পুরস্কৃত ‘স্নোটেক্স গ্রুপ’
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:৩০ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ০১:৩৪ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার
আন্তর্জাতিক লজিস্টিক প্রতিষ্ঠান ডিএইচএল ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের আয়োজনে ‘বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড, ২০১৯’ এ ‘বছরের সেরা ব্যবসায় উদ্যোক্তা’ শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছে রফতানিমুখী পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান ‘স্নোটেক্স গ্রুপ’। করোনাকালীন এবার ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে এ পুরস্কার দেয়া হয়।
ভার্চুয়াল এ কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ডিএইচএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিয়ারুল হক, ডেইলি স্টারের প্রকাশক এবং সম্পাদক মাহফুজ আনাম প্রমুখ। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নেপালের বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী, সিজি ক্রপ গ্লোবালের চেয়ারম্যান বিনোদ কুমার চৌধুরী।
এ বিষয়ে স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম খালেদ বলেন, ‘দীর্ঘ বছর ধরে আমরা ব্যবসা করে আসছি। যেখানে আমরা আমাদের কমিটমেন্ট এবং সততাকে সব সময় বজায় রেখেছি।’
স্নোটেক্স ২০০০ সালে বায়িং হাউসের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। ২০০৫ সালে নিজেদের প্রথম কারখানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে স্নোটেক্স অ্যাপারেলস।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে কারখানাটির উৎপাদন শুরুর পর থেকে শতভাগ কমপ্লায়েন্স অর্জন করে স্নোটেক্স আউটারওয়্যার। বর্তমান সময়ে কারখানাটিতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয় ৮৩ শতাংশ, মেশিনের শক্তি সঞ্চয় হয় ৫৫ শতাংশ, বৃষ্টির পানি ব্যবহারযোগ্য করা হয় প্রায় ৫০ শতাংশ এবং পানির ব্যবহার কমানো হয়েছে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত। একইসঙ্গে শতভাগ পারদ এবং সিএফসিমুক্ত পরিবেশে পরিচালিত হয় কারখানাটি।
এছাড়া কর্মীদের কাজের প্রতি উৎসাহ বাড়াতে দেওয়া হয় সপ্তাহিক উৎপাদন বোনাস এবং কর্মস্থলে উপস্থিতির হাড় বাড়াতে দেওয়া হয় উপস্থিতি বোনাস। আর মূল বেতনের সঙ্গে এসব বোনাস কর্মীরা পেয়ে যান মাসের শেষ কর্মদিবসেই। এছাড়াও চাকরি বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের মেয়াদ দুই বছর অতিক্রম করলেই শ্রমিক নিজের ও মালিক পক্ষের উভয় অংশই পেয়ে যান।
শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিপুল সংখ্যক কর্মীদের দুপুরের খাওয়া বাবদ স্নোটেক্স গ্রুপের খরচ হয় রোজ প্রায় আড়াই লাখ টাকা। আর মাসের হিসেবে তা ৬৫ লাখ টাকারও বেশি। এর পাশাপাশি কর্মীদের খাবার খরচ বাবদ সরকার নির্ধারিত মাসিক ৬৫০ টাকা ভাতাও দেওয়া হয়।
কর্মীদের খাবারের গুণগত মান নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরণের সবজি এবং আমিষ জাতীয় খাদ্য ব্র্যাক, কাজী ফার্মস এবং আফতাব এর মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করা হয়। আর সবশেষে খাবার রান্না হওয়ার পর তাঁর স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগুণ ঠিক আছে কী না তা যাচাই করে নেওয়া হয় নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে।
মধ্যাহ্ন বিরতিসহ প্রতিদিনের কর্মঘন্টা থেকে ১ ঘন্টার বিরতি পান কর্মীরা। এসময় কর্মীদের বিশ্রাম ও বিনোদনের জন্য বিভিন্ন সুবিধা রাখা হয়েছে স্নোটেক্সের পক্ষ থেকে। শিল্প কারখানার পাশাপাশি মিশেল ঘটানো হয়েছে প্রকৃতির ছোঁয়ার।
সবজি ও ফুল বাগান, সবুজ মাঠ, খেলাধুলার জন্য প্লে-গ্রাউন্ডসহ আছে পুকুরপাড়। এছাড়া নারী কর্মচারীদের শিশুদের জন্য আছে শিশু পরিচর্যাকেন্দ্র। আছে লিফট ব্যবহারের সুবিধা।
নিজেদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে স্নোটেক্সের প্রধান উদ্যোক্তা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম খালেদ জানান, শুরুতে খুবই ছোট একটা অ্যাক্সেসরিজ সাপ্লাই প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা যাত্রা করি। প্রথম ৬ মাস খুবই কঠিন ছিলো। তবে প্রায় ৫ বছর পর আমরা যখন উৎপাদনমুখী ব্যবসা শুরু করি তখন পাঁচ হাজার পিসের অর্ডার দিয়ে শুরু করি।
আমাদের প্রথম সাফল্যটা আসে এই অর্ডার ডেলিভারি করার সময়। ডেলিভারির সময়ই আমরা একই গ্রাহক থেকে আরও ৪০ হাজার পিসের অর্ডার পাই। এর পরের তিন বছরে আমাদের অর্ডারের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪ লক্ষ পিসের। এরপর গ্রাহকদেরকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যৌথ উদ্যোগে মিরপুরে প্রথম কারখানা শুরু করি।
স্নোটেক্স গ্রুপের শুরু থেকে বর্তমান অবধি এই সাফল্যের জন্য কর্মীদের অবদানই মুখ্য বলে মনে করেন এস এম খালেদ। তিনি বলেন, শুরু থেকেই আমরা স্নোটেক্সকে ‘প্রফিট আর্নিং’ হিসেবে না নিয়ে আমাদের যে কাজ করা দরকার সেটি করার চেষ্টা করেছি। আমাদের যখন যেটা করার ছিলো সেটিই করেছি। সততা এবং প্রতিশ্রুতিকে আমরা সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিই। আর এখন পর্যন্ত এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের কর্মীদের জন্য।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের আন্তরিকতা ভালোবাসা এতটা বেশি যে, শুরুতে আমরা যে দু’জন বা দশজন ছিলাম তাদের অনেকেই এখনও আছেন। আর এই বিশাল জনবলের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে আছে নানান সুবিধা। গার্মেন্ট ব্যবসা খুবই কঠিন। এরমধ্যেই আমাদের সাধ্যমত সবটুকু করার চেষ্টা করি আমরা। দেশিয় শ্রম আইনের বাইরে গিয়ে কর্মীদের জন্য এসব সুবিধা আমরা নিশ্চিত করছি।’
এসএ/