মাদ্রাসার নামকরণ নিয়ে সমালোচনার মুখে রাবি উপাচার্য
রাবি সংবাদদাতা
প্রকাশিত : ০১:০৮ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০২০ রবিবার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নতুন চালু করা হয়েছে একটি ‘হাফেজিয়া মাদ্রাসা’। যার নামকরণ করা হয়েছে ‘সোবহানিয়া আল-কুরআনুলকারীম হিফজখানা।’ কিন্তু নিজের নামের সঙ্গে ‘মিল পাওয়ায়’ বেশ সমালোচনার মুখেই পড়েছেন উপাচার্য প্রফেসর এম আবদুস সোবহান। হিফজখানা নামকরণের বিষয়ে নেয়া হয়নি সিন্ডিকেটের কোন অনুমোদন।
জানা গেছে, বর্তমান প্রশাসনের সময় প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কবরস্থান জামে মসজিদের পুনঃনির্মাণ করা হয়। চলতি বছরের ৬ মে মসজিদের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহান। ওই মসজিদের দ্বিতীয় তলায় ‘সোবহানিয়া আল কুরআনুল কারীম হিফজখানা’ উদ্বোধন করা হয়েছে। সেখানে একটি নামফলকও স্থাপন করা হয়। আগামী মাস থেকে মাদ্রাসায় ছাত্রদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবার কথা রয়েছে।
হিফজখানার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবরস্থান জামে মসজিদের ইমাম মোসাদ্দেক হোসেন জানান, ‘ওই হিফজখানায় ২০ জন ছাত্রকে ভর্তির পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের পড়াবেন দুজন শিক্ষক। ৬-৭ বছর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৫ বছর বয়সী ছাত্রদের ভর্তি করা হবে। ছাত্রদের ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার টাকা। চলতি বছরের নভেম্বরের শুরুতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হবে। আবাসিক এই প্রতিষ্ঠানে থাকা-খাওয়াসহ সামগ্রিক ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ২০০ টাকা।’
হিফজখানা নামকরণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ আলী হোসেন জানান, ‘তিনি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম পরামর্শ করে আব্দুস সোবহানকে নামকরণের বিষয়ে বলেছিলাম। পরে উপাচার্য এই নামকরণের বিষয়ে অনুমতি দিয়েছেন। সোবহানিয়া আল-কুরআনুলকারীম হিফজ খানা নামকরণের বিষয়ে সিন্ডিকেটের অনুমোদন নেয়া হয়নি। তবে উপাচার্যের মৌখিক অনুমোদন রয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বলছেন, ‘উপাচার্যের নামের সঙ্গে মিলিয়ে মাদ্রাসার নাম রাখা এক ধরনের অন্যায়। বিষয়টি নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। খোদ মাদ্রাসার নামকরণ কমিটির সদস্যরা বলছেন, উপাচার্যের নামের সঙ্গে মিল রেখেই মাদ্রাসার নামকরণ করা হয়েছে। উপাচার্য নিজেই এতে সম্মতি দিয়েছেন।’
তারা আরও বলেন, ‘উপাচার্যের নামের সঙ্গে মিলিয়ে মাদ্রাসার নামকরণ যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই এটা এক ধরনের অন্যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদে কারো নাম দিতে গেলে বিভিন্ন কমিটির সিদ্ধান্ত লাগে। একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন দরকার হয়। এক্ষেত্রে অনুমোদন হয়েছে কী-না, সেটা আমরা জানি না। তবে উপাচার্যের নামে মাদ্রাসার নামকরণ করার কোনো কারণ নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে হিফজখানা চালানোর বিষয়ে ইউজিসির কোনো নীতিমালা আছে কী-না, সেই প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘এ রকম ফান্ডিং করার আমাদের সুযোগ নেই। আলাদাভাবে আমার মনে হয় না এমন কিছু করার সুযোগ আছে। কমিশনে এ বিষয়ে এখনও আলোচনা হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য প্রফেসর এম আবদুস সোবহান সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।
এআই/এসএ/