ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

বরেণ্য অভিনেতা আলী যাকেরের দাফন সম্পন্ন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৪১ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০২০ শুক্রবার | আপডেট: ১১:৪১ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০২০ শুক্রবার

বরেণ্য অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকেরের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে সকাল ১১টায় আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে তাঁকে নেয়া হয়। সেখান থেকে নেয়া হয় বনানীতে। জানাজা শেষে আসরের নামাজের পর বনানী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

এর আগে পারিবারিকভাবে জানানো হয়, মৃত্যুর দুই দিন আগে আলী যাকেরের করোনা শনাক্ত হয়। এ কারণে শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধার আয়োজন করা হয়নি। আজ আসরের নামাজের পর বনানী কবরস্থানের মসজিদে জানাজা পড়ানো হবে। তারপর বনানী কবরস্থানে আলী যাকেরকে দাফন করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি আলী যাকেরকে শেষ শ্রদ্ধার জন্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে নেয়া হলে করোনা সতর্কতা অবলম্বন করে, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাঁর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন অঙ্গনের মানুষ। প্রিয়জন, সহশিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে এসময় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, মামুনুর রশীদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, মফিদুল হক, নাসির উদ্দীন ইউসুফ প্রমুখ। এছাড়াও আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পরিবারের পক্ষে তাঁর মরদেহের পাশে তাঁর স্ত্রী সারা যাকের, ছেলে নাট্যাভিনেতা ইরেশ যাকের, মেয়ে শ্রিয়া সর্বজয়া উপস্থিত ছিলেন। সারাক্ষণ কফিনের পাশে ছিলেন সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এখানে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ছিল আলী যাকেরের মরদেহ। সেখান থেকে নেওয়া হয় বনানী, তাঁর কর্মস্থল এশিয়াটিকে।

একুশে পদকপ্রাপ্ত, বরেণ্য অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের আজ শুক্রবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

মৃৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৭৬ বছর। স্ত্রী অভিনয়শিল্পী সারা যাকের, ছেলে অভিনেতা ইরেশ যাকের, ছেলের বউ মিম রশিদ, নাতনি নেহা ও মেয়ে শ্রিয়া সর্বজয়াকে রেখে যান তিনি। সন্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের চেয়ারম্যান গোলাম কুদ্দুস সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংসদ আসাদুজ্জামান নূরের বরাত দিয়ে মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন।

নাট্য ব্যক্তিত্ব আলী যাকেরের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ , প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা , পররাষ্টমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন, তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজান্মেল হক, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুননেসা ইন্দিরা প্রমুখ পৃথক বার্তায় শোাক প্রকাশ করেন।

জানা গেছে বেশ কয়েক বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন আলী যাকের। সেই চিকিৎসার অংশ হিসেবে নিয়মিত থেরাপি চলছিল তাঁর। গত সপ্তাহে শারীরিক সমস্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। পরে কিছুটা সুস্থ হলে শনিবার বাসায় নেওয়া হয়। রোববার আবার ভর্তি করানো হয়। সোমবার কোভিড-১৯ টেস্ট করানো হলে জানা যায়, তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ।

আলী যাকের ১৯৪৪ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তাঁর বাবা মোহাম্মদ তাহের ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। বাবার চাকরির বদলি সূত্রে অল্প বয়সে কুষ্টিয়া ও মাদারীপুরে কাটান আলী যাকের।
আলী যাকের ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ওই বছরেরই জুন মাসে তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দেন। তখন থেকে নাগরিকই তাঁর ঠিকানা। ‘বাকি ইতিহাস’, ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘দেওয়ান গাজীর কিস্সা’, ‘কোপেনিকের ক্যাপটেন’, ‘গ্যালিলিও’, ‘ম্যাকবেথ’সহ অনেক আলোচিত মঞ্চনাটকের অভিনেতা ও নির্দেশক তিনি। পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেও তিনি পেয়েছেন জনপ্রিয়তা।

‘আজ রবিবার’, ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি’, ‘পাথর’, ‘দেয়াল’সহ বহু নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন আলী যাকের। বেতারে ৫০টির বেশি নাটক করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন বেশ কিছু চলচ্চিত্রে। টেলিভিশনের জন্য মৌলিক নাটক লেখাসহ নানা বিষয়ে দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখিও করেছেন দীর্ঘদিন।

আলী যাকের নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির পূর্ণ সদস্য। তিনি একুশে পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তাঁর মৃত্যুতে সংস্কৃতি ও নাট্যাঅঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।

এসি