সুনামগঞ্জে বখাটের ভয়ে গ্রাম ছাড়া নিরীহ ভাই-বোন
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩:৪৫ পিএম, ৬ ডিসেম্বর ২০২০ রবিবার
নারী চিকিৎসককে হুমকিদাতা বখাটে জুনেল আহমদ।
সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার বীরগাও গ্রামে এক ভাইয়ের সামনে তার চিকিৎসক বোনকে জোর করে তুলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টাসহ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুপারিশ সত্ত্বেও পুলিশ অভিযোগ আমলে না নেওয়ায় বোনের ইজ্জত বাচাঁতে সন্ত্রসীদের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে ভাই বোনের ফেরারী হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়- উপজেলার পূর্ববীরগাওঁ ইউনিয়নের বীরগাওঁ গ্রামের বাসিন্দা আরিফ আহমেদ হিমেলের ছোট বোন শরিফা আক্তার একজন চিকিৎসক (ডিএমএফ, ঢাকা)। সে দীর্ঘদিন যাবৎ স্থানীয় বীরগাও বাজারে নিজস্ব চেম্বারে প্রতিদিন এলাকার মানুষজনের মধ্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিলেন।
শরিফা আক্তার প্রতিদিন সকাল ১০টার দিকে চেম্বারে যান এবং রাত ৯টার দিকে ভাই হিমেলের সঙ্গে বাড়িতে ফেরেন। চলমান করোনা মহামারীর মধ্যেও মানব সেবার স্বার্থে শরিফা আক্তার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছেন। এরই মধ্যে একই এলাকার মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে জুনেল আহমদ নামে এক মাদকসেবী বখাটে চিকিৎসক শরিফা আক্তারের পিছু নেয়। জুনেল প্রতিদিন যাওয়া আসার সময় চিকিৎসক শরিফা আক্তারকে দেখলেই অশ্লীল ভাষায় ও অশালীন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে উত্যক্ত করতে থাকে।
গত ২৩ নভেম্বর সকাল ১১টার দিকে শরিফা আক্তার তার চেম্বারে যাওয়ার পথে বখাটে জুনেল তাকে একা পেয়ে রাস্তা রোধ করে এবং তার গায়ের ওড়না কেড়ে নেয়। এসময় শরীফা আক্তারের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে জুনেল শরিফা আক্তারকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে হত্যার হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়।
সঙ্গে সঙ্গে শরিফা আক্তার তার ভাই হিমেলকে ফোনের মাধ্যমে বিষয়টি অবগত করেন। ঘটনার দিন রাত ৯টার দিকে শরিফা আক্তারকে চেম্বার থেকে তার ভাই হিমেলকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সন্ত্রাসী জুনেলের নেতৃত্বে তার আরও ৫ জন অজ্ঞাতনামা সহযোগী তিনটি মোটরসাইকেলযোগে তাদের রাস্তা অবরোধ করে এবং ডাক্তার শরিফাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার হাত ধরে টানাহেঁচড়া শুরু করে।
এসময় ভাই হিমেল বোন শরিফা আক্তারকে উদ্ধারের চেষ্টাকালে সন্ত্রাসীরা শরিফার ব্যাগে থাকা নগদ ৫ হাজার টাকা, তার গলায় থাকা ৮ আনা ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন, ৬ আনা ওজনের কানের দুল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা ভাই ও বোনকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিতও করে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির শব্দ শুনে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা শরিফা আক্তারকে আবারও হত্যার হুমকি দিয়ে যায়।
বিষয়টি স্থানীয় এলাকার পঞ্চায়েতদের কাছে জানালেও কোনও বিচার না পেয়ে হিমেল গত ২৫ নভেম্বর দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেবুন নেহান শাম্মী বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাৎক্ষণিক নিবার্হী কর্মকর্তা এ বিষয়ে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে লিখিতভাবে সুপারিশ করেন।
কিন্তু থানা পুলিশ বিষয়টিকে কোনও গুরুত্ব না দেওয়ায় সন্ত্রসীদের হুমকির মুখে বোনের প্রাণ রক্ষার জন্য নিজের বসতবাড়ি ছেড়ে ফেরারী হয়ে ন্যায়বিচারের জন্য বোনকে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আরিফ আহমেদ হিমেল।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেবুন নাহারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান- মেয়েটির ভাই আমার কাছে লিখিত অভিযোগ নিয়ে এসেছে। আমি থানা পুলিশকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।
এ ব্যপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানান ওসি মোক্তাদির হোসেন জানান, আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে অভিযোগের কপিটি হাতে পেয়েছি। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এনএস/