টেকনাফ আ’লীগের সভাপতির পদ পেতে ইয়াবা কারবারিদের তোড়জোড়
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০১:৩৮ পিএম, ৮ ডিসেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ কৌশলে ভাগিয়ে নিতে চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারিরা তোড়জোড় শুরু করেছে। ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কাছে তদবির শুরু করেছে ওই ইয়াবা সিন্ডিকেট।
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুতে পদ শূন্য হয়ে যাওয়ায় কারবারিদের এ তৎপরতা শুরু হয়েছে। ইয়াবা কারবারিদের এ তৎপরতা রুখতে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে একটি লিখিত আবেদন করেছেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোহাম্মদ নুরুল বশর।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ বরাবরে লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৩ নভেম্বর টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুতে সভাপতির পদটি শূন্য হয়ে যায়। উক্ত শূন্যপদে একজন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় এক শ্রেণির অসাধু চক্র ও একটি ইয়াবা সিন্ডিকেট আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত এম এ জহির নামের এক বিতর্কিত ব্যক্তিকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করতে তোড়জোড় শুরু করেছে। ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ ছাড়াও দলীয় হাই কমান্ডেও তদবির শুরু করে দিয়েছে ওই চক্রটি।
এম এ জহিরের বিরুদ্ধে জাল, প্রতারণা ও পরিবারে ইয়াবা সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদে থাকাকালীন ২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এক ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে অনুষ্ঠানের সবার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করে সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির সঙ্গে তুলনা করেন।
ওই সময় তিনি বলেন, ‘খোদ শেখ হাসিনা এসেও উখিয়া-টেকনাফে নির্বাচন করলে আব্দুর রহমান বদির কাছে হেরে যাবেন।’ তার এমন বক্তব্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হতবাক হয়ে যান। তার এহেন কর্মকাণ্ডে টেকনাফ উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এম এ জহিরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি ওঠে।
তাদের দাবির প্রেক্ষিতে একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক বর্ধিত সভায় সংগঠনের সহ-সভাপতির পদ থেকে এম এ জহিরকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর থেকে দলীয় কোন কর্মকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু ওই বিতর্কিত ব্যক্তিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হলে শান্তিপূর্ণভাবে চলে আসা সংগঠন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে।
আবেদনে বলা হয়েছে. এম এ জহির একজন প্রতারক। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে জাল দলিল তৈরি করে অন্যের জমি বিক্রির বিষয়টি আদালতে প্রামাণিত হয়েছে। (মামলা নং-অপর ১৪৭/২০১২)। এছাড়াও তার সন্তান সৈয়দ মোহাম্মদ জোহা একজন তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের করা মাদকের তালিকায় তার নাম রয়েছে। তাই, এমএ জহিরের মতো বিতর্কিত ব্যক্তিকে শুধু সভাপতির পদ নয় দলে পুনরায় অন্তর্ভুক্তি না করতে জোর দাবি জানানো হয়েছে।
সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ নুরুল বশর জানান, ‘বর্তমানে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ অত্যান্ত সংগঠিত। এ অবস্থায় এম এ জহিরের মতো সুবিধাবাদি, সংগঠন বিরোধী, প্রতারক, বিতর্কিত ব্যক্তিকে দলে সমর্থন না দিতে দলীয় হাই কমান্ডে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। আমরা চাই, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগে কোন ধরণের ইয়াবা কারবারি ও অসাধু চক্রের অনুপ্রবেশ না করে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে এম এ জহির জানান, ‘আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়। টেকনাফে পরিচ্ছন্ন কোন রাজনৈতিক ব্যক্তি থাকলে সে আমি একজন। আমি কিভাবে অন্যের জমি বিক্রি করতে যাব। এটি কি কখনো সম্ভব?’
এম এ জহির বলেন, ‘কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের আগামী সভায় জেলার নেতৃবৃন্দ টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সেখানে আমার নাম প্রস্তাব আসতে পারে মনে করে বর্তমান টেকনাফ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে। আমি এবং আমার পরিবারের কেউ ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয়। আমি ৩০ বছর ধরে ইয়াবা ও মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসছি।’
এআই//