মিরসরাইয়ে তিন ফসলি জমি রক্ষায় কৃষকদের মানববন্ধন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:১৩ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের নিন্মআয়ের মানুষগুলো দিনদিন কর্মহীন হয়ে পড়ছে। তাদের বাপ-দাদা পূর্ব পুরুষের কৃষি জমি অধিগ্রহণ করে সরকারী বেসরকারি ভাবে গড়ে উঠছে শিল্প, কল-কারখানা। কৃষি জমির পরিবর্কৃতন করে অকৃষি খাতে ব্যবহারের ফলে কৃষকদের পরিবারে নেমে এসেছে হতাশা। কৃষি জমি গিলে খাচ্ছে ইট-পাথরের দালান। তিন ফসলী কৃষি জমি অধিগ্রহণ না করতে মানববন্ধন করেছে কৃষকরা।
সরকারের কাছে তাদের দাবি বিদ্যুৎ নয়-খাবার চাই ফসলী জমির বিকল্প নাই’।‘ফসলী জমি ধ্বংস করে বিদ্যুতায়ন, অশুভ
চক্রান্ত রুখে দাঁড়াও জনগণ’,‘বিদ্যুৎ নয় খাবার চাই, ফসলী জমির বিকল্প নাই’,‘বাপ-দাদার তিন ফসলী জমি লুটে নিতে
চায় কোন হারামী’-সহ বিভিন্ন বক্তব্য ব্যানার, ফেস্টুনে তুলে ধরে ফসলী জমিতে মানববন্ধন করেন তারা।
মঙ্গলবার(২৪ নভেম্বর) সকালে উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের জয়পুর পূর্ব জোয়ার মৌজার প্রায় ৩৭ একর তিন ফসলী জমি রয়েছে একটি মাঠে। মাঠের আশপাশে কৃষকদের বাড়ী ঘর। কৃষি নির্ভর এই এলাকার মানুষ সারাবছর এই জমিতে ধান, ডাল, মৌসুমী সবজি খেয়ে বাঁচে। নিজের খেতে চাষ করা ফসলে সারা বছর তাদের সংসারের চাহিদা পূরণে করে আনন্দে কেটে যায়। সেই ৩৭ একরের মধ্যে ২৫ একর জমি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এল এ শাখা থেকে অধিগ্রহণের চিঠি পেয়ে এখন তাদের পরিবারের নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা।
বাপ-দাদার কৃষি জমি হারিয়ে কৃষি পেশা ছেড়ে এখন তারা পরিবার নিয়ে খাবে কি? এ প্রশ্নের উত্তর দেন জানা নেই। এই ৩৭
একর জমির প্রায় ১৬৬ জন মালিক, বর্গাচাষী এবং এলাকার জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা মিলে সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি জানান। ভূমি অধিগ্রহণ প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
জানা গেছে, উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের জয়পুর পূর্ব জোয়ার মৌজায় ১নং সিটে তিন ফসলী কৃষি জমিতে বিদ্যুতের সাব ষ্টেশন স্থাপন করার জন্য অধিগ্রহণের নোটিশ জারি করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ বিভাগ। জমি অধিগ্রহণ না করার জন্য শুরু থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে স্থানীয় কৃষক ও জমির মালিকরা। ভূমি অধিগ্রহণ প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে ভূমি অধিগ্রহণ না করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মিরসরাইয়ের সংসদ সদস্য, কৃষি মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগ নেতা স্বপন চৌধুরী, করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন, করেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান গিয়াস উদ্দিন জসিম, সাধারণ সম্পাদক শেখ সেলিম, ইউপি সদস্য শহিদুল্লাহ, ভূমি অধিগ্রহণ প্রতিরোধ কমিটির শোয়াইব মেম্বার, আক্তার হোসেন, আরবের রহমান, তাইফ উদ্দিন, সো. সরোয়ার, আবদুল্লাহ আল মামুন।
ভূমি অধিগ্রহণ প্রতিরোধ কমিটির দায়িত্বশীল মো. শোয়াইব মেম্বার বলেন,‘জয়পুর পূর্ব জোয়ার মৌজার ১নং সীটের ৩ ফসলী জমিতে বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন স্থাপন করার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করার জন্য নোটিশ জারি করা হয়েছে। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন কৃষি জমি নষ্ট করে কোন স্থাপনা করা যাবে না। কৃষি জমি রক্ষ করে উন্নয়ন কাজ করতে হবে। এখন বিদ্যুৎ বিভাগ করেরহাটে তিন ফসলী জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমরা জীবন থাকতে ভূমি দিবো না।’
তিনি আরও বলেন,‘করেরহাট ইউনিয়নের ছত্তরুয়া ও গেড়ামারা মৌজায় অনবাদী জমি, ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত জমি ও ফরেষ্ট রিজার্ভ ভূমি রয়েছে। সেখানে বিদ্যুতের সাবষ্টেশন করলে কৃষি জমি রক্ষা পাবে পাশাপাশি আমরাও সরকারকে সহায়তা করবো।’
মিরসরাই সহকারী কমিশনার(ভুমি) সুবল চাকমা জানান, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এল এ শাখা ভূমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা আমাকে অবহিত করেছে।
কেআই//