ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

নার্সদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হবে

ছৈয়দ আহমদ তানশীর উদ্দীন 

প্রকাশিত : ০৭:২৭ পিএম, ১৪ অক্টোবর ২০২০ বুধবার

করোনা মহামারিতে নার্সরা সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন। এ সময়ে দীর্ঘদিন পরিবার থেকে  বিচ্ছিন্ন রয়েছেন তারা। ১২ ঘণ্টা শিডিওল ডিউটিতে কাজ করছেন, ফলশ্রুতিতে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন নার্সরা। পরিবারের সদস্যদের স্পর্শ করতে না পারা, দূর থেকে কথা বলা, এছাড়া নিজের মনের আবেগ অনুভূতি প্রকাশ করতে না পারায়, জন্ম নিচ্ছে নানা মানসিক ব্যাধি। 

তাছাড়া রোগীর অনুপাতে নার্সদের সংখ্যা খুবই নগণ্য, ফলে অনেক কাজের অতিরিক্ত চাপ আরো বেশী স্নায়ুবিক চাপ তৈরী করে। গেল ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ছিল। নানান আয়োজনে দিবসটি পালিত হয়েছিল। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল- ‘সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য: অধিক বিনিয়োগ, অবাধ সুযোগ’।

বিশ্ব মহামারি কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের সময় বিশ্বব্যাপী নার্সরা মারাত্মক মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ভুগছে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব নার্সেস (আইসিএন)। গেল শনিবার বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে রয়টার্সের কাছে এমন দাবি করেছেন সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী ও ব্রিটিশ নার্স হাওয়ার্ডে ক্যাটন।

তিনি বলেন- শুধু তাই নয়, নার্সদের অনেকেই নানা প্রকার নির্যাতন বা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামও তাদের জন্য যথেষ্ট সরবরাহ করা হয়নি, যার ফলে অধিকাংশ সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা মহামারি মোকাবেলায় লড়াই করে চলেছেন।

আইসিএন-এর প্রধান নির্বাহী বলেন- স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। ন্যাশনাল নার্সেস সমিতির সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে- নার্সদের ৭০ শতাংশ বলেছেন, তারা নানাভাবে সহিংসতা বা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এর ফলে তারা চরম মানসিক চাপে আছেন এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সংকটে রয়েছেন।

এই চিত্রটি বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশের নার্সদের জাতীয় সংগঠনগুলোর প্রায় চতুর্থাংশের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে।

সম্প্রতি সহকর্মী কর্তৃক কর্মস্থলে নিপীড়নের হারও বেড়েছে। কর্ণেল আব্দুল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের ঘটনা সহজে উল্লেখযোগ্য। এভাবে চলতে থাকলে নার্সরা কর্মস্থলে অনিরাপদ বোধ করবেন এবং মারাত্মক মানসিক চাপে ভুগবেন ফলে কাজের স্পৃহা হারাবেন।

সরকার ১৪ নভেম্বর ২০১৮ সালে মানসিক স্বাস্থ্য আইন ২০১৮ প্রণয়ন করেন। এই আইনের ৫নং ধারায় বলা হয়েছে- মানসিক স্বাস্থ্য রিভিউ ও মনিটরিং কমিটি গঠনের কথা। এ কমিটি সুন্দর পরামর্শ দিলে, কর্মস্থলে সবাই মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা পাবেন।

নার্সদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য আমরা নিম্নোক্ত কাজ করতে পারি-
১. নার্স স্বাস্থ্য সুরক্ষা কমিটি গঠন।
২. নার্স সংকট নিরসন অর্থাৎ রোগীর শয্যানুপাতে নার্সের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারলে কাজের চাপ কমবে, ফলে তাদের স্নায়ুবিক চাপও কমবে।
৩. কোনও নার্স মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলে তাকে সাথে সাথে মেন্টাল হেলথ কাউন্সিলর দিয়ে কাউন্সিলিং করা এবং তার সমস্যা সমাধানে সহায়তা করা।
৪. নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্য চেক-আপ।
৫. নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর নার্সদের জন্য বিনোদনমূলক আয়োজন করা।
৬. কাজের ভিত্তিতে বিশেষ প্রণোদনা প্রদান করলে কাজের স্পৃহা বাড়বে।

যাঁরা জীবন বাজি রেখে আমাদের সুরক্ষার জন্য করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন, তাঁদেরকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করার সুযোগ রয়েছে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার সময় এই অনুপ্রেরণা সরকার কেন দিবে না?

কেন সব মানুষ হাসিমুখে আরো বেশি নার্সদের সুবিধার বিষয় মেনে নেবে না? আমি যার মন-প্রাণ জুড়ানো ভালোবাসা চাইবো, তারে তো ততোটাই ভালোবাসতে হবে প্রতিদানে।

পরিশেষে, ইতোমধ্যে নেয়া সকল প্রশংসনীয় উদ্যোগের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে নার্সদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রস্তাব রাখতেই পারি নীতি নির্ধারকদের কাছে।

লেখক- নার্সিং কর্মকর্তা, জেলা সদর হাসপাতাল কক্সবাজার।

এনএস/