ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১

রাবি উপাচার্যসহ অন্যান্যদের দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসি

রাবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ০৩:১৪ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২০ বৃহস্পতিবার

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারীর বিরুদ্ধে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ, স্বজনপ্রীতি, টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।

গত মঙ্গলবার ও বুধবার দুইদিনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে ৩৬ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদন এবং আরও প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার সংযোজনী প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ইউজিসির গঠিত তদন্ত কমিটি।

ওই প্রতিবেদনে ইউজিসি উপাচার্যের নিজের এবং তার ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদের সম্পদ, আয়ের উৎস, ব্যাংক হিসাব এবং আয়-ব্যয়ের বিবরণী সরকারের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে অনুসন্ধানের জন্য সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে ইউজিসির তদন্তে অসহযোগিতা করায় অবিলম্বে পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার ও বুধবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ইউজিসি গঠিত তদন্ত দলের আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্য ডক্টর দিল আফরোজ বেগম।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ছাড়াও অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, সহযোগী অধ্যাপক গাজী তৌহিদুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক শিবলী ইসলাম ও সাখাওয়াত হোসেন টুটুলের সম্পদ অনুসন্ধানের জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, উপাচার্যসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ২৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে উপাচার্য এম আবদুস সোবহান দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে ‘উপাচার্যের বাসভবনে’ ওঠার পর থেকে অধ্যাপক হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া ডুপ্লেক্স বাড়িটি কাগজে-কলমে ২০১৭ সালের ২৬ জুন ছেড়ে দিয়েছেন বলে দেখালেও প্রকৃতপক্ষে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে মেরামতের নাম করে তার ব্যক্তিগত আসবাবপত্র ওই বাড়িতে রাখেন। যে কারণে অন্য কোনো অধ্যাপককে ওই বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া যায়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ লাখ ৬১ হাজার ৬০০ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে ওই অর্থ আদায়ের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও অধ্যাপক আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে নিয়োগ প্রার্থীর সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের সত্যতা পাওয়া গেছে।

এছাড়া উপাচার্যও শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করেছেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতিকে (আচার্য) অসত্য তথ্য দিয়েছেন। সেই প্রমাণও পাওয়া গেছে। উপাচার্য শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালা শিথিল করে নিজের মেয়ে এবং জামাতাকে নিয়োগ দিয়েছেন।

প্রতিবেদনে করা সুপারিশে তদন্ত কমিটি বলেছে, উপাচার্যের এ ধরনের কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাশীল পদের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তদন্ত কমিটি নৈতিকতা বিবর্জিত এ ধরনের কর্মকাণ্ড জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে বলেছে। 

কমিটি ৩৪ জন অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রমাণও পেয়েছে। অভিযুক্তরা তাদের থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এ অবস্থায় ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও নতুন নীতিমালা প্রবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে।

এআই//এমবি