রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের ভূমিকা ‘খুবই নগন্য’: যুক্তরাষ্ট্র
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:৪০ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০২০ বুধবার
যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র মিয়ানমারের সামরিক দমন অভিযানের ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের সংকট নিরসনে চীনের কাছে ‘যা আশা করা হয়েছিল’ সেই তুলনায় দেশটির ভূমিকা ‘খুবই নগন্য’।
যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই বিগান মঙ্গলবার বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে চীন রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে খুবই সামান্য অবদান রেখেছে। পিপলস রিপাবলিক অব চায়না রোহিঙ্গাদের এই বিপর্যয়ে সৃষ্ট সংকট সমাধানে আরো বড় ধরনের ভূমিকা রাখা উচিৎ ছিল। তারা এ সংকট নিরসনে আরো বেশি কিছু করবে বলে আশা করা হয়েছিল।’
মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত ও বাংলাদেশে সপ্তাহব্যাপী তার সফর শেষে টেলিফোনে এক ব্রিফিংকালে এ কথা বলেন। শুক্রবার সফরটি শেষ হয়।
বিগান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে মিয়ানমারকে বার্তা দিতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশ বিশেষত চীনের পক্ষ থেকে একই ধরনের উদারতা ও স্পষ্টতা আশা করে।
সংকটটি নিরসনের একটি উপায় বের করতে এ অঞ্চলের সকল দেশকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এই সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে দীর্ঘদিন ধরে কোন দেশে শরণার্থী থাকা কোন সমাধান নয় উল্লেখ করে মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই শরণার্থী জনগোষ্ঠীর মানবিক প্রয়োজন মেটাতে সমান গুরুত্ব সহকারে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের একটি টেকসই সমাধানের উপায় বের করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সমস্যার একটি দীর্ঘ-মেয়াদী সমাধান নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী দেশটির যে অংশীদার আছে তাদের সাথে কাজ করবে। এছাড়াও বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় দাতা সম্মেলনে এই বিপুল সংখ্যক বাস্তুচ্যূত জনগোষ্ঠিরকে পূর্ণ সমর্থন ও সহায়তা দিতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
ঢাকা সফরকালে বিগান রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের একটি উপায় বের করতে যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে সহযোগিতা করতে পারে তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে আলোচনা করেন।
বিগান বলেন, বাংলাদেশী জনগণের উদারতা এবং বাংলাদেশী সরকার এই বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।
বাংলাদেশে কক্সবাজার জেলায় ১১ লাখ বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে। এদের অধিকাংশই তাদের নিজ ভূমিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের পর প্রাণ বাঁচাতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে এদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে।
গত সপ্তাহে ঢাকা সফরকালে বিগান বলেছিলেন, এ অঞ্চলের শক্তিধর দেশগুলোর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গারা যেন পূর্ণ সম্মান ও নিরাপত্তার সাথে শিগগিরই যেন নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে পারে, সেই পরিবেশ তৈরির জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি ‘জোরালোভাবে’ আহ্বান জানানো উচিৎ।
তিনি বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সাথে রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপারে এক যৌথ ব্রিফিংকালে আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভূমিকা জরুরি। সকল দেশকে এই সংকট সমাধানে একসাথে কাজ করা উচিৎ। সকলকে একসঙ্গে জোরালোভাবে এই সংকট নিরসনে আওয়াজ তোলা উচিৎ। কারণ, অবশ্যই এটা একা বাংলাদেশে দায়িত্ব নয়।’
রেহিঙ্গা ইস্যুকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চলের প্রতিটি শক্তিধর দেশকে একই সুরে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো এবং এই সংকট সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ।’
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রসঙ্গে বিগান বলেন, ওয়াশিংটনের সাথে নয়াদিল্লী ও ঢাকার সম্পর্কের ভবিষ্যত অত্যন্ত উজ্জ্বল।- বাসস
এসি