জমির দখল পেলেও বেদখলের ভয় কাটছে না ভিক্ষুকের
জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০২:৪১ পিএম, ৪ নভেম্বর ২০২০ বুধবার
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বাঘাপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ মোখলেছার রহমান ৬৭ বছর পর বেদখলে থাকা পৈত্রিক সাড়ে ১২ শতক জমির দখল পেয়েছেন। তারপরও শঙ্কায় দিন কাটছে তার। প্রতিপক্ষরা প্রভাবশালী হওয়ায় ফের জমি দখল নিতে মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করছে বলে জানান তিনি।
মোখলেছারের অভিযোগ, ভুয়া দলিলে ওই জমি ১৯৫৩ সাল থেকে দখলে রাখে প্রভাবশালী প্রতিবেশী মৃত আজিমুদ্দিন এবং বর্তমানে তার নাতি মোকারম হোসেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ১৯৮৫ সালে কয়েকবার দখলে নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু অসহায়ত্বের কারণে সেই থেকে বেদখলে থাকলেও ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় তিনি অক্টোবর মাসে তার জমির দখল পেয়েছেন। ৬৭ বছর পর পৈত্রিক জমি ফিরে পেলেও প্রভাবশালী প্রতিপক্ষের হুমকির কারণে ভয় কাটছে না বেদখলের।
জানা গেছে, দলিল ও অন্যান্য কাগজপত্র মূলে বাঘাপাড়া মৌজার ১৫০০ দাগের সাড়ে ১২ শতক জমির প্রকৃত মালিক প্রয়াত মনছের আলী। তার মৃত্যুর পর বর্তমান মালিক ছেলে মোখলেছার রহমান। কিন্তু ১৯৫৩ সালে মনছের আলীর কাছ থেকে লিজ নিয়ে জমিটি দখলে নেন ওই গ্রামের আজিমুদ্দিন মোল্লা। যিনি প্রয়াত হলে ওয়ারিশসূত্রে এর মালিক হিসেবে বর্তমানে ভোগদখল করছেন নাতি মোকারম হোসেন।
মোকারম হোসেনদের পরিবার গ্রামে অত্যন্ত প্রভাবশালী। আর মনছের আলী দরিদ্র হওয়ায় টাকার অভাবে লিজ দেওয়া জমি ফেরত না নিয়ে মারা যান। পরবর্তীতে মনছের আলীর কাছ থেকে ওই জমি দলিল করে নেয়ার দাবি তুলে তার নাতি মোকারম ভোগদখল করেন। অথচ তাদের দলিলে জমির দাগ নম্বর ১৫৮০ হলেও দরিদ্র মোখলেছারের শেষ সম্বল ১৫০০ দাগের সাড়ে ১২ শতক জমি তারা জোরপূর্বক দখলে রেখেছেন। আর সেই থেকে জমি হারিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে অন্যত্র জীবন কাটছে মোখলেছারের।
এ অবস্থায় মোখলেছ ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা নিরেন্দ্রনাথ মন্ডলের কাছে গিয়ে জমি ফেরত পাওয়ার আকুতি জানিয়ে কান্নাকাটি করেন। পরে তিন মাস যাবত ওই জমির দলিলসহ যাবতীয় কাগজপত্র তদন্ত করে নিশ্চিত হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের সহযোগিতা নিয়ে গত ৬ অক্টোবর ওসি নিরেন্দ্রনাথ ৬৭ বছর পর মোখলেছারকে তার জমির দখল ফিরে দেন। জমির দখল পেয়ে মোখলেছারসহ পুরো গ্রামের মানুষ ভীষণ খুশি।
পরদিন প্রতিপক্ষ মোকারম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মোখলেছসহ তার পক্ষ নেওয়া কয়েকজন গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তিনি ওই জমিতে ১৪৪ ধারা বলবতের আবেদন ছাড়াও মোখলেছারকে জমির দখল ছাড়ার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন।
তবে হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করে মোকারম হোসেন বলেন,‘তার দাদা ওই জমির ক্রয়সূত্রে মালিক ছিলেন। দাদার মৃত্যুর পর ওয়ারিশসূত্রে তিনি সেই থেকে ওই জমি ভোগদখল করছেন। তাদের কাছে দলিলসহ জমির যাবতীয় কাগজপত্র আছে। বরং ৬৭ বছর ধরে দখল করা জমি অন্যায়ভাবে তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এজন্য তিনি আদালতে মামলা করেছেন।’
বৃদ্ধ মোখলেছার বলেন,‘ভুয়া দলিল সৃষ্টি করে এতদিন তারা জোর করে আমার জমি ভোগদখল করেছে। তাদের কোন কাগজপত্র নাই। জমির জন্য অনেক ঘুরেছি কিন্তু কেউ সহযোগিতা করেনি। শেষে ওসি স্যার এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের দয়ায় আমি আমার নায্য জমি ফেরত পেয়েছি। এরপরও তারা প্রতিনিয়ত হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে আমার সম্পর্কে মিথ্যা অভিযোগ করছে। ওরা প্রভাবশালী আর আমি নিঃস্ব।’
জানতে চাইলে ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিরেন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন,‘বৃদ্ধ মোখলেছার একজন ভিক্ষুক। তার সহায় সম্বল বলতে কিছুই নেই। জমির লিগ্যাল কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও প্রভাবশালী প্রতিপক্ষরা গায়ের জোরে ৬৭ বছর ধরে দখলে রেখেছে। মানবিক কারণে বৃদ্ধের জমি উদ্ধারে সহযোগিতা করা হয়েছে।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাকিম মন্ডল বলেন, ‘মোখলেছার একজন ভিক্ষুক। সারাদিন সে ভিক্ষা করে সংসার চালায়। তার অসহায়ত্ব দেখে পাশে থেকে শুধু ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছি। ওই জমির কাগজপত্র নির্ভুল। প্রতিপক্ষরা ওর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে জমিটি ১৯৫৩ সাল থেকে জবরদখল করে রেখেছিল।’
এআই/এমবি