নারায়ণগঞ্জে তিন পরিবারের মানববন্ধন
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৮:০৯ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২০ বৃহস্পতিবার
নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি শাহরিয়ার রেজা হিমেলের বিরুদ্ধে এবার তিন পরিবারের লোকজন মানববন্ধন করেছে। ২২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ওই মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ফতুল্লার সস্তাপুর পূর্বপাড়া এলাকার মৃত হাতেম আলীর ছেলে জুলহাস মিয়া, ফতুল্লা ইউনিয়নের সস্তাপুর মধ্যপাড়া এলাকার ভুক্তভোগী মো. নজরুল ইসলাম এবং রিকশা গ্যারেজ মালিক শফি প্রধান, তার স্ত্রী মেহেরুন নেছা ও তিন ছেলে সন্তান।
এর আগেও এ তিন পরিবার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন করে। তাছাড়া ডিসি, এসপিকেও পৃথকভাবে স্মারকলিপি প্রদান করেছিলেন। হয়েছিল কয়েক দফা সংবাদ সম্মেলনও। ফতুল্লা মডেল থানায় একাধিকবার অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। যদিও হিমেল বার বার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন।
কাফনের কাপড় পরে মানববন্ধনে ফতুল্লা ইউনিয়নের সস্তাপুর মধ্যপাড়া এলাকার ভুক্তভোগী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগের সহ সভাপতি শাহরিয়ার রেজা হিমেল, বাবা মো. শাহজালাল, দুই চাচা মজিবর ও জুয়েল, শাহজাহান, আনোয়ার হোসেন, ফারুক আহাম্মদ, মো. হারুন, রুহুল আমিন, খোরশেদ আলম খুশু, আ. রাজ্জাক, মো. গালিব হোসেন, জহিরুল ইসলাম জহু, মো. জাকির, কুদ্দুস মিয়া, মো. রাজু, মো. রানা - এ ১৭ জন মিলে পূর্ব শত্রæতার জের ধরে বিভিন্ন সময় আমার বিভিন্ন ক্ষতি করার পায়তারা করে আসছে। বিবাদীরা আমার সম্পত্তি জোর পূর্বক দখল করে আমার জান মালের ক্ষতি করবে বলে বহুবার হুমকি ধামকি দিয়ে এসেছে। বিবাদী মো. শাহজালালের উষ্কানিতে সকল বিবাদীরা গত ৭ অক্টোবর অনুমান সন্ধায় অনুমান সাড়ে ৬ টায় দেশীয় ধারালো ও আগ্নেয়াস্ত্র সমেত সুসজ্জিত হয়ে আমার বাসায় অনধিকার প্রবেশ করে। আমি তাদের এমন আচরণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরি। এসময় বিবাদী শাহরিয়ার রেজা হিমেল আমার নিকট হতে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে অন্যথায় আমার বাড়ি ছেড়ে দিতে বলে। আমি তাঁদের কথায় দ্বিমত করলে তাঁরা সবাই আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে এলোপাথারী কিল ঘুষি লাথি মারতে মারতে শাহরিয়ার রেজা হিমেল আমার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দেয় যে আমি যদি তাঁদের কথা মেনে না নেই তাহলে আমাকে জীবনের তরে শেষ করে দিবে এবং আমার লাশ নিশ্চিহ্ন করে দিবে। এমতাবস্থায় যে কোনো সময় বিবাদীরা বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আমি আশঙ্কা করছি।
রিকশা গ্যারেজ মালিক শফি প্রধান বলেন, ‘সস্তাপুর এলাকায় আমার গ্যারেজের সামনে রাস্তায় এক চালক রিকশা রেখে গ্যারেজে আসে। এসময় ছাত্রলীগ নেতা হিমেলের চাচা মজিবুর ও তার বাহিনীর লোকজন যেতে সমস্যা হওয়ায় আমার তিনটি সন্তানের সামনে আমাকে এলোপাথারি মারধর করে। এতে আমার ছেলেরা আমাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। তখন মজিবুর তার লোকজন দিয়ে আমার তিন ছেলেকে গলায় ছুরি ধরে রাখে। ওই সময় পার্শ্ববর্তী সজল সহ কয়েকজন এগিয়ে এসে আমাকে তাদের কাছ থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। এতে সজলসহ কয়েকজনকে এলোপাথারী মারধর করে। এক পর্যায়ে সজলের একটি আঙ্গুলে কোপ দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং আরো একজনকে কুপিয়ে তাঁরা চলে যায়। এঘটনায় আমার ছেলে বাদল বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় হিমেলের চাচা মজিবুল ও তাঁদের বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলাটি প্রত্যাহার করে নিতে হিমেল তার চাচা মজিবুর ও জুয়েল নানা ভাবে হুমকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে মজিবুর তার সহযোগি আনোয়ারকে দিয়ে কয়েকজনকে আমার গ্যারেজে পাঠায়। তারা এসেই আবারো মারধর করে হুমকি দিয়ে যায়। মামলা না উঠালে একাধীক মামলা দিয়ে আমাদের এলাকা ছাড়া করবে। বিষয়টি ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলামকে জানাই। এতে হিমেল ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের কর্মচারীকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ এনে ফতুল্লা থানায় আমার ছেলে বাদলসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি মারধরের মামলা করেছেন। তার পরও আমার ছেলে বাদল মামলা প্রত্যাহার করেনি। এরপর বিষয়টি নিয়ে এলাকায় মিমাংসার প্রস্তাব দেয় তারা। আমি বলেছি আমার মিমাংসা প্রয়োজন নেই তারা শুধু দুঃখ প্রকাশ করুক এতেই মামলা তুলে নিবো। কিন্তু তারা দুঃখ প্রকাশ না করে উল্টো এক নারী দিয়ে আমার ছেলে বাদলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছে। আমরা হতদরিদ্র আমার ক্ষমতা নেই এই মামলা চালানোর। আমি তাদের কাছে ক্ষমা চাই আমি বিচার চাই না। আমার ছেলেরা ফেরি করে কাপড় বিক্রি করে সংসার চালায়। আমি পরিবার নিয়ে শান্তিতে থাকতে চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘হিমেলের শেল্টারে তার চাচা মজিবুর ও জুয়েল এলাকায় সাধারন মানুষদের অনেক অত্যাচার করেন। সস্তাপুরে অনেক পরিবারকে বাসা থেকে বের করে দিয়ে ঘরে তালা দিয়েছে। সাইনবোর্ড লাগিয়ে বাড়ি ঘর দখল করেছে। তারা অনেক প্রভাবশালী তাদের সঙ্গে আমাদের কোন তুলনা হয় না। আমরা খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ। তাদের আক্রোশ থেকে রক্ষা পেতেই জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছি।’
যুদ্ধাহত সেই মুক্তিযোদ্ধা ফতুল্লার সস্তাপুর পূর্বপাড়া এলাকার মৃত হাতেম আলীর ছেলে জুলহাস মিয়া বলেন, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। ভাতা পাবো সেইজন্য মুক্তিযুদ্ধে যায়নি তাই সরকার যখন ভাতা দিতে শুরু করেছে তখন আমি আবেদন করিনি। আমি আমার যা কিছু ছিল তাই নিয়ে বাঁচতে চেয়েছি। ২০১৪ সালে আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে জোরপূর্বক আমার ৯ শতাংশ জমি দখল করে নেয়। কিন্তু আদালত থেকে এসব মিথ্যা মামলা খারিজ করে দেয়। এছাড়াও জমি নিয়ে যতগুলো মামলা করেছে সবগুলো আমার পক্ষে রায় দিয়েছেন আদালত। কিন্তু এখন কোন কাগজ ছাড়া জোরপূর্বক আওয়ামীলীগের নাম ব্যবহার করে আনোয়ার হোসেন, জুয়েল, খোরশেদ আলম খুশু, রাজ্জাক, রাজু ওরফে গাজু, জহিরুল আলম জহু সহ অজ্ঞাত আরো ১০ থেকে ১২জন জায়গা দখল করে রেখেছে। আমরা সেই জায়গায় গেলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। এখন আসামিরা নির্মাণাধীন বাড়ি সহ অন্যান্য সম্পত্তি ও ৯ শতাংশ জায়গা লিখে দেওয়ার জন্য পায়তারা করে চলেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় গনমাণ্য ব্যক্তিদের জানানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে মিমাংসা করার জন্য চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। এখন নতুন করে পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি সহ প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে আসমিরা আমার বাসায় এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি সহ প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য বলে। এর প্রতিবাদ কলে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমার পরিবারের লোকজনদের মারধর করতে আসে। পরে আমাদের ডাক চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বলে যায় আমাদের পরিবারের লোকজনদের যেখানে পাবে সেখানে শেষ করে ফেরবে। এরা সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু এবং খারাপ লোক। নিজেদের ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় দিয়ে এলাকায় অপকর্ম করে বেড়ায়। তাদের এ হুমকিতে আমি সহ পরিবারের সবাই আতংকিত ও জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
জুলহাস মিয়া বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী, এমপি, মন্ত্রী, ডিসি, এসপি, ওসি সকলের কাছে আমার ও আমার পরিবারের জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমার জমি ফিরিয়ে দিতে ব্যবস্থা করবেন এটাই আবেদন করছি।
আরকে//