বিবাহ সমাচার
সমর ইসলাম
প্রকাশিত : ০২:১৮ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০২০ রবিবার
এক.
২০১৭ সালের ঘটনা। ২৫তম স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় ২৭তম স্ত্রীর বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন এক নওশা। নাম তার ইয়াসিন ব্যাপারী। বাড়ি খুলনার রূপসাঘাট এলাকায়। তাকে শ্রীঘরে পাঠায় বেরসিক পুলিশ।
খুলনা জেলার পাইকগাছার গোপালপুর গ্রামের শিউলি আক্তার তানিয়া। ছয় বছর আগে বিয়ে হয় রূপসাঘাট এলাকার ইয়াসিন ব্যাপারীর সঙ্গে। তাদের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। হঠাৎ একদিন জানতে পারেন যে, তিনি হলেন ইয়াসিন ব্যাপারীর ২৫তম স্ত্রী। তার আগে চব্বিশ জন স্ত্রী গ্রহণ করেছেন ইয়াসিব বেপারী। কৌশলে তিনি স্বামীর আগের স্ত্রীদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেন। অনেক চেষ্টা করে ১৭ জন স্ত্রীর ঠিকানা সংগ্রহ করতে পারেন তানিয়া।
দিনে দিনে তানিয়া বুঝতে পারেন- স্বামী ইয়াসিন একজন বিকৃত মানসিকতার মানুষ। অনেক নারীর সর্বনাশ করেছে সে। ২৯ সেপ্টেম্বর খুলনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে একটি মামলা করেন তানিয়া। সেই মামলার সূত্র ধরে অভিযান চালায় পুলিশ।
অবশেষে বরগুনার তালতলীর গেন্ডামারা গ্রামে ২৭তম স্ত্রীর বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ দেখে স্তম্ভিত হন, সেইসঙ্গে শ্বশুরবাড়ির লোকজনও। সবশুনে হতবাক ২৭তম স্ত্রী রুমানা আক্তারও।
ঘটনাটি বরগুনার সাংবাদিক জয়দেব রায় পাঠিয়েছিলেন। বিয়ে-পাগলরা আরও উজ্জীবিত হবে এই আশঙ্কায় আলোর মুখ দেখেনি খবরটি। খবর তাই অখবর হয়ে যায়।
দুই.
এবারের ঘটনাটি ভারতের। নাম কৃষ্ণ সেন। পুরুষের বেশভূষা নিয়ে চলেন। আড্ডা দেন ছেলেদের সঙ্গেই। মোটরসাইকেল চালান, ধূমপান করেন, করেন মদ্যপানও। সকল কাজে নিজেকে পুরুষ হিসেবে সবার সামনে তুলে ধরেন। আচরণও পুরুষের মতো। মেয়ে হয়েও পুরুষের এই বেশ তার। তবে তা শখের বশে নয়; এই ছদ্মবেশ সহজ উপায়ে অর্থ উপার্জনের জন্য। এক সময় তিনি তার এই ছদ্মবেশ ধরে রাখতে পারেননি। বেরিয়ে আসে তার আসল পরিচয়। কীভাবে, সে কথাই বলছি।
তার আসল নাম সুইটি। পুরুষ সেজে নাম ধারণ করেন কৃষ্ণ সেন। ছাব্বিশ বছর বয়সী এই নারীকে পুলিশও প্রথমে চিনতে পারেনি যে, তিনি একজন নারী। পুলিশ জানায়- পুরুষের মতো চুল, পোশাক ও আচরণ নিয়ে কৃষ্ণ পুরুষের জীবন যাপন করতেন। কেউ কখনও তাঁকে সন্দেহ করেনি। এমনকি তিনি হাঁটেনও একজন আত্মবিশ্বাসী পুরুষের মতোই।
পুরুষ সেজে তিনি বিয়ে করেন। নেন মোটা অংকের যৌতুক। লোভ বাড়ে তার। ধরা পড়ার ভয়ে দ্রুত শ্বশুরবাড়ি থেকে সটকে পড়েন। প্রথম বিয়ের কথা গোপন করে আবারও বিয়ে করেন তিনি। যৌতুক চেয়ে এই স্ত্রীকেও হয়রানি করতে শুরু করেন। কৌশলে স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক এড়িয়ে চলেন। পরিমিত টাকা না পেয়ে স্ত্রীর প্রতি দিনে দিনে বাড়ে তার হয়রানির মাত্রা। অসহ্য হয়ে এই স্ত্রী অভিযোগ করেন পুলিশের কাছে। অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ধূর্ত এই নারী সুইটি।
উত্তরাঞ্চলের রাজ্য উত্তরাখণ্ড থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময়ও পুলিশ জানতো না তিনি পুরুষ না নারী। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে তার প্রতারণার বিষয়টি। পুলিশকে সে জানায়, ২০১৪ সালে প্রথম পুরুষের বেশ ধারণ করে বিয়ে করেন তিনি। এর আগ পর্যন্ত তিনি সুইটি নামেই পরিচিত ছিলেন।
জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানামিজে খান্দুরি সংবাদ মাধ্যমকে জানান- প্রথমে আমরা বুঝতেই পারছিলাম না যে, কৃষ্ণ কী বলছে! এরপর আমরা তাঁর মেডিকেল পরীক্ষার ব্যবস্থা করি এবং জানতে পারি যে তিনি একজন নারী। প্রথম বিয়ের পরপরই তিনি স্ত্রীর কাছ থেকে সটকে পড়েন এবং গত বছরের এপ্রিলে আরেক নারীকে বিয়ে করেন।
সাবেক শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে হয়রানির অভিযোগ করা হয় থানায়। তারা আরও অভিযোগ করেন- কৃষ্ণ শ্বশুরবাড়ি থেকে সাড়ে আট লাখ রুপি ধার হিসেবে নেন ব্যবসা করার জন্য। কিন্তু ওই টাকা আর ফেরত দেননি।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে যৌতুক প্রথা প্রাচীন। কয়েকশ’ বছর ধরে চলে আসছে এই ব্যাধি। বিয়ের সময় কনের বাড়ি থেকে বরের পরিবারকে নগদ অর্থ, জামাকাপড় ও অলংকার উপহার দেয়া হয়। বর্তমানে ভারতে বিয়েতে যৌতুক দাবি করা অবৈধ হলেও সমাজে চালু আছে এই কু-প্রথা। সর্বত্র এখনও যৌতুকের মাধ্যমেই বিয়ে হচ্ছে।
কৃষ্ণ সেন ওরফে সুইটি পুলিশকে জানায়, তিনি সব সময় ছেলে হতে চেয়েছেন। তিনি পুরুষের জীবন যাপন করতে চেয়েছেন। তবে এটা স্পষ্ট হয়নি যে কৃষ্ণর বাবা-মা তার এমন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত আছেন কি না।
পুলিশ জানায়- যে দুজন নারীকে তিনি বিয়ে করেছেন, তারা তাকে কখনও সন্দেহও করেননি। তিনি তাদের সামনে কখনও অনাবৃত হননি এবং তাদের সঙ্গে তার কোনও যৌন সম্পর্কও ছিল না। তার বেশিরভাগ বন্ধুই পুরুষ। তিনি পুরুষের টয়লেট ব্যবহার করতেন। পুরুষালি কণ্ঠে কথা বলতেন। তিনি ধূমপান ও মদ্যপান করতেন। পুরুষ বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেল চালাতেন। তার আচরণ ও কর্মকাণ্ডে এমন কিছু ছিল না যাতে তাকে নারী বলে সন্দেহ করা যায়।
হাদিস:
আনাস ইব্নু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তিন জনের একটি দল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইবাদত সম্পর্কে জানতে তাঁর স্ত্রীদের বাড়িতে আসলেন। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হলো তখন তারা ইবাদতের পরিমাণ কম মনে করলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে আমাদের তুলনা হতে পারে না। কারণ, তাঁর আগের ও পরের সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্যে থেকে একজন বললেন, আমি সারা জীবন রাতভর সলাত আদায় করতে থাকবো। অপর একজন বললেন, আমি সবসময় রোজা পালন করবো এবং কখনও বাদ দেবো না। অপরজন বললেন, আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করবো, কখনও বিয়ে করবো না।
এসব শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের কাছে এলেন এবং বললেন, ‘তোমরা কি ঐসব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছো? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহ্কে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশি অনুগত; অথচ আমি সাওম পালন করি, আবার তা থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি ও নিদ্রা যাই এবং নারীদের বিয়েও করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করবে তারা আমার দলভুক্ত হয়।’ (মুসলিম ১৬/১, হা. ১৪০১, আহমাদ ১৩৫৩৪; ইফা- ৪৬৯৩)
লেখক: কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক, নিউজরুম এডিটর, একুশে টেলিভিশন, ঢাকা।
এনএস/