ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

আর্মেনিয়ার সময় ফুরিয়ে আসছে: আজারবাইজান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:২৭ পিএম, ৯ নভেম্বর ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০৭:৩৪ পিএম, ৯ নভেম্বর ২০২০ সোমবার

শুষা শহরে বিধ্বস্ত একটি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ধ্বসংস্তুপের দিকে তাকিয়ে আছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি

শুষা শহরে বিধ্বস্ত একটি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ধ্বসংস্তুপের দিকে তাকিয়ে আছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহ্যাম আলিয়েফ বলেছেন, তার বাহিনী নাগর্নো-কারাবাখের যুদ্ধে জয়ী হতে চলেছে। তিনি বলেন, "এই যুদ্ধে আপসের সুযোগও ক্রমশ কমে আসছে।"

প্রায় দেড় মাস আগে বিরোধপূর্ণ এই অঞ্চলটি নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুটো দেশের মধ্যে এর আগেও সংঘর্ষ হয়েছে। সমঝোতার মাধ্যমে ছয় বছর ধরে চলা যুদ্ধ ১৯৯৪ সালে থেমে গেলেও তাদের মধ্যে কখনও শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি। খবর বিবিসির

আন্তর্জাতিকভাবে এই এলাকাটি আজারবাইজানের অংশ বলে স্বীকৃত হলেও, আর্মেনিয়ার সরকারের সমর্থনে জাতিগত আর্মেনীয়রা এটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকল পাশিনিয়ানের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার কোন সম্ভাবনা তিনি দেখতে পাচ্ছেন না।

এই সাক্ষাৎকারের পরেই তিনি ঘোষণা করেন যে তার দেশের বাহিনী নাগর্নো-কারাবাখের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর শুষা দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে আর্মেনিয়ার সরকার বলছে সেখানে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। এই শহরটি আর্মেনীয়দের কাছে শুষি নামে পরিচিত।

বিবিসির একজন সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, নাগর্নো-কারাবাখের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি দখল করে নিলে সেটা হবে এই যুদ্ধে আজারবাইজানের জন্য বড় ধরনের বিজয়। নাগর্নো-কারাবাখের রাজধানী স্টেপানাকার্টের কাছে পাহাড়ের ওপর গড়ে উঠেছে শুষা শহর। এর ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সড়ক যুক্ত হয়েছে আর্মেনিয়ার সঙ্গে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই শহরের দখল নিতে পারলে এখান থেকে রাজধানী স্টেপানাকার্টে হামলা চালানো আরও সহজ হবে।

আজারবাইজানের দাবি
এই শুষা শহর দখল করে নেওয়ার ঘটনাকে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেছেন এলাকাটি "স্বাধীন করা" হিসেবে। তিনি বলেছেন, "বিশ্বে এমন কোন শক্তি নেই, যা আমাদের থামাতে পারবে।"

শুষা দখল করে নেওয়ার দাবি জানানোর আগে আলিয়েফ বলেছেন, "আর্মেনিয়ার সময় ফুরিয়ে এসেছে।"

তিনি বলেন, শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তারা পুনরায় এসব এলাকা ফিরে পাচ্ছেন, আর এ কারণে আপসের মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানের সুযোগ কমে আসছে। প্রেসিডেন্ট আলিয়েফের এই ঘোষণার পরপরই আজারবাইজানের রাজধানী বাকুর রাস্তায় লোকজন উল্লাস প্রকাশ করে।

দুটো দেশের মধ্যে ২৭শে সেপ্টেম্বর আকস্মিকভাবে যুদ্ধ শুরু হলেও দেখা যাচ্ছে যে অক্টোবর মাসের শেষের দিক থেকে আজারবাইজান ধীরে ধীরে নাগর্নো-কারাবাখের দিকে অনেকটাই অগ্রসর হয়েছে।

আর্মেনিয়া কী বলছে
তবে শুষা শহর হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার খবর অস্বীকার করেছে আর্মেনিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আর্টস্রান হুভানিসায়ান ফেসবুকে লিখেছেন, "শুষি শহরের যুদ্ধ এখনও চলছে। অপেক্ষা করুন এবং আমাদের বাহিনীর ওপর বিশ্বাস রাখুন।"

অন্যদিকে, নাগর্নো-কারাবাখের স্বঘোষিত সরকারের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ডেভিড বাবায়ান বলেছেন, "আমরা শুধু বলতে পারি যে শুষি একটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে আজেরি ও কারাবাখের সৈন্যরা আছে, প্রত্যেকটি ভবন রক্ষা করার জন্য তারা একে অপরের সঙ্গে যুদ্ধ করছে।"

আজারবাইজানের ঘোষণার আগে আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শুসান স্টেপানিয়ান লিখেছেন, "শুষা শহরের আশেপাশে রাতভর ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছে।"

তিনি বলেছেন, এই যুদ্ধে আজারবাইজানের কিছু সৈন্য নিহত হয়েছে। ট্যাঙ্কসহ আরো কিছু যানবাহন ধ্বংস করা হয়েছে।

শুষা শহরের তাৎপর্য
শুষা শহরের সঙ্গে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া এই দুটো দেশেরই সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত যে যুদ্ধ হয়েছিল, তার আগ পর্যন্ত এই শহরে আজারবাইজানিদের সংখ্যা ছিল বেশি। কিন্তু ওই যুদ্ধের সময় লাখ লাখ আজারবাইজানি শহরটি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যায়।

আর্মেনিয়ানদের জন্যও এটি ধর্মীয় কারণে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। হলি স্যাভিয়র গির্জা এই শহরে অবস্থিত, যা আর্মেনিয়ান অ্যাপস্টলিক চার্চের একটি প্রতীক। এর আগে আর্মেনিয়ার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল যে আজারবাইজান ওই গির্জাটির ওপর হামলা চালিয়েছে।

দুটো দেশই সাধারণ জনগণের ওপর আক্রমণ চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করছে। আবার তারাই একে অপরের বিরুদ্ধে এ ধরনের হামলা চালানোর অভিযোগ করছে।

তুরস্কের প্রতিক্রিয়া
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট শুষা শহর দখল করে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর তুর্কী প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আজারবাইজানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।আজারবাইজানের জনগণকে তিনি "আমার আজেরি ভাই" সম্বোধন করে বলেন, "শুষায় যা হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে অধিকৃত বাকি সব জায়গাও খুব শীঘ্র মুক্ত করা হবে।"

আজারবাইজান তুরস্কের মিত্র দেশ। এই যুদ্ধে তুর্কী প্রেসিডেন্ট আজারবাইজানকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার কথা যুদ্ধের পরপরই ঘোষণা করেছেন। শনিবার এরদোয়ান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বলেন, আজারবাইজানের জমি থেকে আর্মেনিয়াকে সরে যেতে হবে এবং তাদেরকে আলোচনার টেবিলে বসার ব্যাপারে বোঝাতে হবে।

রাশিয়ার বক্তব্য
ক্রেমলিন থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন এরদোয়ানকে বলেছেন যে তিনি আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের সঙ্গে এখনই যুদ্ধ থামিয়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমঝোতার ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে।

আর্মেনিয়া রাশিয়ার মিত্র দেশ, কিন্তু আজারবাইজানের সঙ্গেও তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

মস্কো দু'টো দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেছিল। এ বিষয়ে ২৫শে অক্টোবর সমঝোতা হলেও এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া পরস্পরের বিরুদ্ধে অস্ত্র-বিরতির লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে।

এসি