ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

যে সব কারণে ফুসফুসের সমস্যা হয়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:১৪ এএম, ১১ অক্টোবর ২০২০ রবিবার

মানুষ শ্বাস নেয়। কিন্তু এই শ্বাস নেওয়ার প্রক্রিয়া আমরা অনুভব করতে পারি না। সাধারণত শ্বাসকষ্ট শুরু হলে শ্বাস নেওয়া সম্পর্কে আমরা সচেতন হই। এই শ্বাসকষ্টের বিভিন্ন কারণ হতে পারে। সর্দিকাশি, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিসে যেমন শ্বাসকষ্ট হয় তেমনই হৃদরোগের কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। পেটের সমস্যা, গ্যাস, হজমের সমস্যা, অ্যালার্জি, হাঁপানি, রক্তাল্পতা, কিডনির সমস্যা এমনকি অতিরিক্ত মানচাপ চাপ, টেনশনেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। 

তবে বেশিরভাগ শ্বাসকষ্টের জন্য দায়ী ফুসফুসের সমস্যা। মূলত অবস্ট্রাকটিভ লাং ডিজিজের কারণেই শ্বাসকষ্ট হয়। এই ধরনের দু’টি বড় রোগ রয়েছে। একটা হল হাঁপানি বা অ্যাজমা আর অন্যটি হল ‘ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ’ (সিওপিডি)।

বলা হয়ে থাকে,‘যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ’। এই শ্বাস আমরা নিয়ে থাকি দেহের অন্যতম অঙ্গ ফুসফুসের মাধ্যমে। ফুসফুসের প্রধান কাজ হলো বাতাস থেকে অক্সিজেন রক্তপ্রবাহে নেয়া এবং রক্তপ্রবাহ হতে কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে নিষ্কাশন করা। এই যন্ত্রটি দেহের একটি অপরিহার্য অংশ। কিন্তু ফুসফুসে জীবাণু ও দূষণের কারণে সাধারণত বিভিন্ন প্রকার রোগ হয়ে থাকে। যেকোনো মানুষের এই রোগ হতে পারে যা সময় মত চিকিৎসা করাতে না পারলে প্রাণঘাতীও হতে পারে।

আসুন আজ জেনে নেই ফুসফুসের কিছু রোগ ও তাদের থেকে পরিত্রান পাওয়ার উপায় সম্পর্কে-
ফুসফুসীয় রোগের কারণ
- ধূমপান ও মাদকদ্রব্য।
- বিশ্রামহীন জীবনযাপন।
- অপুষ্টি।
- অতিরিক্ত ইসাইক্লিক ওষুধ গ্রহণ।
- ফুসফুসীয় জীবাণু দূষণ।

রোগের লক্ষণ সমূহ
- কাশি উঠে আবার নাও উঠতে পারে।
- শ্বাসকষ্ট হয় এবং শ্বাস প্রশ্বাসের সময় শব্দ হতে পারে।
- রোগী খুব দুর্বল হয়।
- ঘন ঘন প্রস্রাব হয়।
- পায়ের গোড়ালী বা পা ফুলে যায় এবং গিটগুলো ব্যথা করে।
- অস্বাভাবিক ঘুম।

প্রাথমিক চিকিৎসা
- রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে।
- খুব বেশী পরিশ্রম করা যাবে না।
- অ্যালকোহল বা অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এবং ধূমপান সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে।
- পারলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন।
- স্বাভাবিক নরম খাবার খেতে হবে।

এছাড়া যেসব কারণে ফুসফুস আক্রান্ত হয়-
ধূমপান
ফুসফুসে অসুখ বা অন্যান্য সমস্যা হওয়ার অন্যতম কারণ ধূমপান। অধূমপায়ীর তুলনায় ধূমপায়ীদের ফুসফুসে নানা সমস্যা হয়। শুধু তাই নয়, ধূমপানের কারণে ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা ১০ থেকে ৩০ গুণ বেশি। এই ক্যান্সারে মৃত্যুর প্রায় ৮০ শতাংশের জন্য ধূমপানকে দায়ী করা হয়।

বায়ুদূষণ
বায়ুতে স্বাভাবিক অক্সিজেনের পরিমাণ থাকে ২১ শতাংশ। যদি কোনো কারণে এর ঘাটতি হয়ে অন্য গ্যাসের ঘনত্ব বা বালু কণার পরিমাণ বেড়ে যায়, তবেই তাকে দূষিত বায়ু বলে। আর সেই বায়ু গ্রহণের ফলে ফুসফুসের নানা রোগে অনেকেই আক্রান্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন ঘোষণায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণও ক্যান্সারের প্রধান কারণ। অনুমান করা হয়, ফুসফুসের ক্যান্সারের মৃত্যুর ৫ শতাংশ বায়ুদূষণের সঙ্গে সম্পর্কিত।

বংশগত
পরিবারের কোনো সদস্য ফুসফুস সংক্রান্ত কোনো রোগ বা ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে অন্যদেরও ঝুঁকি থাকে; এমনকি যাদের মা-বাবা বা ভাই-বোন ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্ত, তারা নিজেরা ধূমপান না করলেও এই রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

খাদ্যাভ্যাস
কিছু খাবারকে দায়ী করা হয় ফুসফুসের জটিলতার জন্য। যেমন অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় ও কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ খাবার। এ জন্য এসব খাবার বর্জন করা উচিত।

ফুসফুসকে নষ্ট করে দেওয়া বা অকার্যকর করার জন্য দায়ী ফুসফুসের কিছু রোগ। যেমন :

অ্যাজমা
হাঁপানি বা অ্যাজমা একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যার মূল লক্ষণ হলো শ্বাসকষ্ট ও শাঁ শাঁ শব্দে নিঃশ্বাস ফেলা। মূলত: এটা একটা বংশগত রোগ। অ্যালার্জি, তামাকের ধোঁয়া ও রাসায়নিক উত্তেজক পদার্থ হাঁপানির মূল কারণ হিসেবে ধরা হয়। অ্যাজমা বা হাঁপানি কারো একবার হলে পুরোপুরি নিরাময় হয় না; কিন্তু যথাযথ চিকিৎসাসহ নিয়ম মানলে রোগটি যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে এনে জীবন যাপন করা সম্ভব।

সিওপিডি
ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি এক ধরনের ফুসফুসের রোগ, যা ফুসফুসে অক্সিজেন প্রবাহের গতি ধীর করে দেয়। ফলে শ্বাস নেওয়ায় সমস্যা দেখা দেয়। দেখা গেছে, এই রোগে আক্রান্ত ৪০ শতাংশ মানুষই মানসিক কষ্ট ও উদ্বেগের সমস্যায় ভোগে।

শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ
শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বলতে শ্বাসনালির সঙ্গে জড়িত নানা রোগকে বোঝায়। এই ধরনের সংক্রমণকে সাধারণত উচ্চতর শ্বসনতন্ত্রের সংক্রমণ বা নিম্ন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। উচ্চ শ্বসনতন্ত্রে সাধারণত সংক্রমণের মধ্যে টনসিলাইটিস, ফ্যারিনজাইটিস, ল্যারিনজাইটিস, সাইনোসাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, সর্দি ইত্যাদি অন্যতম।

যক্ষা
বাংলাদেশে ফুসফুসের প্রধান রোগ যক্ষ্মা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের যক্ষ্মাবিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদন বলছে, যক্ষ্মা রোগের হার সবচেয়ে বেশি এমন আক্রান্ত ছয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। এটি ছোঁয়াচে রোগ বলে যক্ষ্মায় আক্রান্ত একজন রোগী আরো ১০ জনকে আক্রান্ত করতে পারে।

কভিড-১৯
করোনাভাইরাসজনিত সংক্রমণে কভিড-১৯-এর প্রধান লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে ফুসফুস। শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ। ফুসফুসের কোষগুলোতে এই ভাইরাস বাসা বাঁধে এবং সেখানেই প্রসার ঘটায়।
এসএ/