ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

শাওন-হুমায়ূনের প্রেম উপাখ্যান

আলী আদনান

প্রকাশিত : ১০:৪৪ এএম, ১৩ নভেম্বর ২০২০ শুক্রবার | আপডেট: ০৩:৩৯ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০২০ শুক্রবার

হুমায়ূন আহমেদ। বাংলা সাহিত্যের এক বিস্ময়কর যাদুকর তিনি। যখন যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলিয়েছেন। মধ্যবিত্ত বাঙ্গালীকে উপজীব্য করে সাহিত্য রচনা ও সেই একই শ্রেণীকে সাহিত্যমুখী করার মধ্য দিয়ে তিনি একটি নতুন ধারার বা চিন্তার জন্ম দিয়েছেন। বাংলা চলচ্চিত্রেও একটি পরিচ্ছন্ন ধারার জন্ম দেওয়া ও সাধারণ শিক্ষিত সমাজকে নাটকমুখো করার ক্ষেত্রেও তার অবদান অনন্য। হুমায়ূন আহমেদের এর তুলনা হুমায়ূন আহমেদ নিজেই।

পৃথিবীর সব শক্তিশালী সৃজনশীল লোকদের মতো তাঁর জীবনেও হয়তো কষ্ট ছিল, একাকিত্ব ছিল, স্বপ্ন ছিল, অপূর্ণতা ছিল। কিন্তু অন্য সবার মতো তাঁরও আশ্রয় ছিল। নির্ভরতা ছিল। হ্যাঁ, তিনি অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন। তাঁর স্ত্রী। তাঁর সন্তানদের মা। হুমায়ূনের সঙ্গে তার প্রেম ছিল আত্মার, দেহের নয়। তাই তো শাওনের প্রতিটি নিশ্বাস এখনও হুমায়ূনের কথা বলে।

হুমায়ূন আহমেদ আজ নেই। কিন্তু শাওনের হৃদয়ে তিনি আছেন আগের মতই। এখন নিজের মধ্যে উড়ে যাওয়া প্রেমের প্রতিচ্ছবি আঁকেন তিনি। তার অসম্পূর্ণ কাজগুলোর দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে চলছে প্রতিনিয়ত।

এ নিয়ে মেহের আফরোজ শাওন বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ দুটি অবুঝ শিশুপুত্র রেখে গেছেন। এই শিশুদের মানুষ করাও একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আবার এটাও সত্য যে, তার কাজগুলো তিনি যেভাবে করতে পারতেন, পৃথিবীর অন্য কারো পক্ষে সেভাবে করা সম্ভব নয়।’

হুমায়ূন আহমেদের অপূর্ণ স্বপ্ন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তাঁকে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে হয়েছিল। তখন তিনি আফসোস করেছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, আমাদের দেশে একটা ক্যান্সার হাসপাতাল করা দরকার। তখন তিনি ক্যান্সার হাসপাতাল নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। আমি বিশ্বাস করি, তিনি যদি সময় পেতেন তাহলে ক্যান্সার হাসপাতাল করার জন্য একটা উদ্যোগ নেওয়ার সাহস দেখাতেন।’

শাওন বলেন, ‘আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনেছি। খেয়াল করলে দেখবেন, এই ভাষণের প্রতিটা দিকের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য আছে। গলার স্বর, বঙ্গবন্ধুর বডি ল্যাংগুয়েজ, অঙ্গুলি নির্দেশনা, দৃষ্টি… সব ম্যাচিং করা। ভাষণটা বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন বলেই, সারা দেশের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমি-আপনি দিলে কিন্তু তা হতো না। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুই।

ঠিক তেমনি হুমায়ূন আহমেদ ডাক দিলে যে কাজটি হতো, আমি শাওন সেই ডাক দেওয়ার সাহস রাখি না। হুমায়ূন আহমেদের জন্য কাজটি যতটা সহজ ছিল, আমার বা আমাদের জন্য কাজটি ঠিক ততোটাই কঠিন।

তবে আমি সরকারের কাছে, দেশের জনগণের কাছে, বিশেষ করে আপনারা যারা গণমাধ্যমে কাজ করছেন তাদের কাছে আবেদন রাখব, সবাই মিলে হুমায়ূন আহমেদের এই অপূর্ণাঙ্গ স্বপ্নটি রূপ দেওয়া সম্ভব।’

ব্যাক্তি মেহের আফরোজ শাওনের অনেক গুণ। ভালো গান গাইতে পারেন, ভালো অভিনয় করেন। তারপরও বয়সের একটা ফারাক থেকেই যায়, কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ শাওনের মধ্যে কী এমন পেয়েছিলেন যে নিজের অন্তরে জায়গা করে দিয়েছিলেন? কী তাদের প্রেমের উপাখ্যান? এমন প্রশ্নের জবাবে অভিনেত্রী শাওন বলেন, ‘আমার তো মনে হয় দু’টো বিষয়ই পরিপূরক। তবে হ্যাঁ, তিনি প্রথমত আমার প্রতিভার প্রেমে পড়েছিলেন, এরপর তিনি আমার প্রেমে পড়েছিলেন।’

হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে সর্ব শেষ শাওন বলেন, ‘আজও তাকে পাঠক ও দর্শকরা ভালোবাসেন। তাঁদের কাছে তিনি অমলিন। গণমাধ্যম হুমায়ুন আহমেদকে হৃদয়ের মণিকোঠায় রেখেছেন। কিন্তু তিনি রাষ্ট্রের কাছে প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আজ রাষ্ট্রের উচিত ছিল তাঁর জন্মদিন পালন করা। রাষ্ট্র তাঁকে কোনো সম্মান দিতে পারেনি। তাঁর নামে কোনো সড়ক, ভবন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল- কিছুই করা হয়নি। এটা খুবই দু:খজনক।’
এসএ/