ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

শর্ত মানছে না মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:২০ পিএম, ২২ নভেম্বর ২০২০ রবিবার

ঢাকার একশ’রও বেশি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র এবং ১৫টি মানসিক হাসপাতালের অনুমোদন থাকলেও বেশিরভাগই মানছে না লাইসেন্সের শর্ত। একুশের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে অনিয়মের নানা চিত্র। শয্যার তুলনায় অতিরিক্ত রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক ডাক্তার, নার্স নেই। চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়েও আছে প্রশ্ন।

দেশে সাড়ে তিনশ’ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের অনুমোদন আছে। এর মধ্যে ঢাকাতেই আছে ১০৫টি। কিছু প্রতিষ্ঠান মানসিক রোগেরও চিকিৎসা দিচ্ছে। ঢাকায় এরকম প্রতিষ্ঠান আছে ১৫টি।

এসব প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসার মান নিয়ে আছে প্রশ্ন। মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডের নবাব সিরাজদ্দৌলা মানসিক ও মাদকাসক্ত হাসপাতালটি ৪০ শয্যার। লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী সার্বক্ষণিক ১২ জন চিকিৎসক, ২৪ জন নার্স থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন।

নবাব সিরাজদ্দৌলা মানসিক ও মাদকাসক্ত হাসপাতালের পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ২৪ ঘণ্টায় ৩ জন ডিউটি ডাক্তার থাকেন এবং এদের সঙ্গে ৬ জন নার্স থাকেন। বড় বড় হসপিটালে যেরকম বড় ডাক্তার চিকিৎসা দিয়ে যান ছোট ডাক্তার সেটা পরিচর্যা করেন। আমাদের এখানেও সেরকম ভাবেই চলে।

একই এলাকার ঠিকানা সাইক্রিয়াটিক অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডিকশন ক্লিনিক। অনুমোদন নিয়েই মানসিক রোগের চিকিৎসা দেয়। ২০ শয্যার হাসপাতালে ৬ জন চিকিৎসক, ১২ জন নার্স ও ৬ জন পরিচ্ছনতাকর্মী থাকার কথা। অথচ ২৪ ঘণ্টায় পালা করে থাকছে একজন চিকিৎসক ও নার্স।

ঠিকানা সাইক্রিয়াটিক অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডিকশন ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক শাহিনা আক্তার বলেন, ওয়ার্ল্ড গ্লার্ল আছে, তারা নার্সদের মতোই ট্রেনিং দেওয়া। আমাদের কোন মেয়ে ডাক্তার নেই, কারণ মানসিক হাসপাতালে মেয়ে ডাক্তার রাখা যায় না। ডিউটি ডাক্তার দেখাশুনা করে তার সঙ্গে আমিও কাজ করি।

কেরানীগঞ্জের বসিলার মাদক নিরাময় কেন্দ্র ‘জীবনের আলো’। একুশের ক্যামেরা দেখেই বন্ধ করে দেয়া হয় মূল গেইট। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ভেতরে যাওয়ার সুযোগ মেলে। এর পরিচালক জানালেন, মাদ্রকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমোদন আছে। ১০ শয্যার অনুমোদন থাকলেও রোগী আছে ২০ জনেরও বেশি। সার্বক্ষণিক একজন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও সপ্তাহে দুইদিন আসেন। এখানে কোনো নার্সও নেই।

জীবনের আলো মাদকশক্তি চিকিৎসা ও সহায়তা কেন্দ্রের পরিচালক মো. রেজা আনছারি বলেন, সার্বক্ষণিকই দুই দিন ডাক্তার থাকেন। বাকি পাঁচদিনের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো অ্যাডিকশনের ব্যাপার, ফিজিক্যাল তেমন একটা সমস্যা হয় না। এমার্জি কিছু হলে নক করে ডাক্তার নিয়ে আসা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক নিজেও দীর্ঘদিন মাদকাসক্ত ছিলেন। জানান, অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্ত ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে তিনি রোগীদের কাউন্সিলিং করান।

রেজা আনছারি আরও বলেন, আমিও একসময় ড্রাগ এডিকটেন্ড ছিলাম। তাই একজন এডিকের কি অবস্থা, কি ধরন, কি ক্ষতি হয়েছে এটা আমরা বুঝতে পারি।

দ্বীনের আলো নামের এই মাদক নিরাময় কেন্দ্রটিরও অনুমোদন থাকলেও নিয়মের বালাই নেই।

দ্বীনের আলোর পরিচালক আবদুস সাত্তার বলেন, পুরোপুরি দিয়ে এটা চালাতো পারবো না। যেসব রোগী থাকেন তাদেরকে দেখে ডাক্তার ওষুধ দিয়ে যান। ওই নিয়মে চালানো হয়।

অনুমোদিত মাদক নিরাময় কেন্দ্র কিংবা মানসিক হাসপাতালগুলোই মানছেনা শর্ত। এ অবস্থায় প্রশাসনের নজরদারির দায়িত্বটি বড় প্রশ্ন হয়েই সামনে এসেছে।

ভিডিও-

এএইচ/