ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিই যেন অনুদানের সুবিধা পায়: মেয়র তাপস

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:২২ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০২০ সোমবার

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ভাসমান নয়, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিই যেন অনুদানের সঠিক সুবিধা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আজ সন্ধ্যায় নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও জার্মান রেডক্রস আয়োজিত “কোভিড-১৯ এ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে মানবিক সহায়তা প্রদান কার্যক্রম” এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।

ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ফলে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু অনুদানের অর্থ শুধু মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে প্রদান না করে, এই কার্যক্রমে ব্যাংকগুলোকেও সংযুক্ত করা যায় কিনা তা আয়োজকদের ভেবে দেখতে হবে। কারণ, শুধু মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হলেও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পরিবর্তে ভাসমান ব্যক্তির কাছে পৌঁছানোর আশঙ্কা থেকে যায়।

কোভিড-১৯ এর কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য দুস্থ গরিব মানুষের মাঝে সরাসরি আর্থিক অনুদান প্রদান কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ঢাকাতে অনেক ভাসমান লোক আসা-যাওয়া করে। শুধু মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে তাদেরকে সরাসরি অনুদান প্রদান করছেন। সেখানে একটি তারতম্য ঘটার সুযোগ থেকে যায়। কিন্তু এই অনুদান প্রদান কার্যক্রম শুধু ঢাকাবাসীর জন্য করা হয়েছে, ঢাকায় যারা গরীব দুঃস্থ তাদের জন্য করা হয়েছে, ঢাকার বস্তিবাসীদের জন্য করা হয়েছে, ঢাকায় যারা ভোটার তাদের জন্য করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ঢাকায় যারা বসবাস করে তাদের কোন না কোন ব্যাংকে হিসাব থাকেই। তাই এই কার্যক্রমে শুধু মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসকে না রেখে সকল বিকল্প খোলা রাখা উচিত। কারণ, এখন ব্যাংকগুলো শুধু শাখা করে না, ব্যাংকগুলো মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেও তাদের সেবা পৌঁছে দেয়। ব্যাংকগুলো উপশাখা করে, তারা এজেন্ট ব্যাংকিং করে।

ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস আরও বলেন, ঢাকা ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের বসবাস। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতি ও অগ্রগতির কারণে দারিদ্র্যের হার অনেক কমেছে। কিন্তু তারপরেও ঢাকায় যারা বসবাস করেন তাদের মধ্যে একটি বড় অংশই দুস্থ-গরীব, দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। তাই যারা ঢাকার ভোটার, ঢাকার বস্তিবাসী, ঢাকার দুস্থ-দরিদ্ররা যাতে এই সুবিধার আওতায় আসে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় তদারকি করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক উদ্যোগের ফলে আজ আন-ব্যাংকড পপুলেশন ৬০ শতাংশ হতে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, প্রধানমন্ত্রী ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন চান। তাই এতগুলো ব্যাংক থাকার পরেও আন-ব্যাংকড পপুলেশন এক সময় ৬০ শতাংশ ছিল। বর্তমানে সেটা কমে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। এর মূল কারণ, প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে এর দুয়ারগুলো উন্মোচন করেছেন, সুযোগগুলো উন্মোচন করেছেন।

তিনি বলেন, ঢাকা শহর যেহেতু অপরিকল্পিত নগরী। এই অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে দুর্যোগ সৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও ভবন ভেঙে পড়ছে, কোথাও হেলে পড়ছে, আবার কোথাও খালের উপর অবৈধভাবে নির্মিত ভবনগুলো দেবে যাচ্ছে। এরকম নানাবিধ দুর্যোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। তার ওপর মহামারী করোনা আমাদের ওপর চেপে বসেছে। সবমিলিয়ে ঢাকাকে বিশেষভাবে নজর দেওয়ার জন্য সবাইকে আন্তরিক অনুরোধ করছি।

মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ১২ হাজার পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হবে বলে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। এ কার্যক্রমের আওতায় ইতোমধ্যে ডিএসসিসির ৫৭০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে কোভিদ-১৯ কিট প্রদান করা হয়েছে, আরও ৪৩০ জনের মাঝে প্রদান করা হবে। এ পর্যন্ত পঞ্চাশটি পাবলিক প্লেসে বিনামূল্যে ৯৫ হাজার মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে এবং ডিএসসিসির সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় আরও ৫০টি পাবলিক প্লেসে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করা হবে বলে সভায় জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (বিডিআরসিএস) সহ-সভাপতি প্রফেসর ডাক্তার হাবিবে মিল্লাত এমপি, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ সালাউদ্দিন, জার্মান রেড ক্রিসেন্টের বাংলাদেশ প্রধান গৌরব রায়, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং ঢাকার সাধারণ সম্পাদক লায়ন শরীফ আলী খান বক্তব্য রাখেন।

অনলাইন প্লাটফর্মে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোল্টজ। ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডঃ শরীফ আহমেদ, সচিব আকরামুজ্জামান ও প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য যে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদাধিকারবলে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ঢাকা সিটি ইউনিটের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

এসি