গাংনীতে স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ
মেহেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩:২৯ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০২০ শুক্রবার
মেহেরপুরের গাংনীতে রুবিনা খাতুন (২২) নামের এক গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে। পারিবারিক কলহের কারণে তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ রুবিনার পরিবারের। আজ শুক্রবার সকালে রুবিনাকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
নিহত রুবিনা খাতুন সদর উপজেলার টেঙ্গারমাঠ গ্রামের রবকুল হোসেনের মেয়ে ও একই উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের হাতেম আলীর ছেলে বামুন্দী ওয়েভ ফাউন্ডেশনের মাঠ কর্মী মিলন হোসেনের স্ত্রী।
নিহত গৃহবধূর নানী হালিমা খাতুন জানান, ‘প্রায় ৪ বছর আগে পারিবারিকভাবে মিলনের সাথে রুবিনার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে রুবিনার ওপর নানাভাবে অন্যায় অত্যাচার করে স্বামী মিলন ও তার বাবা-মা। নির্যাতন সইতে না পেরে একাধিকবার সংসার ছেড়ে চলে আসে। স্থানীয় ও পারিবারিকভাবে সমস্যা সমাধান করায় তাকে কয়েকবার স্বামীর সাথে পাঠানো হয়। শুক্রবার ভোরে গাংনী, বামুন্দীর ভাড়া বাড়িতে নির্যাতন করে রুবিনার শরীরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।’
রুবিনার বড় মামী শুকতারা জানান, ‘রুবিনার ৫ বছর বয়সে তার বাবা ও মাকে হারিয়ে নানী হালিমার কাছে বড় হয়। এরপর তার নানী পরের বাড়িতে কাজ করে ও অন্যের জমিতে মরিচ তুলে অনেক কষ্ট করে রুবিনাকে লালন পালন করে। এরপর মিলন হোসেনের সাথে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর থেকে নির্যাতন করে আসছিল মিলন। রুবিনার মনিকা নামে ২ বছরের একটি মেয়ে আছে। মনিকার জন্মের পরপরই মিলন রুবিনাকে তালাক দেয়। পরে আমঝুপি ইউনিয়ন পরিষদে মামলা দায়ের করা হলে ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও উভয় পরিবারের সমঝোতায় পুনরায় সংসার শুরু হয়। কিন্তু মিলনের সাথে পারিবারিক কলহের কারণে প্রতিদিনই নির্যাতন করতো।
তিনি বলেন, ‘মিলনের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠার পর সে শিশু মনিকাকে নিয়ে পলিয়ে গেছে। আমরা পরিবারে পক্ষ থেকে ন্যায় বিচার দাবি করছি।’
রুবিনার চাচাতো মামী রিপনারা একই অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা হত্যাকারী মিলনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
তবে মিলন পলাতক ও তার ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান,‘রুবিনাকে মৃত অবস্থায় শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়। রুবিনার শরীরের বিভিন্ন অংশে পোড়া রয়েছে।’
বাড়ির মালিক বামুন্দী পশ্চিমপাড়ার আশরাফুল ইসলাম জানান, ‘গত এক সপ্তাহ আগে মিলন বাড়ি ভাড়া নেয়। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের পারিবারিক কোলহের কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে। রুবিনা বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করলে স্থানীয়রা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হুদা ক্লিনিকে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’
মেহেরপুর সদর থানার ওসি তদন্ত আমিরুল ইসলাম জানান,‘রুবিনার মরদেহ পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবাইদুর রহমান জানান,‘ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে এখনই নিশ্চিত করে কোন তথ্য বলা সম্ভব হচ্ছে না।’
এআই/এসএ/