ধর্ষণের শিকার নারীকে বিয়ের পর আসামির জামিন
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০২:৩৪ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার
ধর্ষণের শিকার নারীকে বিয়ে করার পর ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক ব্যক্তিকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম, ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত একটি ভার্চুয়াল হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার সাজাপ্রাপ্ত আসামি দিলীপ খালকোকে ১ বছরের জামিন দেন।
উভয় পক্ষের সম্মতিতে কারা ফটকে বিয়ে হওয়ার বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর এ আদেশ দেন আদালত। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সরোয়ার হোসেন বাপ্পী। অপরপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস এম শাহেদ চৌধুরী।
মামলার বিবরণে জানা যায়, রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার সিতানাথ খালকোর ছেলে দিলীপ খালকোর সঙ্গে তার খালাতো বোনের (ভিকটিম) মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক ছিল। এরই সুত্র ধরে ভিকটিমকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সঙ্গে ২০১১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দৈহিকসম্পর্ক স্থাপন করে খালকো। এতে ভিকটিম গর্ভবতী হয়ে পড়ে। কিন্তু এরপর থেকে দিলীপ খালকো আর বিয়ে করতে রাজি হয়নি। এনিয়ে সালিশ করা নিয়ে সময়ক্ষেপন করা হয়। শেষ পর্যন্ত সালিশ বৈঠক না হওয়ায় ভিকটিম ওই বছরের ২৩ অক্টোবর স্থানীয় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে হাজির হয়ে তার প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করে। এরপর ২৫ অক্টোবর গোদাগাড়ি থানায় হাজির হয়ে দিলীপ খালকোর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করে। এ মামলায় আসামির বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর বিচার শেষে ওইবছরের ১২ জুন এক রায়ে দিলীপ খালকোকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত। রায়ে বলা হয়, যখন ভিকটিম ধর্ষণের শিকার হন তখন তার বয়স ছিল ১৪ বছর।
২০১২ সালের রায়ের পর থেকে দিলীপ কারাবন্দী। এ অবস্থায় দিলীপ হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। এ আবেদনের ওপর শুনানিকালে তার আইনজীবী জানান, ভিকটিম এখানে আছে। তারা বিয়ে করতে সম্মত। জামিন পেলে তাদের মধ্যে বিয়ে হবে। এ অবস্থায় আদালত গত ২২ অক্টোবর এক আদেশে তাদের কারা ফটকে বিয়ের আয়োজন করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
আর বিয়ে হলে সে বিষয়ে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
হাইকোর্টের এই আদেশের পর গত ৫ ডিসেম্বর দুপুরে হিন্দু বিয়ে নিবন্ধক কারা ফটকে বর ও কনের সই নেন। এরপর পুরোহিত বিয়ের মন্ত্র পাঠ করেন। এক পর্যায়ে মালাবদলে সম্পন্ন হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। সেদিন কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে কনের হাতে একটি কাতান শাড়ি তুলে দেয়া হয়। ওই বিয়েতে উপস্থিত ছিল বর ও কনের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া নয় বছরের ছেলে।
বিয়ের বিষয়টি প্রতিবেদন দিয়ে হাইকোর্টকে অবহিত করা হলে আজ বৃহস্পতিবার আসামিকে ১ বছরের জামিন দেন হাইকোর্ট। আসামি কারাগার থেকে বের হয়ে জামিনের অপব্যবহার করলে তার জামিন বাতিল হয়ে যাবে বলেও আদেশ উল্লেখ করেন আদালত।
সূত্র : বাসস
এসএ/