1. প্রচ্ছদ
2. দেশজুড়ে

প্রদীপ রায়, হাফিজুর রহমান তালুকদার ও মোশাররফ মিয়া

সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে জলমহালের দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে বহুল আলোচিত ট্রিপল মার্ডার মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। 

গত ৫ অক্টোবর সুনামগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (দিরাই) জোন থেকে পরোয়ানা আদেশটি জারি করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য র‌্যাব-৯ কে আদেশ প্রদান করেন।

পরোয়ানাভূক্ত আসামিরা হলেন- দিরাই উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, দিরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান তালুকদার, দিরাই পৌরসভার মেয়র ও দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়া ও তার দুই ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জল মিয়া ও তাসবির মিয়া।

মামলার বিবরণে জানা যায়- ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারী সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় কুলঞ্জ ইউনিয়নের জারলিয়া জলমহালের দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন জেলে নিহত হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় চৌদ্দ মাস পর ২০১৮ সালের ১৪ এপ্রিল সিআইডি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। সিআইডির তদন্তে মামলার ৩৯ আসামির মধ্যে ১৪ জনের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা জহিরুল হক কবির। 

তবে অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করেন মামলার বাদী যুবলীগ নেতা একরার হোসেন। সুনামগঞ্জের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (দিরাই) নারাজি আবেদনের শুনানী শেষে বিচারক মোহাম্মদ সাইফুর রহমান মজুমদার বাদীর আবেদনটি গ্রহণ করে পিবিআইকে পুনঃতদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন। 

প্রায় ৬ মাস পর পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরওয়ারে জামান তদন্ত শেষে সুনামগঞ্জ জেলা আদালতে পুনঃতদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। পিবিআইয়ের তদন্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে বাদি একরার হোসেন আবারো নারাজি আবেদন করেন। এরপর চলতি বছর ২১ অক্টোবর নারাজি আবেদনের শুনানীর দিন ধার্য করে আদালত। ঐদিন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দিরাই আদালত নারাজি আবেদনটি খারিজ করেন এবং মামলায় অস্থায়ী জামিনে থাকা সাত আসামির মধ্যে ছয় জন হাজির হয়ে স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন। 

আদালতের বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ নেতা কূলঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আহাদ মিয়া, আরিফুজ্জামান চৌধুরী এহিয়া, সাইফুল চৌধুরী, সোহেল চৌধুরী, লিপাস মিয়া ও আকুল মিয়া। এসব আসামি এর আগে ধৃত হয়ে জেল হাজতে থাকাবস্থায় আদালত থেকে অস্থায়ী জামিনে ছিলেন। 

এরপর বাদি জেলা দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করেন। দীর্ঘ শুনানী শেষে পূর্বের সকল আদেশ রদ ও রহিত করে গত ১০-০৮-২০২০ইং তারিখে বিজ্ঞ দায়রা জজ ওয়াহিদুজ্জামান শিকদার মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য র‌্যাবকে দায়িত্ব দিতে নিম্ন আদালতকে আদেশ প্রদান করেন। 

গত ৫ অক্টোবর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (দিরাই) জোন-এর বিচারক শুভদীপ পাল কর্তৃক বহুল আলোচিত মামলার আসামি দিরাই উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, দিরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান তালুকদার, দিরাই পৌরসভার মেয়র ও দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়া, দুই ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জল মিয়া ও তাসবির মিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য র‌্যাব-৯ কে আদেশ প্রদান করেন। 

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারীর আদেশটি দিরাই থানায় পৌঁছেছে বলে নিশ্চিত করেছেন থানা অফিসার ইনচার্জ আশরাফুল ইসলাম।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারী সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় জলমহালের দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন জেলে নিহত হয়। এ ঘটনায় দুই দিন পর যুবলীগ নেতা একরার হোসেন বাদি হয়ে ৩৯ জনের বিরুদ্ধে দিরাই থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। দিরাই থানার মামলা নং ৫-২০১৭ ইং।             

এনএস/