ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৯ ১৪৩১

জবির একমাত্র ছাত্রী হল নিয়ে শিক্ষার্থীদের যত প্রত্যাশা

মো সাগর হোসেন, জবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৮:০০ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০২০ সোমবার

হাঁটি হাঁটি পা পা করে দীর্ঘ  ১০ বছর কাজ চলার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়েছে জবির একমাত্র ছাত্রীহল 'বেগম ফজিলাতুন্নেছা হল'। ছাত্রী হল নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম মেয়াদ ছিল ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত। অবহেলা ও নানা প্রতিকুলতার কারণে বার বার মেয়াদ পিছিয়ে অবশেষে কাজ সমাপ্ত হয়েছে। তবে উদ্বোধন হলেও এক্ষুনি উঠতে পারবে না শিক্ষার্থীরা৷ অপেক্ষা করতে হবে করোনা মহামারি শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত।

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম নিজেদের আবাসিক বাসস্থানের জন্য আন্দোলন করতে হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘ হল আন্দোলনের ফসল এই ছাত্রীহল 'বেগম ফজিলাতুন্নেছা হল'।

সবকিছু মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম হল পাওয়া এবং অনাবাসিক থেকে আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রুপান্তরিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মনে এক আনন্দের জোয়ার বয়ে চলেছে। প্রথম হলকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের  প্রত্যাশাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।  

'Change will not come if we wait for some other person or some other time.
We Are the ones we've been waiting for, we are the change that we seek for."

বারাক ওবামার উক্তিটির যেন যথার্থ প্রতিফলন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল আন্দোলন এবং আসন্ন হল উদ্বোধন প্রক্রিয়ার। দেশের একমাত্র অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা ঘোচাতে মাত্র ক'টা দিন বাকি। একজন নারী শিক্ষার্থী হিসেবে ৪ বছর আগে যখন জগন্নাথে ভর্তি হই, পারিপার্শ্বিক সবার একটাই আক্ষেপ, হল নেই। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েও আবাসনের সুবিধা পাওয়া যাবে না। আমার চেনা অনেক নারী শিক্ষার্থী আছে যারা হলের সুবিধা না থাকায় পড়ার সুযোগ পেয়েও ভর্তি হয় নি। তবে প্রতি বছর প্রসাশনের আশ্বাসে বাড়িতে ফোন করে বলতাম, এ বছরই হল দিয়ে দিবে। মাননীয় উপাচার্য স্যার কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।স্যারের দূরদর্শী সিধান্তে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা যে পরম উপকৃত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না কেননা এই করোনা মহামারীতে প্রায় অধিকাংশ নারী শিক্ষার্থী মেস ছেড়ে দিয়েছে।মহামারী শেষে এতগুলো নারী শিক্ষার্থীর আবাসনের খোঁজ একটা বিশাল দুর্ভোগ বয়ে আনতো। তবে আমাদের সাধারণ নারী শিক্ষার্থীদেরএকটাই আবেদন,হলে সিট পাওয়া নিয়ে কোন বানিজ্যিক কার্যকলাপ যেন কখনো স্পর্শ করতে না পারে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রীহলকে।

ছাত্রীহলে চর্চা হবে সুস্থ রাজনৈতি এবং সাংস্কৃতি ।আমরা চাই যে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যেমন হলরুমে ডেকে নিয়ে রাজনৈতিক ব্যাপারে ম্যানার শেখানো নামে সময় নষ্ট করা,টর্চার হয় এটা যেন আমাদের হল এ না হয়। গণ মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি যে আমাদের হলে ৪র্থ ইয়ার ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। একজন শিক্ষার্থী  মাস্টার্স ও অনার্স ফাইনাল ইয়ারে এসে এসবে সময় দেয়াটা অযৌক্তিক। হলে ১ম, ২য় ও ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের অধিক অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।   বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সাথে সাথেই হল খুলে দেওয়ার প্রত্যাশী আমরা। মানে ছুটি শেষ হবার ঘোষণা আসার সাথে সাথে যেনো হলে ওঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।  তাহলে শিক্ষার্থীরা আবাসন ব্যবস্থা নিয়ে নিশ্চিন্তায় থাকবে।
-মুজতানিবাহ জাহান মাশরেকা,আই ই আর,সেশনঃ- ২০১৬-১৭। 

যেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মানেই সবার মনে ভেসে ওঠে একটি বিশাল বিস্তৃত ক্যাম্পাস, নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা, হল সুবিধা, সমৃদ্ধ লাইব্রেরী, উন্নত ক্যান্টিনসহ নানাবিধ সুবিধার কথা সেখানে আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৬তম বর্ষে এসেও প্রায় সবধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তবে এসকল সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো হল না থাকা অর্থাৎ আবাসন সমস্যা।যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখে সবাই ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন দেখে সেখানে জবিয়ানদের ভাবতে হয় থাকব কোথায়? এই অপরিচিত জায়গায় নিজের জন্য একটা নিরাপদ আশ্রয় খোঁজা যা একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মোটেই কাম্য নয়।সুদীর্ঘ ১৫ বছর ধরে জবি প্রশাসন এই চিত্র পরিবর্তন করতে ব্যার্থ।তবে জবির ১৬তম বর্ষে পদার্পণের দিন অর্থাৎ ২০-১০-২০২০ তারিখে আমাদের বহুল প্রত্যাশিত "বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল" এর উদ্বোধন করা হয়েছে। 

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর এই হল জবির প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনে আনন্দ বয়ে এনেছে৷ আমরা কৃতজ্ঞ আমাদের সেই বড় ভাই বোনদের প্রতি যাদের আন্দোলন এর ফসল হিসেবে আমরা এই হলটি পেয়েছি। তবে এই হল পাওয়ার আনন্দের সাথে সাথে মাথায় রাখতে হচ্ছে হলের আসন সংখ্যা মাত্র ৬২৪টি।যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেক ছাত্রীর আবাসন সংকট দূর করাও সম্ভব নয়।যেহেতু আসন সংখ্যা সীমিত সেহেতু একটা বিষয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন যেন এই সীমিত সংখ্যক আসন কেবল তারাই পায় যাদের আসলেই প্রয়োজন।বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যেন আবাসন বণ্টনের সময় কোনো প্রকার ক্ষমতার দাপট বা স্বজনপ্রীতি  না হয়।আর যেহেতু হল লাইফে সবাই নতুন সেহেতু সবার মধ্যে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক যেন বজায় থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে করে মেস লিডারদের হাত থেকে বেঁচে হলে গিয়ে আবার নতুন বিড়ম্বনায় পড়তে না হয়।

এছাড়াও কম খরচে থাকা ও উন্নতমানের খাবারের ব্যাবস্হা করতে হবে,পড়াশোনার মনোরম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সর্বপরি ছাত্রীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এর সাথে সাথে আমি মনে করি আমাদের নতুন ক্যাম্পাসে হলের কাজগুলো আগে সম্পূর্ণ করা হলে জবিয়ানদের কষ্ট কিছুটা হলেও কমে আসবে।ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সংকটের কারণে ইতোমধ্যেই আমরা আমাদের অনেক সিনিয়র-জুনিয়রদেরকেকে অকালে হারিয়েছি৷ সদ্য ক্যাম্পাসে এসে তিনদিন পানি না থাকায় হিট স্ট্রোক করে মারা যাওয়া ছোট ভাইটির কথা আমরা কখনো ভুলতে পারবো না। আমরা চাই যেন আর এই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি না হয়। এজন্য আমি মনে করি নতুন ক্যাম্পাসের হলের কাজ আগে সম্পূর্ণ করে আমাদের আবাসন সমস্যার সমাধান শতভাগ নিশ্চিত করা হোক।সর্বশেষ বলতে চাই  আমরা সকল জবিয়ান একসাথে বাঁচতে চাই।একসাথে পৌঁছাতে চাই সফলতার সর্বোচ্চ চূড়ায়।
সানজিদা হক তুলি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, সেশনঃ- ২০১৭-১৮।

১টি মহিলা হলসহ ১৩টি হল থাকলেও সেগুলো প্রভাবশালীদের দখলে ছিলো। ফলে হল শূন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন অতিবাহিত করছিলো পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঢাকার বাইরের অনেক ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে সুবিধাজনক জায়গায় মেসে ভাড়া থাকতো। যার পরিবেশ ছাত্রীদের জন্য তেমন অনুকূল ছিলো না।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পুরান ঢাকার এক ঐতিহ্যবাহী কলেজ ছিলো। কালক্রমে মাত্র ৭ একর জায়গার মধ্যে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে নিয়ে এই ঢাকাস্হ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর কার্যক্রম চলছে। কিন্তুু ছাত্রীদের জন্য কোন স্থায়ী হল ছিলো নেই।

মান্যবর উপাচার্য ডঃ মিজানুর রহমান গত ২০ অক্টোবর ২০২০, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ তম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দিবস এ একটি বিশাল আয়তনের ছাত্রীহলের উদ্বোধন করেন। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের কাজ সম্পন্ন হতে প্রায় দশটি বছর লেগেছে। দীর্ঘ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আশায় বুক বেধে ছিল একটি হল প্রতিষ্ঠিতার অপেক্ষায়। দীর্ঘসময়ের অবসান কাটিয়ে অবশেষে শিক্ষার্থীরা ছাত্রীহলের দেখা পেল।

এই ছাত্রীহলকে ঘিরে রয়েছে আমাদের নানা প্রত্যাশা। আমরা চাই ছাত্রী হলে সুস্থ রাজনৈতিক চর্চা গড়ে উঠুক।  সিট বাণিজ্য  দূরে থাকুক।  ছাত্রী সুস্থ সাংস্কৃতি ও রাজনৈতির চর্চা করবে এই হলে।

র‍্যাগিং বিরুদ্ধে কড়া হুশিয়ারি জারি করতে হবে রাখতে হবে হল কর্তৃপক্ষকে। কারণ র‍্যাগিং এর কারণে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

ছাত্রী হলের সিট বন্টন এর ব্যাপারে মাননীয় ভিসি মহোদয় বলেন, সিনিয়র শিক্ষার্থী অর্থাৎ যারা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যায়নরত আছে তাদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীদের যাদের বাসা ঢাকার বাহিরে এবং যাদের পক্ষে বাহিরে মেসে ভাড়া দিয়ে থাকা সম্ভব নয় আবার যারা  মেধাবী তাদেরকেও সিনিয়রদের পাশাপাশি হলে সিট দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।  বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত একজন নবীন শিক্ষার্থী হিসেবে ছাত্রীহলে সিট পাওয়ার ব্যাপারে আমিও আগ্রহী। আমি আশা রাখবো যেন সকল ধরনের পারিপার্শ্বিক অবস্হা  বিবেচনা সাপেক্ষেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রীহলের সিট বন্টন করেন। আমি প্রত্যাশা রাখছি, সুষ্ঠ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলের সিট বন্টন করা হবে যাতে করে আমার মতো নবীন শিক্ষার্থীদের হলে সিট পাওয়া নিয়ে মনে যেন কোন অসন্তোষ না থাকে।
সানজিদা মাহমুদ মিষ্টি,আই ই আর,সেশনঃ- ২০১৯-২০।

আরকে//