ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

অবশেষে বাইডেনকে চীনের অভিনন্দন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:০৮ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০২০ শুক্রবার

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয়ের পর কিছুদিন নীরব থাকলেও অবশেষে সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়েছে চীন। শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র তার বক্তব্যে বলেন, "আমরা আমেরিকার মানুষের পছন্দকে সম্মান করি। আমরা বাইডেন ও মিজ হ্যারিসের প্রতি আমাদের অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি।"

চীন-মার্কিন সম্পর্ক এই দুই দেশের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ বাকি বিশ্বের জন্যও। সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্য, করোনাভাইরাস মহামারি ও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে অস্থিরতা বেড়েছে।

নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টকে রাশিয়াও এখন পর্যন্ত অভিনন্দন জানায়নি। চার বছর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন তখন তাকে অভিনন্দন জানানো প্রথম কয়েকজন রাষ্ট্র নেতার মধ্যে ছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন।

তবে এবার জো বাইডেনের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কোনো টুইট, টেলিগ্রাম বা ফোন কলও করেননি রুশ প্রেসিডেন্ট। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেছেন, "আমাদের বিশ্বাস, নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করাটাই সঠিক কাজ।"

শনিবার মার্কিন সংবাদ মাধ্যমগুলো জো বাইডেনের নির্বাচনে জয়ের পূর্বাভাস সম্পর্কে খবর প্রকাশ করা শুরু করার পর থেকে বিভিন্ন রাষ্ট্রের নেতারা বাইডেনকে ফোন করে অভিনন্দন জানানো শুরু করেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য কোনো ধরণের প্রমাণ ছাড়াই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করে আসছেন। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ও অঙ্গরাজ্য ভিত্তিক কয়েকজন নির্বাচন কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঐ দাবি বাতিল করে দেন। তারা মন্তব্য করেন যে ভোটগ্রহণ 'আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে নিরাপদ' ছিল।

চীনের বার্তা দেয়া কী ইঙ্গিত করে?

চীনের এই বার্তা থেকে বোঝা যায় যে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনি চ্যালেঞ্জ স্বত্ত্বেও চীনের নেতৃত্ব - বিশেষ করে দেশটির ক্ষমতাশালী প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং - আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল মেনে নিয়েছেন এবং জানুয়ারি মাসে জো বাইডেনই পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন বলে মনে করে।

এই বার্তা দেয়ার আগ পর্যন্ত চীনের সরকার বলে আসছিল যে জো বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করার বিষয়টি তাদের 'নজরে এসেছে।'

বৃহস্পতিবার অভিনন্দন জানানোর পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়্যাং ওয়েনবিন বলেন: "আমরা বুঝতে পারি যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল মার্কিন আইন এবং পদ্ধতি অনুসরণ করেই হবে।"

বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করার পাশাপাশি করোনাভাইরাসকে 'চীনা ভাইরাস' বা 'কুং ফ্লু' হিসেবে বেশ কয়েকবার উদ্ধৃত করার কারণেও দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি হয়েছে।

পশ্চিম চীনে মুসলিমদের গণহারে বন্দী করা এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সেনা ঘাঁটি স্থাপন নিয়েও দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। চীন কাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চায়, তা নিয়ে এবারের মার্কিন নির্বাচনের আগে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিশ্বাস ছিল, শি জিনপিং এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টি জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চেয়েছে। তবে বেইজিংয়ের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়ান জুয়েতং মনে করেন, আরো চার বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকুক, চীন তাই চেয়েছিল।

চীনের ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে চাওয়ার কারণ সম্পর্কে বিবিসিকে নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন, "এমন নয় যে বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্প চীনের স্বার্থে কম আঘাত করবেন, ট্রাম্প নিশ্চিতভাবে বাইডেনের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বেশি ক্ষতি করবেন।"

চীনের প্রতি জো বাইডেনের নীতি কতটা পরিবর্তিত হবে তা এখনও পরিষ্কার না হলেও বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন কৌশলগত কিছু পরিবর্তন আসতে পারে বাইডেনের চীন বিষয়ক নীতিতে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসি