
এ গবেষণা থেকে জানা গেছে, পাকস্থলির ক্যান্সারের কোষ নির্মূলে মরিচের ভূমিকা আছে। এমনকি পরিপাকতন্ত্রের অন্যান্য প্রত্যঙ্গের ক্যান্সার-কোষ ধ্বংসেও মরিচে ভূমিকা লক্ষনীয়। অনেকে বলে থাকেন, প্রায়ই তাদের পেট খারাপ হয় এবং পরিপাকতন্ত্র দুর্বল; তাই তারা মরিচ কম খান। অথচ কোনো কোনো গবেষণা বলছে, মরিচ পাকস্থলির গ্যাসট্রিক মিউকোসা রক্ষা করতে পারে। এমনকি গ্যাস্ট্রিক আলসারের চিকিৎসায়ও মরিচ ব্যবহার করা যেতে পারে।
মরিচ খেলে ক্যান্সার :
১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্বাস্থ্যবিষয়ক পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয়। খবরে বলা হয়, ১৯৮৯ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মেক্সিকোর একদল মানুষের ওপর জরিপ চালানো হয় । জরিপের ফলাফল অনুসারে, যারা লাল মরিচ খান, তাদের পেটে ক্যান্সার হবার আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে বেশি। ২০০৬ সালে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নুরে এরিন ও অন্যান্য গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, মরিচ সম্ভবত ব্রেস্ট ক্যান্সারের একটি কারণ। তারা মনে করেন, মরিচ ব্রেস্ট ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, আসলে কী ঘটে? মরচি কি ক্যান্সারের কারণ, নাকি ক্যান্সার-প্রতিরোধক? আসলে ব্যাপারটি সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। মরিচ ও ক্যান্সারের মধ্যে আদৌ কোনো সম্পর্ক আছে কি না, সেটাও নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।
বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে এমন অনেক পদার্থ আবিষ্কার করেছেন, যা ক্যান্সারের জন্য দায়ী। এ তালিকায় মরিচ আছে কি না, সেটা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এ নিয়ে অস্থির হবার কিছু নেই। একসময় বিজ্ঞানীরা হয়তো ঠিকই আবিষ্কার করে ফেলবেন মরিচের সাথে ক্যান্সারের সম্পর্ক।
আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে ক্যান্সার থেকে বাঁচা যাবে? ক্যান্সার হলে কী করতে হবে? কীভাবে রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে হবে? ইত্যাদি। শরীরের রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে সুষম খাবার খেতে হবে নিয়মিত; করতে হবে শরীরচর্চা। নির্দিষ্ট সময় পর পর শরীরের চেক আপ করানোও জরুরি।
মরিচ খাওয়া সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
মরিচ খাওয়ার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। চলুন তাহলে জেনে নেই সে রকম কয়েকটি পরামর্শ।
পরামর্শ ১: মরিচ খাবেন গরম করে
বাজারে বিভিন্ন রকমের মরিচ আছে। এর মধ্যে শুষ্ক মরিচ, কাঁচামরিচ এবং লবণ-মেশানো মরিচ আছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, কাঁচা মরিচের পুষ্টিগুণ সবচেয়ে বেশি। তবে, মরিচ গরম করে খাওয়া ভালো। কারণ, গরম বা সেদ্ধ করা মরিচ মুখ ও পাকস্থলির ওপর কম নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
পরামর্শ ২: মরিচ খাওয়ার পর ঝাল-প্রতিরোধক কিছু খান
মরিচ ঝাল হলেও অনেকেই এটি খেতে পছন্দ করেন। তবে ঝাল বেশি খেলে শরীরে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। চীনের লিয়াও নিং প্রদেশের রাজধানী শেন ইয়াংয়ের শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিভাগের উপ-প্রধান এবং খাদ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক লি রুন কু বলেন, ঝালের ক্রিয়া কাটাতে মিষ্টি ও টকজাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে। আমাদের অনেকেই আছেন, যারা খুব ঝাল কিছু খাবার পর মিষ্টিজাতীয় কিছু খেয়ে ঝালের কবল থেকে মুক্তি পেতে চান। হ্যাঁ, মিষ্টি ও টকজাতীয় খাবার খেলে ঝালের অনুভূতি কমে যায়।
পরামর্শ ৩: মরিচ খাওয়ার পাশাপাশি খানিকটা ভিনেগার খেয়ে নিন
ঝালের অনুভূতি দূর করতে মিষ্টি ও টকজাতীয় খাবার খাওয়া ভাল। তবে আরকেটি ভিন্ন উপায়ও রয়েছে, ভিনেগারের মধ্যে বিষাক্ত পদার্থ দূর করার ক্ষমতা আছে। সেজন্য যারা ঝাল খেতে পছন্দ করেন, তারা ঝাল খাওয়ার পাশাপাশি খানিকটা ভিনেগার খেতে পারেন।
পরামর্শ ৪: শরীরের অবস্থা বুঝে মরিচ খান
সব ধরনের খাবার সবার পাকস্থলি হজম করতে পারে না। কেউ কেউ প্রচুর মরিচ খান এবং তাদের কোনো সমস্যা হয় না। আবার কেউ কেউ সামান্য মরিচ খেলেই নানান সমস্যা বোধ করেন। প্রশ্ন হচ্ছে, কাদের মরচি খাওয়া উচিত? মাঝে মাঝে যাদের হাত বা পা ঠাণ্ডা হয়ে আসে এবং যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন, তাদেরকে মরিচ খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। যারা গ্যাস্ট্রিক আলসার এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য মরিচ খাওয়া বিপজ্জনক। তাদেরকে সাবধান হতে হবে। তবে আরেকটি বিষয় হলো, আদ্রতা দূর করায় ভূমিকা পালন করে থাকে মরিচ। সুতরাং, বসন্ত ও শরত্কালে আবহাওয়া যখন শুষ্ক থাকে তখনও মরিচ কম খাওয়ার পরামর্শ দেন চীনা বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: ভয়েস অব চীনা