‘আরেকটু হলেই চাকার নিচে যেতাম’
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:৪৮ পিএম, ৯ নভেম্বর ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০৭:৫০ পিএম, ৯ নভেম্বর ২০২০ সোমবার
এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম
অসহনীয় যানজটে জর্জরিত চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে আইন অমান্যকারী যানবাহনের চালকদের বিরুদ্ধে মামলাসহ প্রযোজ্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি তাদেরকে ট্রাফিক আইন বিষয়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রম চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম ও তার টিম।
আর এই অসাধ্য সাধন করতে গিয়েই প্রতিনিয়ত সম্মুখীন হচ্ছেন নানা ঝুঁকিপূর্ণ, ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির। এমনকি সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখোমুখীও হতে হয়েছে কয়েকবার। কিছু চালকের খামখেয়ালিপনাতেই ঘটছে এসব ঘটনা। এ নিয়ে আজ সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছেন এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম। যিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শামীম আনোয়ার নামেই সমধিক পরিচিত।
এদিন নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম লেখেন- ‘কিছু চালকের খামখেয়ালিপনার স্বাক্ষী হচ্ছি প্রতিদিনই। আজও পাহাড়তলী মোড়ে প্রায় চাকার নিচে চলেই যাচ্ছিলাম। মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী নিচ্ছিলেন তিনি। চিৎকার করে বারবার সামনে আগাতে বলার পরও নট নড়নচড়ন। ততক্ষণে পেছনে বিশাল জ্যাম। পরে দৌড়ে এসে যখন গাড়ির বাম্পার ধরেছি, সে হেঁচকা টানে এমনভাবে আমাকে ছিটকে ফেলে পালানোর চেষ্টা করে যে, আরেকটু হলেই চাকার নিচেই যেতাম। পরে অন্য একটি গাড়ি নিয়ে দীর্ঘপথ ধাওয়া করে আটক করি তাকে।’
এই নিয়ে বিগত দুই মাসে অন্ততঃ ৮/৯ বার প্রায় একইরকম অভিজ্ঞতা হলো উল্লেখ করেন আনোয়ার হোসেন শামীম। চালক ভাইদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি লেখেন- ‘চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ককে নিরাপদ করার জন্যই আমাদের সকল প্রচেষ্টা। আপনাদেরকে একটি স্বাচ্ছন্দ্যদায়ী ও যানজটমুক্ত সড়ক উপহার দেওয়ার জন্যই নাওয়াখাওয়া একদিকে সরিয়ে রেখে আমাদের দিনরাত রাস্তায় পড়ে থাকা। আর যাই করুন, আমাদের সংকেত অমান্য করতে গিয়ে দয়া করে আমাদের জীবনকে এভাবে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিবেন না।’
আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি চালকদেরকে ট্রাফিক আইন বিষয়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যে তাঁরই উদ্যোগে মাস দুয়েক পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক স্কুল। শুধু উদ্যোগ গ্রহণই নয়, পাঠ্যসূচি প্রণয়ন থেকে শুরু করে শিক্ষকতার ভূমিকাতে তিনিই। ব্যতিক্রমী এই স্কুলে ভর্তি হবার প্রক্রিয়াও বিচিত্র। রাস্তায় ট্রাফিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে তবেই এই স্কুলে ভর্তির সুযোগ মেলে। যানজট সৃষ্টিকারী যানবাহনের চালক ও সহকারীদেরকে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা বুঝিয়ে শ্রেণিকক্ষে এনে হাজির করেন।
অবশ্য ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর ছাত্রদেরকে একটিমাত্র ক্লাসেই অংশগ্রহণ করতে হয়। এক থেকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী পরিচালিত সেই ক্লাসে ট্রাফিক শৃঙ্খলার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তার ওপর আলোকপাতের পাশাপাশি দেওয়া হয় সড়ক সচেতনতাবোধের প্রাথমিক পাঠ। হাতে-কলমে বুঝিয়ে দেওয়া হয় ট্রাফিক আইনের অতি প্রয়োজনীয় ধারা-উপধারা। ক্লাস শেষে থাকে পরীক্ষা এবং সেখানে ভালো ফল অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের জন্য থাকে পুরস্কারেরও ব্যবস্থা।
এ বিষয়টি উল্লেখ করে এই সহকারী পুলিশ সুপার আরও বলেন- ‘আমাদের ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক স্কুলের মাধ্যমে প্রতিদিনই এসব বিষয়ে সবাইকে সচেতন করছি। কিন্তু আমাদের আচরণে আদৌ কি কোনও পরিবর্তন আসছে?’
পরিশেষে, সকলের শুভবুদ্ধির উদয় প্রত্যাশা করেন প্রাক্তন র্যাব কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকারী ও বর্তমান এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম।
এনএস/