ঢাকা, শনিবার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ৫ ১৪৩১

মেঘনার ঘোলা জলে মেহেদীর রঙ একাকার

নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৮:১৯ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ বুধবার

স্বজনদের সঙ্গে তোলা বর ও কনে তাছলিমার ছবি।

স্বজনদের সঙ্গে তোলা বর ও কনে তাছলিমার ছবি।

নদী বিধৌত মেঘনার ঘোলা জল আর নদী পাড়ের মানুষের বসতি মিলে একাকার দ্বীপ জীবন। এ নদী দিয়েছে যেমন জীবন ও প্রকৃতি, ঠিক তেমনি কেড়ে নিয়েছে হাজারো মানুষের স্বপ্ন। দ্বীপাঞ্চলে জাঁকিয়ে বসা শীতের ঘন কুয়াশার ফাঁকে পূব আকাশে রক্তিম সূর্যের উঁকি। বিজয়ের উল্লাসে যখন সারাদেশ তখন নদীকূলে স্বজন হারানো মানুষের বেদনার আর্তীতে ভারি আকাশ। 

মেহেদির লাল রঙে বধু বেশে বাসর সাজানো ঘরে বর শরিফের সাথে নতুন জীবনের স্বপ্ন বুননের নানা কথা বলার ছিল তাছলিমার। সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্বপ্নের বাসর সাজাতে যাত্রা শুরু করেছিল স্বামীর বাড়ি। উৎসবমুখর পরিবেশে দুপুরে মায়ের কোল ছেড়ে নদী পথে নতুন ঘরে পাড়ি দিচ্ছিল নববধূ। 

কিন্তু মাঝ নদীতে প্রচণ্ড ঢেউয়ের তোড়ে স্বপ্নের নৌকাখানি (ট্রলার) ডুবে মেহেদির লাল রঙ ধুয়ে মিলিয়ে য়ায় মেঘনার অপার জলরাশিতে। ঘোলা জলে মেহেদীর রঙ মিশে একাকার হয়ে যায়। আর স্বপ্নের রঙ ধরিত্রীকে ধূসর করে তোলে। বেদনার আর্তি নিয়ে বাবা-মায়ের আনন্দ হিল্লোলের অশ্রু পরিণত হয় বেদনা-বিষাদের অশ্রুতে।

মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যে বাড়ি ছিল উৎসবেমুখর আজ বিজয়ের দিনেই সে বাড়িতে কান্নার রোল, হাজারো মানুষের ভীড়। সন্তান হারানো মায়ের চিৎকারে ভারি হয়ে উঠেছে হাতিয়ার চানন্দীর আজিমনগরের ব্যবসায়ী ইব্রাহিমের বাড়ি। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে হতবাক বাবা-মা। নববধূকে হারিয়ে সজ্ঞাহীন বর। 

ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানের নানা অবশিষ্টাংশ, কোথাও পড়ে রয়েছে মৃতদের কাপড়-চোপড়। এখনো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে দুটি সাজানো গেট। শুধু নেই যাকে নিয়ে আয়োজন সে তাছলিমা। মঙ্গলবার রাতেই বাবার বাড়ির পাশের মসজিদ সংলগ্ন মাটিতে চিরদিনের বিছানায় শায়িত হয় দাদি নুরজাহান বেগম (৬৫) আর নাতনি নববধূ তাছলিমা বেগম (১৯)।

মঙ্গলবার দুপুরে হাতিয়ার মেঘনা নদীতে নৌকা ডুবিতে নববধূ তাছলিমা বেগম, তার দাদি, চাচিসহ প্রাণ হারায় সাতজন। দুপুর দেড়টার দিকে স্থানীয় আয়েশা আলী ঘাট থেকে নববধূ, বরসহ ৭০-৭৫ জনের বরযাত্রী ট্রলারটি নদী পথে যাচ্ছিল ভোলার ঢালচরে। মাত্র দুই কিলোমিটার যাওয়ার পরই বিকেল তিনটার দিকে জোয়ারের তোড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। অনেকে সাঁতরে কূলে আশ্রয় নিলেও নববধূ, তিন শিশু ও তিন নারী প্রাণ হারান। স্বজন হারানোদের দাবি, এখনও সাত শিশু ও এক নারীসহ নিখোঁজ রয়েছেন ৮ জন। 

নিহত নববধূ তাসলিমার শোকার্ত বাবা মো. ঈব্রাহিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মা ও সন্তানকে হারিয়ে আমি অসহায় হয়ে গেলাম। প্রিয় কন্যার বিয়োগান্ত শোকে মূর্ছিত নাজমা বেগম শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছেন, যেন অপেক্ষা- তার কন্যা ফিরে আসবেন শশুরালয় থেকে।

নৌপুলিশ, কোস্টগার্ডসহ স্থানীয় জেলে ও ইউপি সদস্যরা এখনও নিখোঁজদের উদ্ধারে কাজ করছেন। তবে কবে নাগাদ উদ্ধার করা সম্ভব হবে জানাতে পারেননি কেউ।

কারো কাছে অনুদান নয়, শোকে ভেঙে পড়া আত্মীয়স্বজনদের দাবী- প্রশাসন দ্রুত নিখোঁজদের উদ্ধার করে ফিরেয়ে দেবে তাদের মাঝে।

এনএস/