ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

ত্রিশাল ওসির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের অভিযোগ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:১০ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০২০ বৃহস্পতিবার

বাকিতে ওষুধ না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে থানায় ডেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও শারীরিক নির্যাতনের জন্য ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘আইজিপি'স কমপ্লেইন সেলে’ অভিযোগ করেছেন এক ভুক্তভোগী। 

গত মঙ্গলবার আব্দুল কাদের মীর নামে ওই ব্যক্তি পুলিশ সদরদপ্তরে এই অভিযোগ করেন। 

অভিযোগপত্রের সঙ্গে সাড়ে পাঁচ মিনিটের একটি অডিও রেকর্ড দেয়া হয়েছে। যেখানে ওসি মাহমুদ ওই ব্যবসায়ী ও তার ছেলেদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন এমন কথোপকথন রয়েছে।

ভুক্তভোগী তার অভিযোগে বলেছেন, তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশাল বাজারের আবুল চেয়ারম্যান মার্কেটে ওষুধের ব্যবসা করেন। যা ফরহাদ মেডিসিন কর্নার নামে পরিচিত। এক মাস আগে মাস্ক পরিহিত জনৈক ব্যক্তি তার দোকান থেকে ১৮শ টাকার ওষুধ নেন। কিন্তু তিনি দাম পরিশোধ না করে বলেন- এটা ত্রিশাল থানার ওসি মাহমুদুল ইসলামের ওষুধ; ফ্রিতেই দিতে হবে। এ সময় টাকা ছাড়া ওষুধ দেওয়া যাবে না বলে সেগুলো রেখে দেন তিনি। সে সময় ওই ব্যক্তি দোকানের সবাইকে হুমকি দিয়ে চলে যান। সবশেষ ২২ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে ত্রিশাল থানার ওসি মাহমুদুলের দেহরক্ষী আব্দুল লতিফ দোকান মালিকের ছেলে ফরহাদ হোসেনকে ফোন করেন। এ সময় তাদেরকে ওসির সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়। কথোপকথোনের এক পর্যায়ে ফরহাদ ওসির দেহরক্ষীকে বলেন তার ভাইও পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর। পরবর্তী সময়ে তারা রাতেই ত্রিশাল থানায় যান। এ সময় ওসির দেহরক্ষী তাদের ওসির বাসভবনের সামনে নিয়ে যান। তাদের দেখে ওসি অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। যার অডিও রেকর্ডও সংরক্ষিত আছে।

অভিযোগে ভুক্তভোগী আরও বলেন, ওসি মাহমুদুলের দেহরক্ষী লতিফ ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেনকে মারধর করেন। এতে তিনি বেশ আহত হন। এ সময় তার বাবা আব্দুল কাদেরকেও মারধর করা হয়। আহত অবস্থায় তাদেরকে সারারাত থানাতে আটকে রাখা হয়। নির্যাতনের ঘটনার সময় ওসি তাদেরকে নানাভাবে হুমকিও দেন। বলেন- ‘তোদের ব্যবসা ধ্বংস করে দিবো।’ ‘মিথ্যা মামলায় জেলহাজতে রাখবো।’ এ সময় আমি বলেছি, আমার ছেলে ও জামাই পুলিশে কর্মরত। এর উত্তরে ওসি মাহমুদুল বলেন- ‘তোর এসআইয়ের গুষ্ঠী কিলাই।’ রাতে পরিবারের সদস্যরা খাবার দিতে গেলেও তা দেয়া হয়নি।

ঘটনার পরদিন সকালে থানার ডিউটি অফিসার সাব ইন্সপেক্টর (এসআই) রফিক ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেনকে ছাড়তে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে মিথ্যা মামলায় জেলহাজতে পাঠাবেন বলে হুমকি দেয়া হয়।

অভিযোগপত্রে ব্যবসায়ী আরও বলেন, এক পর্যায়ে ফরহাদের বড় ভাই এসআই শিবলী কায়েস মীরের প্রচেষ্টায় সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ত্রিশাল থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ব্যবসায়ীর দোকান থেকে কেনা ওষুধ খেয়ে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আমাকে যে ওষুধ দেবার কথা ছিল, সেটা না দিয়ে অন্য ওষুধ দিয়েছিল। তাই রাতে তাদেরকে থানায় ডাকা হয়েছিল। বলেছিলাম, আমি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তারা থানাতেই থাকবে। পরে সকালে নিজে সুস্থবোধ করায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’

মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমনটা আমি জানি না। কারণ আমি অসুস্থ হয়ে বাসাতেই ছিলাম।’

ওই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে কেন নির্যাতন করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি মারা গেলে কি আপনি এই প্রশ্ন করতে পারতেন। ওই দোকানের ওষুধ খেয়ে আমি অসুস্থ হয়েছি। তাই...।’

পুলিশ সদরদপ্তর বলছে, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রমাণ হলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মীর সোহেল রানা বলেন, ‘একজন ব্যবসায়ী ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। যেই দোষী হোক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এমবি//