লড়াকু বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থানের উপাখ্যান
ড. আতিউর রহমান
প্রকাশিত : ১০:১৬ এএম, ২২ অক্টোবর ২০২০ বৃহস্পতিবার
চলছে মুজিব বর্ষ। সামনেই বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের বছর। অনেক আশা-উদ্দীপনা নিয়ে শুরু করেছিলাম ২০২০ সাল। হঠাত্ বাধ সাধল কোভিড-১৯। আমাদের উন্নয়নের ধারা ছিল গতিময়। প্রবৃদ্ধির স্বপ্ন ছিল ৮ শতাংশেরও বেশি। আশা ছিল দারিদ্র্যের হার আরো কমবে। কিন্তু বছরের শুরু থেকেই বইতে লাগল করোনা ঝড়। তছনছ করে দিল বিশ্ব অর্থনীতি। বাংলাদেশেও সেই ঝড়ের ঝাপটা যে লাগেনি, তা বলা যাবে না। তবে আমাদের লড়াই করে এগিয়ে যাবার অন্তর্নিহিত শক্তি এবং বলিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই সংকটকালেও বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাকে অনেকটাই গতিময় রাখতে পেরেছে। সর্বশেষ, আইএমএফ তার ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক আউটলুক’-এ জনিয়েছে যে বিশ্ব অর্থনীতি ২০২০ সালে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ সংকুচিত হবে। আমাদের পাশের দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হবে প্রায় ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। সেই তুলনায় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি এ বছর হবে ৪ শতাংশের মতো। এর ফলে চলতি বছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ হবে ১ হাজার ৮৮৮ মার্কিন ডলার। ভারত থেকে তা হবে ১ ডলারের মতো বেশি। এ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে যথেষ্ট হইচই হচ্ছে। আমার মনে হয় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অর্থনৈতিক প্রক্ষেপণ নিয়ে এত মাতামাতি না করাই ভালো। এদের কাছে আমাদের অর্থনীতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই।
আমাদের পরিসংখ্যানও আমাদের অর্থনীতির পুরোটা ভালোভাবে ধরছে, তা কিন্তু আমি দাবি করছি না। এ বছরের প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে নানা ধরনের অনুমান দেখতে পাচ্ছি। আইএমএফ খুবই রক্ষণশীল একটি সংস্থা। তাই বরাবরই তাদের প্রক্ষেপণ থেকে আমরা বাস্তবে ১-২ শতাংশ বেশিই অর্জন করে থাকি। বিশ্ব ব্যাংকের অনুমান আরো গোলমেলে। তাদের মডেলও বিশেষজ্ঞদের মনোভাবের ওপর নির্ভরশীল। তাই তারা বলছে, এ বছর আমাদের প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৬ শতাংশ। গত অর্থবছরের এক কোয়ার্টার (এপ্রিল-জুন) আমাদের দেশে সাধারণ ছুটি আর আংশিক লকডাউন চালু ছিল। ঐ অর্থবছরে তারা বলেছিলেন আমাদের প্রবৃদ্ধি হবে ২ শতাংশ। তার মানে কি কৃষি অক্ষত থাকা, গার্মেন্টস চালু থাকা সত্ত্বেও ঐ তিন মাসেই আমাদের প্রবৃদ্ধির ৮০ শতাংশ হারিয়ে গেল? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? তাই বাস্তবে আমরা যখন ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি করলাম (এশিয়ায় সর্বোচ্চ) তখনো কিন্তু তারা নিশ্চুপ। অন্য দিকে চলতি অর্থবছরে এডিবি বলছে, আমাদের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। গত অর্থবছরেও তাদের প্রক্ষেপণ আমাদের কাছকাছি ছিল। তাই দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রকৃত ধারা সঠিকভাবে আন্দাজই করতে পারছে না। ১ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৮ শতাংশের প্রক্ষেপণের মধ্যে প্রায় ৫ শতাংশের মতো হেরফের। তাই বাইরের সংস্থাগুলো কি বলল বা বলল না, তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে আমাদের নিজস্ব অর্জনের ভিত্তিভূমিকে খুঁজে নেওয়াটাই হবে এই মুহূর্তে বুদ্ধিমানের কাজ।
তবে এ কথাও ঠিক আইএমএফ আমাদের গত পাঁচ বছরের যে কমপাউন্ডেড প্রবৃদ্ধি (৯ দশমিক ১ শতাংশ) দেখিয়েছে সেটি কোনো প্রক্ষেপণ নয়। সেটি আমাদের অর্জন। চলতি মূল্যে হলেও তা আমাদের অর্থনীতির শক্তিমত্তা প্রকাশ করে। উল্লেখ্য, পাঁচ বছর আগে আমরা আমাদের বৃহত্ পড়শি দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির ৬০ শতাংশের মতো অর্জন করেছিলাম। এই কয় বছরে তাদের ধরে ফেলার এই লড়াইটিও কিন্তু ফেলে দেওয়ার নয়। এই সময়ে তাদের কমপাউন্ডেড প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। তফাতটা প্রায় ৬ শতাংশ। তা সত্ত্বেও এটা নিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার দরকার নেই। বরং এই ভেবে আমরা খুশি যে, সারা বিশ্বের প্রায় সব অর্থনীতি যখন সংকুচিত হচ্ছে তখনো আমরা ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির আভাস দিতে পারছি। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি, পুরো এশিয়ায় চতুর্থ এবং সারা বিশ্বে ষষ্ঠতম গতিময় দেশে হওয়ার এই ইঙ্গিত দিচ্ছে সবচেয়ে রক্ষণশীল আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। সেটিই সবচেয়ে বড় কথা।
অঙ্কের মারপ্যাচে না গিয়ে আমাদের নজর দেওয়া উচিত নিরন্তর ছুটে চলা বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তিগুলোর দিকে। আমাদের প্রবৃদ্ধির গল্পটি খুবই কনসিসটেন্ট বা যুক্তিগ্রাহ্য। এই গল্প অন্তর্ভুক্তিমূলক। এই গল্প সবাইকে নিয়ে এগিয়ে চলার। এটি ১০০ মিটার দৌড়ের গল্প নয়। এটি হাতে হাত রেখে ম্যারাথন দৌড়। ভুলে গেলে চলবে না, ১৯৭২ সালে আমাদের অর্থনীতির মোট আকার ছিল মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলার। সঞ্চয় ছিল জিডিপির ৩ শতাংশ। বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ৯ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শূন্য ছিল। দারিদ্র্যের হার ছিল ৮০ শতাংশেরও বেশি। ১ কোটিরও বেশি শরণার্থীর পাশাপাশি দেশের ভেতরে ২০ লাখেরও বেশি ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরবাড়ির পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার চ্যালেঞ্জ ছিল। ছিল প্রতিকূল প্রকৃতি ও বিরূপ আন্তর্জাতিক রাজনীতি। এমন সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই জাতির পিতা এই বলে আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন যে তার বাংলাদেশে মানুষ পেট ভরে খাবে, বেকার কাজ পাবে, সুখী হবে, শিশুরা খেলবে, মায়েরা হাসবে। তাই আজ মনে রাখা চাই যে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির গল্পের পেছনে রয়েছে ৫০ বছরের পুরোনো স্বপ্ন এবং আরো আগের অর্থাত্ ৭৫ বছরের পুরোনো সোনার বাংলার আকাঙ্ক্ষা, যা জাতির পিতা তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখে গেছেন।
এমন সংকটকালেও আমাদের অর্থনীতির যে শক্তিমত্তা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা থেকেই অনুমান করা যায় যে এর একটি শক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভিত্তিভূমি রয়েছে। আর তাই তা বিশ্বের চোখে পড়ছে। বাংলাদেশের ম্যাক্রো-অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিশেষ করে জিডিপির অনুপাতে দেশি-বিদেশি দায় (ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত) এবং জিডিপির তুলনায় বাজারে টাকার সরবরাহ কম থাকায় (বাংলাদেশে ৫৫ শতাংশ, ভারতে ৮৫ শতাংশ), পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ন্ত এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্রিয়তায় এই সংকটকালে খুব দ্রুত লক্ষ-কোটি টাকার ওপরে প্রণোদনা প্রদানের সাহসী উদ্যোগ নিতে পেরেছেন নীতিনির্ধারকরা। আর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে অর্থনীতির গতিময়তায়। আমরা যখন ঐ দিগন্তের দিকে তাকাব তখন নিশ্চয়ই বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে আমাদের সংযোগের কথা মনে রাখব। কিন্তু আমরা আমাদের ভরসা ও সাহসের খোঁজ করব ভেতরে। আমাদের শক্তির উত্স সন্ধান ঘরে-বাইরে দুই দিকেই করতে হবে। বেশি করে তাকাতে হবে নিজের দিকে।
আমাদের এই বিস্ময়কর উত্থানের পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আমাদের কৃষি। গ্রামে বেড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু আজীবন কৃষকের কল্যাণের কথা ভেবেছেন। সুদূর চীনে গিয়েও সে দেশের কৃষির রূপান্তর নিজের চোখে দেখে মনে মনে পরিকল্পনা করেছেন কী করে আমাদের কৃষির সংস্কার করা যায়। তাই তিনি কৃষির আধুনিকায়নে মনোযোগ দিয়েছিলেন। তিনি যে কৃষি খাতকে আধুনিক করতে চেয়েছিলেন, তার কন্যার হাত ধরে আজ তা ব্যাপক মাত্রায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে। কৃষি খাতের উত্পাদনশীলতা বিপুল হারে বেড়েছে। যদিও প্রযুক্তির ব্যবহার আরো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে তবুও আমাদের শিক্ষিত তরুণরা কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। উপর্যুপরি কয়েকটি বন্যা হওয়া সত্ত্বেও আমাদের কৃষি খাত এই সংকটকালে আমাদের অর্থনীতির রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেছে। সরকার করোনা সংকট মোকাবিলার জন্য যে ত্বরিত প্রণোদনা কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল তার সুফল আমরা পেতে শুরু করেছি। প্রচলিত কৃষিঋণের বাইরেও বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার যে পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি চালু করেছে তার ৩৭ শতাংশ এরই মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য এমএফআইয়ের মাধ্যমে ৩ হাজার কোটি টাকার যে পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি চালু করেছে তার ৪৩ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে। এসএমই খাতের ২০ হাজার কোটি টাকার ৩৩ শতাংশ বিতরণ করা গেছে। এর বড় অংশই গ্রামীণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা পেয়েছেন। গ্রামীণ অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের জন্য বাদবাকি প্রণোদনার টাকা দ্রুত কৃষক ও ক্ষুদ্র মাঝারি উদ্যোক্তাদের হাতে পৌঁছে দিতে পারলে গ্রামীণ অর্থনীতি আরো চাঙ্গা হবে।
কৃষির পাশাপাশি রেমিটেন্স আয় দ্রুতই বাড়ছে। গত অর্থবছরে তা বেড়েছিল ১১ শতাংশ। এ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আগের অর্থবছরের ঐ সময় থেকে তা ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। চাকরি হারিয়ে যারা দেশে ফিরে আসছেন, তাদের জন্যও ২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা কর্মসূচি চালু করেছে সরকার। তাদের নয়া উদ্যোক্তা করা হচ্ছে এর মাধ্যমে। নতুন করে প্রশিক্ষণ দিয়ে ফের বিদেশে পাঠানোর চেষ্টাও চলছে। আর রপ্তানি খাতের ভূমিকা তো আমরা সবাই জানি। ঘোর সংকটকালেও সরকার সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন নিশ্চিত করেছে। এখন চালু রপ্তানি শিল্প নতুন করে অর্ডার পাচ্ছে। এই খাতে বিপুলসংখ্যক নারীকর্মী কাজ করে বলে আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পেছনে সামাজিক বিনিয়োগ যথেষ্ট অবদান রাখছে। বিশেষ করে সরকার গত এক দশক ধরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, প্রশিক্ষণ, আইসিটি খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। ক্ষুধা ও জেন্ডার সূচকে বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বখ্যাত। তাছাড়া শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, স্যানিটেশন, বিনা মূল্যে বই বিতরণ, শিশুদের সার্বজনীন টিকা প্রদান, মেয়ে শিশুদের জন্য বিশেষ বৃত্তি, দুঃখী মায়েদের সামাজিক সুরক্ষা, জীবনের গড় আয়ুসহ গ্রামীণ সমাজ ও অর্থনীতির ব্যাপক রূপান্তর ঘটে গেছে এক সময়ের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ নামের অবহেলিত বাংলাদেশে। বিশ্ব এখন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে আমাদের দিকে। তাছাড়া, সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান, সামাজিক উন্নয়নে ব্যক্তি ও এনজিও খাতকে উত্সাহ প্রদান এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ অসাধারণ সক্ষমতা দেখিয়েছে। তবুও সামাজিক শক্তি অর্জনে কিছুটা ঘাটতি রয়েই গেছে। দুর্নীতি দূর করার প্রশ্নে আরো অনেকটা পথ আমাদের হাঁটতে হবে।
এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ তার গরিব-হিতৈষী অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশলে যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখিয়ে চলেছে। এই ধারাকে আরো সমর্থন দিয়ে যেতে পারলে আগামীদিনে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থানের উপাখ্যানটি আমরা আরো জোরালোভাবে বলতে পারব। সেজন্য আমাদের নীতি সমর্থন যেন পিরামিডের নিচের দিকে বেশি করে বজায় থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সবশেষে বলতে চাই :
১. মানুষের ওপর বিনিয়োগ আরো বাড়াতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশিক্ষণ ও সামাজিক সুরক্ষার ওপর বিনিয়োগ ক্রমাগত বাড়িয়ে যেতে হবে। ২. আমাদের কৃষিতে আরো প্রযুক্তি ও অর্থের জোগান বাড়িয়ে তাকে বহুমুখী ও উদ্যোক্তাবান্ধব করে যেতে হবে। ৩. বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের সরবরাহ চেইনকে আরো নিবিড়ভাবে যুক্ত করে কৃষিসহ সব খাতে মূল্য সংযোজন বাড়াতে হবে। ৪. দেশি সরবরাহ চেইনকে আরও আধুনিক ও ডিজিটাল করে আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি আন্তর্জাতিক ভ্যালু-চেইনেও আমাদের সংযুক্তি বাড়াতে হবে। ৫. কোভিড-উত্তর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে সবুজ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার লক্ষ্যে কৃষি, অবকাঠামো এবং মানবপুঁজির দিকে আরো নীতি মনোযোগ দিতে হবে। ৬. এর জন্য টেকসই অর্থায়নের কোনো বিকল্প নেই। তাই টেকসই অর্থায়ন আরো জোরদার এবং গভীর করতে হবে। ৭. সরকারি আয় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে ডিজিটাল রূপান্তর ঘটিয়ে আরো দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক করতে হবে। ৮.প্রয়োজনে বাজেট ঘাটতি আরেকটু বাড়িয়ে নিম্নবিত্ত ও গরিবের জন্য সামাজিক সুরক্ষা আরো বাড়াতে হবে। বিপন্ন মধ্যবিত্তের জন্য আরো কর ও ভ্যাট ছাড়ের কথা ভাবতে হবে (যেমন :ছোট ও মাঝারি বাড়িওয়ালদের জন্য কর ছাড়)। ৯. কৃষক, ঝুঁকিতে থাকা কুটির শিল্পের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সর্বক্ষণ ডিজিটাল মনিটরিং করে যেতে পারে (ন্যাশনাল ডিজিটাল ড্যাশবোড-ভিত্তিক মনিটরিং)। ১০. সর্বোপরি স্বাস্থ্য খাতে বর্ধিত বিনিয়োগ ও নীতি মনোযোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ সঠিক পথেই হাঁটছে। সমাজ, সংস্কৃতি, পরিবেশ এবং অর্থনীতির সমন্বয় করে সব অংশীজনকে সহযোগী করে এগিয়ে যাওয়ার যে সুযোগ কোভিড-উত্তর বিশ্বে আসতে যাচ্ছে, তার সদ্ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অগ্রগামীই থাকবে।
লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর
এমবি//