ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

অর্জিত স্বাধীনতা মুছে ফেলার অপচেষ্টা ছিল জেলহত্যা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:৩২ পিএম, ৩ নভেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার

ইতিহাসের কলঙ্কজনক জেলহত্যা দিবস আজ। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতিরূপ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে জেলখানায় হত্যা করে ঘাতকচক্র। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আদর্শের শেষ চিহ্ন মুছে ফেলার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত স্বাধীনতার দাফনের অপচেষ্টা হয়েছিলো।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান পাল্টা অভ্যুত্থানে তখনও অস্থির নগরীর ফিসফিসানির গুঞ্জনে ছুঁয়ে যাচ্ছিলো গারদের শিক। কারা কর্তৃপক্ষের হাতে রাষ্ট্রপতির আদেশের চিঠি। নির্দেশ ছিলো তৎকালীন আওয়ামী লীগের চার নেতাকে এক সেলে একত্রিত করার। 

১৫ আগস্টের অসমাপ্ত অধ্যায় শেষ করতে একসেলে হাজির করা হলো- দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে। কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে ঘাতকের বুলেটে অস্তমিত হলো বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা আর গণতন্ত্রের স্বপ্নের শেষ আলোটুকু।

বুলেটের আওয়াজই নিশ্চিত করেছিলো, দেশ ফিরে যাচ্ছে পাকিস্তানি ভাবধারায়।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, প্রথমবার ব্রাশফায়ার করে যাওয়ার পর মনসুর সাহেবের পা এবং হাতে লেগেছিল, উনি পরে গিয়ে কুঁকড়াচ্ছিলেন। সেই শব্দ পেয়ে ওরা আবার ফিরে আসে। দ্বিতীয়বার সবার উপর ব্রাশফায়ার চালায় এবং ব্যানট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

কারাগারে জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ড ছিলো ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডেররই ধারাবাহিকতা। হত্যার আগে সমঝোতার গুজব ছড়ানো হয়েছিলো। যা হত্যাকারীদের ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ।

বর্ষিয়ান নেতা আমির হোসেন আমু বলেন, ৩রা নভেম্বরের এই ঘটনার কয়েকদিন আগ থেকেই জেলখানায় প্রচার করা হচ্ছিল যে একটা সমঝোতা হতে পারে, নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একটি আলোচনা হতে পারে। এই ধরনের একটি গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

বাবারা মরে গেলে আকাশের তারা হয়ে যায়। আর ফিরবে না জেনেও যন্ত্রণা ভুলতে এমনই ভাবতেন জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা।

সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি বলেন, যদিও তখন বয়সটা বোঝার বয়স ছিল যে, বাবারা কখনও তারা হয় না। কিন্তু অনেক সময় ওই মিথ্যাটাকে আঁকড়ে ধরে চারিদিকের বৈরিতা থেকে বাঁচার চেষ্টা করতাম।

হত্যাকারীদের বিচার দীর্ঘ অপেক্ষার পরও দেখে যেতে পারেননি স্বজনরা। কারা ছিলো ঘৃণ্য সে ঘটনার নেপথ্যে? জাতির সামনে এই প্রশ্নের অন্তত সমাধান চান তারা।

সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি আরও বলেন, এই প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই গেলো যে কারা এর নেপথ্যে ছিল। দেশের ভেতর, দেশের বাইরে কাদের স্বার্থের জন্য এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। এটা এখন কিন্তু সময়ের দাবি। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের চিহ্ন হিসেবে অম্লাণ থাকবে জাতীয় চার নেতার আত্মত্যাগ।

এএইচ/এমবি