ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

মৃত যুবক জীবিত ফিরে আসায় ৬ জনকে অব্যাহতি

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৬:২৩ পিএম, ৫ নভেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার

যুবক মামুন ও অব্যাহতি পাওয়া ৬ জন

যুবক মামুন ও অব্যাহতি পাওয়া ৬ জন

নারায়ণগঞ্জে যুবক মামুন অপহরণ মামলা ও জীবিত ফিরে আসার ঘটনায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগকারী নারীসহ ৬ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দি ও মামলার তদন্তকারী পুলিশ ও সিআইডির ২ কর্মকর্তার তদন্তের বিষয়ে পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে নির্দেশ দিবেন আদালত। 

বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা ফেরদৌস-এর আদালত এই আদেশ দেন। এসময় মামুন ও ভুক্তভোগী ৬ জনসহ পুলিশ ও সিআইডি’র ৩ কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। 

এদিকে, মামলার তদন্ত প্রতিবেদন অনুমোদনকারী সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ হারুন অর রশীদকে এই মামলার তদন্ত থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। মামলার অন্য দুই তদন্ত কর্মকর্তা হলেন- ফতুল্লা থানার এস আই মিজানুর রহমান, সিআইডি’র উপপরির্দশক জিয়াউদ্দিন উজ্জল। 

জানা যায়, মো. মামুন ২০১৪ সালে নিখোঁজ হন। ২০১৬ সালের ৯ মে ছেলেকে অপহরণের অভিযোগ এনে ফতুল্লা থানায় মামলা করেন তার বাবা আবুল কালাম। এতে আসামি করা হয়- তাসলিমা আক্তার, তার বাবা রহমত উল্লাহ, ভাই রফিক মিয়া, খালাতো ভাই মো. সাগর, সোহেল মিয়া ও ছাত্তার মোল্লাকে।

প্রথমে তদন্ত করে এই ছয় জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে আদালতে রিমান্ড প্রতিবেদন দেন ফতুল্লা থানার এসআই মিজানুর রহমান। এতে তিনি এক চাক্ষুষ সাক্ষীর জবানবন্দিও জমা দেন। এতে দাবি করা হয়- ওই নারী নিজে দেখেছেন যে, আসামিরা মামুনকে খুন করে শীতলক্ষ্যায় মরদেহ ভাসিয়ে দিয়েছে। 

পরে মামলাটি তদন্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি। তারা মরদেহ খুঁজে না পাওয়ার কথা জানান আদালতকে। এরপর মামলাটি তদন্ত করে সিআইডি। ২৩ মাস তদন্ত শেষে তারাও আদালতে অপহরণের প্রমাণ হাজির করে প্রতিবেদন দেয়। এরপর শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। গত ৩০ সেপ্টেম্বর শুনানি চলাকালে মামুন নিজেই  হাজির হন বিচারকের সামনে। এ ঘটনায় সৃষ্টি হয় চাঞ্চল্য। 

ভুক্তভোগীদের পক্ষের আইনজীবী জানান, অপহরণের মামলার তদন্তে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। নিখোঁজ যুবক আদালতে হাজির হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আদালত নারীসহ ৬ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। একইসঙ্গে ভুয়া অপহরণ মামলার বাদী ও জবানবন্দি দেয়া ভুয়া সাক্ষীসহ পুলিশ ও সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছি। 

দেড় বছর কারাভোগকারী নারী পোশাক শ্রমিক তাসলিমা আক্তারসহ তার পরিবার জানান, ৬ বছর ধরে হয়রানি করেছে আমার পরিবারকে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর রিমান্ডে নিয়ে আত্যাচার করেছে পুলিশ। মামুনকে খুন না করে, অপহরণ না করেও মিথ্যা মামলায় সাজা খেটেছি। যারা এই মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করেছে তাদের শাস্তি চাই।

মামুনের বাবা জানান, ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকার তাসলিমার সঙ্গে তাঁর ছেলে মামুনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ওই সর্ম্পকের জের ধরে ২০১৪ সালের ১০ মে মুঠোফোনে ছেলে মামুনকে ডেকে নেওয়ার পর থেকে সে নিখোঁজ থাকে। ওই ঘটনার দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৯ মে তাঁর ছেলে মামুনকে অপহরণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে গুম করা হয়েছে অভিযোগ এনে ফতুল্লা থানায় মামলা করেন তিনি। 

ওই মামলায় আসামি করা হয় গার্মেন্টসকর্মী তাসলিমা, তাঁর বাবা রহমত উল্লাহ, ভাই রফিক, খালাতো ভাই সাগর, সোহেল ও ছাত্তার মোল্লাকে। পুলিশ ওই মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তির জন্য পাঠালেও আসামিরা কেউ জবানবন্দী দেননি। পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন মামলার স্বাক্ষী ও আসামি ছাত্তার মোল্লার স্ত্রী মাকসুদা বেগম। 

সেই জবানবন্দিতে বলা হয়েছে- আসামিরা মামুনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশ ফেলে দিয়েছে। পুলিশের তদন্তেও তাই জানা গেছে বলে জানান ওই সময় মামলার তদন্তকারী এসআই মিজানুর রহমান। পরবর্তীতে মামলাটি ডিবি পুলিশ তদন্ত করে। কিন্তু মামুনের সন্ধান না পাওয়ায় ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারী মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।

সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা ২৩ মাস পর ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর আদালতে অপহরণ উল্লেখ করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর গুম হওয়া মামুন (২৬) নারায়ণগঞ্জে আদালতে এসে হাজির হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

এনএস/