ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বক্তাগণ

‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কারিগর’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:১৯ পিএম, ৯ নভেম্বর ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০৬:৪১ পিএম, ৯ নভেম্বর ২০২০ সোমবার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে তাঁর অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ দর্শনকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক ‘আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার’। ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ ও ‘ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল এ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ’র যৌথ উদ্যোগে ৮ নভেম্বর, রোববার (ভারতীয় সময় বিকেল ৬টায় ও বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৬টায়) এটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন দুই বাংলার অতিথিরা। 

অনলাইন জুম লাইভে অতিথি হিসেবে বাংলাদেশীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- লন্ডন প্রবাসী বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী, রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড: আতিউর রহমান।

অন্যদিকে ভারতীয়দের মধ্যে- পশ্চিমবঙ্গের বিধায়ক ও সাবেক মন্ত্রী ডাঃ রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর সাবেক উপ-মহানিরীক্ষক সমীর কুমার মিত্র, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।

পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন- সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুরুতেই এতে বক্তব্য রাখেন- লন্ডন প্রবাসী বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক দর্শন’ এ কথাটা আমার দৃষ্টিতে অনেক বড় একটি বিষয়। এখানে আলোচনা হতে পারতো- ‘বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি’। কারণ, দর্শনের কথা বলতে গেলে- অল্প সময়ে এ আলোচনা শেষ করা যাবে না। অনেকেরই ধারণা, ভারতে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা হয়েছে বহু আগে থেকে, কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা হয়নি। সম্রাট অশোক থেকে আকবর, আকবর থেকে দারাশিকো, দারাশিকো থেকে মহাত্মা গান্ধী, মহাত্মা গান্ধী থেকে শেখ মুজিবুর রহমান। এইযে ভারতবর্ষের ধর্মনিরপেক্ষ তথাকথিত রাজনীতির ইতিহাস, আমি বলবো- এটা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি নয়, এটি ছিল ধর্ম সমন্বয়ের আন্দোলন। অশোক ধর্ম সমন্বয়ের চেষ্টা করেছেন, আকবর দীন-ই-ইলাহি প্রবর্তন করেছেন, গান্ধীজি হিন্দু-মুসলমানের মিলন চেয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তার রাজনীতিকে ধর্ম সমন্বয়ের পথেই নিয়ে গেছেন এবং একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কারিগর। তার রাজনৈতিক চরিত্র বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাবো- সব সময়ই একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির দিকে তার টান ছিল।’

পশ্চিমবঙ্গের বিধায়ক ও সাবেক মন্ত্রী ডাঃ রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি বিস্মিত এই জন্য যে- আমি একটি দেশের জনককে দেখেছি। তার যে তেজস্বিতা, দেশের প্রতি ভালোবাসা, তার যে মানুষের প্রতি ভালোবাসা সেটা আমি আমার পরিণত বয়সেই দেখেছি। বঙ্গবন্ধু ডাক দিয়েছিলেন ‘ভায়েরা আমার’। এই ডাকের মধ্যে কোনও হিন্দু-মুসলমানের কথা ছিল না। কোনও সাম্প্রদায়িক চেতনা সেখানে কাজ করেনি। তিনি মুক্ত মনের মানুষ ছিলেন। তিনি মানুষের কল্যাণ চেয়েছিলেন। তিনি দেশকে চেয়েছিলেন তাই দেশের নায়ক হয়েছিলেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড: আতিউর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সব সময়ই ছিলেন মানবিক। সকল ধর্মের প্রতি তার ছিল শ্রদ্ধাবোধ। তিনিও ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। বঙ্গবন্ধু ব্যক্তি জীবনে নিয়মিত ধর্ম চর্চা করতেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন, রোজা রাখতেন। তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বলেছিলেন- ‘আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান।’ বঙ্গবন্ধু বাঙালি হিসেবে যেমন গর্ববোধ করতেন, তেমনটি গর্ববোধ করতেন একজন মুসলমান হিসেবেও। তবে ইসলামের অপপ্রয়োগে তিনি মোটেও বিশ্বাসী ছিলেন না।’

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করতেন। তিনি এমনই একজন নেতা ছিলেন, যিনি বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন। তিনি জনগণের নেতা। তাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ করেছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম ইসলামি প্রজাতন্ত্র হবে। কিন্তু না, তা হলো না। তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন। তাই জনগণকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এখানে কোনও একক ধর্মের মানুষ নয়, সবাইকে ভালোবেসেছেন। ভাষার মধ্য দিয়ে যে একটি জাতীয়তাবোধ আনা যায়, তা তিনিই দেখিয়েছিলেন।’

সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর সাবেক উপ-মহানিরীক্ষক সমীর কুমার মিত্র বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ছিল সংগ্রামের, সংঘাতের। কোনও সাধারণ মানুষ যদি তার জায়গায় থাকতো তবে সে অনেক আগে থেকেই আত্মসমর্পণ করে বলতো- ‘না আর পারবো না’। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অন্য ধাতের মানুষ। তিনি যেভাবে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, সেটা মনে হয় সারা পৃথিবীতে অন্য কারও ইতিহাসে নেই। তিনি বেঁচে থাকবেন তার আদর্শের মধ্যে।’

রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, ‘আমার উপলব্ধি বলে - বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘জন্মগতভাবেই রাজনীতিবিদ’ ছিলেন। রাজনৈতিক ঘটনাবহুল জীবনই ছিল তার একমাত্র জীবনী। এই জীবনের বাইরে তার আর কোনও জীবন ছিল না। তিনি বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেই যাত্রা শুরু করেছিলেন। তিনি সংবিধানে ধর্ম নিরোপেক্ষতাকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন- ‘ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা যাবে না।’’

এছাড়াও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা, ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশের রাজনীতি এবং অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মরিপেক্ষতা রক্ষায় বাংলাদেশ ও ভারত কোন পথে এগোচ্ছে- এসব বিষয়ে আলোকপাত করেন আলোচকরা। 

সবশেষে ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ-এর পক্ষে অরিন্দম মুখার্জী ও 'সম্প্রীতি বাংলাদেশ'-এর পক্ষে অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

এসএ/এনএস/