ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

রকিবুল হাসানের দুটি কবিতা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১৩ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০২০ শুক্রবার

আমি তেমন কেউ নই

আমি তো বলেছি-আমি তেমন কেউ নই-
আমার জন্য তোমাদের অনেক দুঃখ থাকবে
ভালোবাসা থাকবে-অপেক্ষা থাকবে-বুনোফুলের ঘ্রাণ থাকবে
বুকের ভেতর বীদির্ণ ব্যথা থাকবে-এসব থাকতে নেই।

আমি কারো মাথায় কখনো রাখিনি নির্ভরতার হাত
কাউকে কখনো বুকে করে হাঁটিনি স্বপ্নসৌধ ধরবো বলে
রাত নিভে গেলেও পারিনি দিতে 
ক্ষুধার আগুনপোড়া মুখে
শাকসবজিমাখা সাধাসিধে আউস ধানের একমুঠো ভাত।

আমি তো প্রাডো গাড়িতে এ নগরে আসিনি-
চাকচিক্য পোশাক পরেও আসিনি-
অপেক্ষায় ছিল না কোন প্রাসাদ
ছেঁড়া জুতো প্যান্ট পরে এসেছি শূন্য চোখে ফোসকা পায়ে 
একটা মানুষও থাকেনি আমার জন্য চোখ পেতে।

কোন হিসাব করিনি কোনদিন-হিসাবের কড়ি নিয়ে
হিসাব শিখিনি-শুধু চেয়েছি অভাবের অংক মুছে যাক
জীবন থেকে-অনাহারের গন্ধ যেন না থাকে মুখে
কিছুই পারিনি-পারার মতো আমি তেমন কেউ নই।

আমি তো বলেছি- আমি তেমন কেউ নই
আমার প্রাণহীন নিথর শরীরের জন্য 
ক্ষণিক মুহূর্তের জন্য মঞ্চ বানানোর কোনো প্রয়োজন নেই
অনর্থক শব্দ সাজানো ছাড়া আমি আর কিছুই পারিনি।

আমি কারো জন্য কিছুই করিনি
একমুঠো ভাতের জন্য আমি এ শহরে এসেছি-
অবজ্ঞাকে ভালোবাসা ভেবে আজো ধুলোবালি শরীরে পথ হাঁটি
আমাকে কেন ভালোবাসতে হবে-আমি তো কিছুই করিনি।

আমি তো বলেছি- আমি তেমন কেউ নই
যদি চলে যাই মৃত্যুবন্যায়-
লোকদেখানো বেদনায় বুক ভেঙো না
নিথর শরীর যদি বেশি ভারি হয়ে যায় কষ্ট নিয়ো না কখনো
আমার সন্তান নিয়ে যাবে জবাফুল পরীর বাড়িতে...


বুলবুলবেদনাকাব্য 

বুলবুল, একত্রিশে মে পাঁচটা সাত মিনিটে তোর ফোন এলো
কী সুন্দর মুগ্ধতা মেখে বললি, মেজো ভাই, কেমন আছেন?
কাব্যর রেজাল্ট নিয়ে তোর আলোভরা মুখটা কণ্ঠে
ছবি হয়ে ভেসে উঠেছিল আমি দেখতে পাচ্ছিলাম;
মামণির কথাও জিজ্ঞেস করলি
বললি, মামণিকে একটু পরে ফোন দেবো।

সেই একটু পর আর কোনোদিন এলো না
কোন পথে কোথায় সূর্য অস্ত যাবার মতো হারিয়ে গেলো
কোনোদিনই আর তোর ফোন 
বেজে উঠলো না বেজে উঠবে না কস্মিনকালেও না।

আমি তখন একটুও বুঝতে পারিনি
          বুঝতে পারিনি 
                       বুঝতে পারিনি 
আমি একটুও বুঝতে পারিনি
নদীর মতো তুই চলে যাচ্ছিস কি এক ভীষণ অভিমানে
আর কখনো ফিরবি না ফেরা হবে না কখনো আর।

ভাই আমার, একত্রিশে মে পাঁচটা সাতে ক্লান্ত বিকেলে 
তোর সাথে আমার এ কথাই শেষ কথা!
তোর সাথে আমার এ কথাই জনমের শেষ কথা! 
আর কোনোদিন তোর কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হবে না
 ‘মেজো ভাই, কেমন আছেন?’

একটুও বুঝিনি চিরতরে হারিয়ে গেছে আমার এমন মধুর ডাক
দূরের মরমি পাখি আকাশ ভেঙে কতো দূরে যায়!
ডানার ছায়ায় রেখে যায় কোন অপার ঠিকানা!
বুকভাঙা বেদনায় আকাশ আছড়ে পড়ে তোর নিথর শরীরে...

এ কেমন অন্ধকারে তোকে খুঁজি পাঁজরভাঙা ঝড়-ঝাপটা আর্তনাদ 
আমিও তো ডুবে গেছি অতল অন্ধকারে নিজেও পাই না নিজেরে
বুকের গহিনে বিক্ষুব্ধ ঢেউ গুমোট কান্না ভয়াবহ বিদ্যুৎ চমকায়;
কবে এসে হাসিমুখে দাঁড়াবি খরায় পোড়া দুচোখে আমার!
 একবার বলে দে ভাই আমার, কবে আসবি! 
     কবে আসবি! 
   আসবি তো ভাইটি আমার! 
গভীর আঁধারে শোকার্ত সন্ন্যাস দাঁড়ানো দহন বুকে...
 
তুই কী জানতি একত্রিশে মে পাঁচটা সাত মিনিটে বেদনাবিবর্ণ 
বিকেলের ভাঙাবেলায় জীবনভাঙার কষ্ট বুকে বেঁধে 
হায়রে ভাই আমার আমাকে বলে যাচ্ছিস জীবনের শেষ কথা!
তুই কি জানতি তুই চলে যাচ্ছিস অতল অন্ধকারে
দূরের আকাশে নক্ষত্রে নক্ষত্রে অচেনা আলোর পাখি হয়ে!!

পথের দিকে চোখ পেতে থাকি তোর আসার ক্ষণ গুণে!
বাতাসে বুক পেতে থাকি তোর গায়ের গন্ধ পাবো বলে!
নদীর স্রোতে কান পেতে থাকি তোর কণ্ঠধ্বণি শুনবো বলে!
মোবাইলে তোর নম্বরটা চোখের জলে অন্ধ চোখে দেখি
জীবনকষ্ট জড়ানো তোর গায়ের শার্ট কতোবার জড়িয়ে ধরি বুকে
অবাধ্য বৃষ্টির মতো কান্নায় তোর বুকের সবটুকু কষ্ট নেবো বলে।

কোনো পথেই তোর পায়ের শব্দ আসে না
নদীর স্রোতে থাকে না চিরচেনা তোর মুগ্ধ কণ্ঠধ্বণি
বাতাসে থাকে না তোর গায়ের মৌতাত গন্ধ
শুধু বুকভাঙা কান্না ভেসে আসে
আর্তনাদের শব্দ ভেসে আসে
তোর শার্টে চোখের পানিতে ছোপ ছোপ কষ্টের রঙ শুধু...

একত্রিশ মে পাঁচটা সাত মিনিট
তোর শেষ কণ্ঠধ্বণি আমার নিশ্বাসে দীর্ঘশ্বাসের অসহায় কান্না
বিক্ষুব্ধ ঢেউয়ের মতো বুকের ’পর আছড়ে পড়ে গহিন রাত্রি
আমি ঘুমোতে পারি না দু’হাঁটুর ভেতর মুখ গুঁজে বসে থাকি।

আমি বুঝতে পারিনি বুলবুল
কিছুতেই বুঝতে পারিনি
একত্রিশে মে পাঁচটা সাত মিনিটে
তোর সাথে আমার এ জন্মের মতো শেষ কথা হয়ে গেছে।
   শেষ কথা হয়ে গেছে
   সব শেষ হয়ে গেছে
সেই থেকে আমিও অন্ধকারে ডুবে গেছি 
 অন্ধকারে ডুবে আছি...