ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

অস্তিত্ব সংকটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী টাউন খাল

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১২:৪৭ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০২০ শনিবার

দখল, দূষণ আর অব্যবস্থাপনার ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী টাউন খাল। এক সময় এই খাল দিয়ে বড় বড় পণ্যবাহী নৌকার সমাগম আর বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠলেও খালটি এখন সরু ড্রেনে পরিণত হচ্ছে। 

জেলা শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত খালটিকে ‘ টাউন খাল’ নামেই চেনেন শহরবাসী। তবে আবাসিক এলাকা, বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরা ও বাজারের বর্জ্য ফেলায় শহরের খালটি দিন দিন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। এতে করে একদিকে খালের পানি দূষিত হচ্ছে। অপরদিকে ময়লা আবর্জনা ও বর্জ্য ভরে খালের গভীরতা ও প্রশস্থতা উভয়ই কমছে। 

কর্তৃপক্ষের অযত্ন ও অবহেলায় খালটি আবর্জনার স্তূপে পরিণত হলেও দেখার কেউ নেই। শহরের টানবাজার ও কান্দিপাড়া এলাকা দিয়ে তিতাস নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে খালটি শহরের কাজীপাড়া, মধ্যপাড়া, পৈরতলা হয়ে গোকর্ণঘাট গ্রামের পাশ দিয়ে আবার তিতাস নদীতেই মিলিত হয়েছে। 

একসময় এই খালের পানিতে গোসল করতেন খালপাড়ের বাসিন্দারা। বর্ষাকালে এই খাল দিয়ে চলাচল করতো বাহারি নৌকা। শহরের বড় বড় ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌকা দিয়ে পণ্য এনে এই খালের টান বাজার এলাকায় নৌকা ভেড়াতো। এখন আর খালের আগের জৌলুস নেই।  খালটি এখন মৃত প্রায়। এই খালে এখন আর নৌকা চলে না। গোসলও করে না কেউ। 

জানা যায়, খালটির দৈর্ঘ্য চার দশমিক ৮০ কিলোমিটার। তবে জেলা পরিষদের মানচিত্র ও খতিয়ান অনুযায়ী ২০৫ ও ২৬২ দাগে খালের আয়তন আট দশমিক ৩৫ একর। পৌরসভার উদ্যোগে ২০০৮-১২ সাল পর্যন্ত সৌন্দর্য বর্ধনের নামে শহরের কান্দিপাড়া এলাকা থেকে ঘোড়াপট্টির পুল (ফকিরাপুল) পর্যন্ত খালের দুই পারে সিসি ব্লক, ফুটপাত ও রেলিং স্থাপন করা হয়। 
সৌন্দর্য বর্ধনের পরে জেলা পরিষদ কিংবা পৌরসভা কেউই খালের রক্ষণাবেক্ষণ করেনি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার এক প্রকৌশলী জানান, ‘এক সময় শহরের খালের গভীরতা ছিল ২২/২৩ ফুট। কিন্তু আবাসিক এলাকা, খাবার হোটেল ও বাজারের ফেলা বর্জ্যে তা দখল হয়ে ১৫ ফুট হয়ে গেছে। আর মধ্যপাড়া থেকে সরকারপাড়া পর্যন্ত খালের গভীরতা ৮-১০ফুট। প্রতিদিনই শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরা ও বাজারের বর্জ্য এনে খালে ফেলা হয়। এছাড়া শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার ২০টি ড্রেনের সঙ্গে রয়েছে খালটির সংযোগ। ড্রেন দিয়েও প্রতিদিন প্রচুর ময়লা এসে খালে পড়ে।’ 

শহরে কান্দিপাড়ার বাসিন্দা শাহিন বলেন, ‘৩০ বছর ধরে এই এলাকায় বসবাস করছি। আগে খালে খরস্রোতা পানি প্রবাহিত হতো। নষ্ট হয়ে যাওয়া এই খাল এখন শুধুই স্মৃতি।’

শহরে কাজীপাড়া দরগা মহল্লার বাসিন্দা ফিরুজ বলেন, ‘খালের বিভিন্ন অংশে দখলবাজরা দখল করে বহুতল বিশিষ্ট ইমারতসহ বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে ফেলেছে। তাই খালটি পুনরুদ্ধার ও বাঁচানোর দাবি জানাই।’ 

নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন ‘নোঙর’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, ‘গত ২১ আগস্ট শহরের খালপাড় থেকে গোকর্ণঘাট পর্যন্ত নোঙর’র উদ্যোগে পরিদর্শন শেষে আশ্বস্ত করেছিলেন পানি উন্নয়ন বোর্ড খুব শিগগিরই টাউন খালের সীমানা নির্ধারণ, উচ্ছেদ, খনন, রিটার্নিং ওয়াল, দুই পারে পায়ে হাটার রাস্তাসহ নান্দনিক করে তুলতে প্রকল্প প্রস্তাব আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। নোঙরের দাবি ছিল উচ্ছেদ অভিযান দিয়ে শুরুটা হউক, ধাপে ধাপে পরবর্তী কার্যক্রমগুলো সম্পূর্ণ হতে পারে, কিন্তু দুঃখের বিষয় গত তিন মাসেও কোন ধরনের কাজ চোখে পড়েনি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি অনতিবিলম্বে টাউন খালটি উদ্ধারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাশ বলেন, ‘আগামী দুই মাসের মধ্যেই আমরা টাউন খালের সীমানা নির্ধারণ করে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করব। তারপর পর্যায়ক্রমে খননসহ বাকি কাজ শেষ করব।’

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র মিসেস নায়ার কবির বলেন, ‘আমরা বার বার রেস্টুরেন্ট ও বাড়ির মালিকদের বলে আসছি কিন্তু তারা কথা শোনে না। রাতের বেলায় ময়লা ফেলে খালটিকে নষ্ট করে দিচ্ছে। সবাই সচেতন হতে হবে, তাহলেই খালটি আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।’

এআই//