আজ ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৯:৩৯ এএম, ৩ ডিসেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার
আজ ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের বীর বেশে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রবেশ করেন । স্বদেশের পতাকা উড়িয়ে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে আনন্দ উল্লাস করে এ অঞ্চলের মানুষ। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে হানাদার মুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও।
এই দিনে ঠাকুরগাঁও মহকুমায় মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী মানুষের দুর্বার প্রতিরোধে পতন হয় পাকিস্তানী বাহিনীর। পাকিস্তানী সেনাদের পতনের পর এ এলাকার সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস। আনন্দ উদ্বেলিত কণ্ঠে ‘জয়বাংলা’ ধ্বনি আর হাতে প্রিয় স্বদেশের পতাকা নিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকেন তরুণ-যুবক সবাই।
যে মানুষগুলোর আত্মত্যাগে দেশ শত্রুমুক্ত হয়েছিল তাদের স্মরণে হানাদার মুক্ত দিবস পালনে এবার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা আওয়ামী লী ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সেই সব কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি।
দিবসটি পালনে সরকারি উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা দাবি মুক্তিযোদ্ধাসহ সবার।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাক সেনারা ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালির ওপর। তাদের প্রতিরোধ করতে সারা দেশসহ ঠাকুরগাঁওবাসীও গড়ে তুলেছিল দুর্বার আন্দোলন।
ঠাকুরগাঁও মহকুমা ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। কমান্ডার ছিলেন পাক বাহিনীর স্কোয়াড্রেন লিডার খাদেমুল বাশার। সমগ্র সেক্টরে ১ হাজার ১২০টির মতো গেরিলা বেইস গড়ে তোলা হয়। ৮ মে’র আগ পর্যন্ত সুবেদার কাজিম উদ্দিন এর দায়িত্বে ছিলেন। ৯ মে ক্যাপ্টেন নজরুল, কাজিম উদ্দিনের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে স্কোয়াড্রেন সদরু উদ্দিন ও ১৭ জুলাই ক্যাপ্টেন শাহারিয়া সাব সেক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
২১ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হয় বালিয়াডাঙ্গী, পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল ও হরিপুর থানা অঞ্চলে। ২৯ নভেম্বর তৎকালীন ঠাকুরগাঁও মহকুমার পঞ্চগড় থানা প্রথম শত্রু মুক্ত হয়। এরপর পাকিস্তানী বাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়। তারা প্রবেশ করে ঠাকুরগাঁওয়ে।
৩০ নভেম্বর পাকিস্তানী সেনারা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভুল্লী (ঠঁষষর) ব্রিজ উড়িয়ে দেয়। তারা সালন্দর এলাকায় সর্বত্র বিশেষ করে ইক্ষু খামারে মাইন পুতে রাখে। মিত্রবাহিনী ভুল্লী ব্রিজ সংস্কার করে ট্যাংক পারাপারের ব্যবস্থা করে।
এর আগে ১ নভেম্বর কমান্ডার মাহাবুব আলমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাগন ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে ঢুকে। ২ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রচণ্ড গোলাগুলি শুরু হয়। ওই রাতেই শত্রু বাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে ২৫ মাইল নামক স্থানে অবস্থান নেয়। ৩ ডিসেম্বর বিজয়ের বীর বেশে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধাগণ।
স্বদেশের পতাকা উড়িয়ে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে আনন্দ উল্লাস করে এলাকার মুক্তিকামী মানুষ। কিন্তু স্বাধীনতার পর কেউ দিবসটি পালনে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বেশ কয়েক বছর ধরে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী মুক্তি শোভাযাত্রা, মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতিচারণ মূলক অনুষ্ঠান, আলোকচিত্র প্রদর্শন, নাটক, সম্মাননাসহ দিনব্যাপী বেশ কিছু অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করছে।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘হানাদার মুক্ত দিবস পালনে সরকারের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। তা না হলে হারিয়ে যাবে এ দিনের তাৎপর্য।’
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আকবর হোসেন বলেন, ‘জেলায় জেলায় যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক। ’
জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘দিনটি আরও অর্থবহ করে ধরে রাখতে সকল প্রতিষ্ঠানের এগিয়ে আসা উচিত।’
এআই/ এসএ/