ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

শিশুদের ইন্টারনেট আসক্তি রোধে করণীয়

মীর ইমরান আলী

প্রকাশিত : ০৫:১৪ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ শনিবার

ইন্টারনেট, যা এখন এক যাদুর নাম। যাতে ছুঁয়ে দিলেই চলে আসে বিশ্বের সব প্রান্তের সব ধরণের তথ্য। শধু তথ্যই নয়, যে কোনও মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ কিংবা বিনোদন চাহিদা পূরণের জন্য এখন ইন্টারনেটের জুড়ি নেই। অবসর সময়ের একাকীত্বের বিরক্তি কাটানোর জন্য ইন্টারনেটের পরতে পরতে সাজানো আছে নানা আয়োজন। আছে সিনেমা, গান, নাটক, কার্টুন, খবর, টকশো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ শত বিনোদনের ঝুলি। 

যে ইন্টারনেট গোটা বিশ্বকে মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে, সেই ইন্টারনেট এখন ভীতিকর এক আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে নানা ক্ষেত্রে নানা প্রেক্ষাপটে। শিশুর সোনালী শৈশব এখন যেন ইন্টারনেটময়। যাকে বলা হয়- আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ- সেই শিশুর জীবনের যাত্রাপথই পতিত হচ্ছে এক ভয়াবহ আসক্তিতে। শিশুদের ইন্টারনেট আসক্তি এখন শৈশবেই ডেকে আনছে সর্বনাশ। 

চিকিৎসকদের মতে, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ শিশুর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। মোবাইল ফোনের বিকিরণ থেকে চোখের সমস্যাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। বাবা-মা এমনি করেই নানা ঘটনা কিংবা পরিস্থিতির মুখে বাচ্চাদের হাতে ইন্টারনেট তুলে দিচ্ছেন, কিন্তু তাদের কোনও সময় বেঁধে দেয়া হচ্ছে না। ধরে নেয়া হয়- বাচ্চা দেখে আপনা-আপনিই রেখে দিবে। 

কিন্তু তারা জানে না যে, ইন্টারনেট দেখে শিশুরা কখনোই তৃপ্ত হয় না। বরং আসক্তি আরও বাড়তে থাকে। ফলে ক্রমেই তারা চরম মাত্রায় আসক্ত হয়ে পড়ে। যা একটি শিশুর জন্য খুবই বিপজ্জনক। এক পর্যায়ে দেখা যায়- খাওয়ার সময় দেখছে কার্টুন কিংবা ভিডিও গান, যাতে পরবর্তী সময়ে ফোন বা ট্যাব ছাড়া শিশুকে সামলানো যায় না। না দিলেই শুরু হয়ে যায় রাগ, জিদ, চিৎকার কিংবা ভাংচুর। একটা পর্যায়ে এটা এমন আকার ধারন করে যে- এর জন্য বাচ্চারা স্কুলে যেতে চায় না, বাইরে খেলতে যায় না। ওদের কোনও বন্ধু গড়ে উঠে না। তাদের একটাই বন্ধু ইন্টারনেট-ইউটিউব। 

এ সমস্যা ক্রমেই একটি শিশুকে এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শিশুদের ইন্টারনেট এবং মোবাইল ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তবে নিয়ন্ত্রণটা করতে হবে কৌশলে। যেন তারা মনে করে- তাদের ভালোর জন্যই করা হচ্ছে। তাদের কৌশলে বোঝাতে হবে। যদি তারা অযৌক্তিক দাবি করে- তাহলে সেটা কোনওভাবেই মানা যাবে না। শিশুরা যদি মনে করে- তারা কান্না করলে কিংবা জিদ করলে তাদের দাবি অভিভাবকরা মেনে নিবে, তাহলে তারা সেটাই করার চেষ্টা করবে। 

যখন আমরা অযৌক্তিক দাবি পূরণ করবো তখন শিশুরা প্রশ্রয় পেয়ে যায়। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে- প্রশ্রয় পেলে শিশুরা গোল্লায় যায়। একেবারেই গোল্লায় যায়। আর শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন দিতে হলে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে হবে। বেশিক্ষণ যেন তারা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না পারে। এটা তাদের ভবিষ্যতের ভালোর জন্যই করতে হবে। 

একটি শিশু ইন্টারনেটে কোন ধরনের সাইটে ঢুকে ঘাটাঘাটি করে তার উপর নির্ভর করে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ। ইন্টারনেট এবং মোবাইলে আসক্ত হওয়ায় শিশুদের মধ্যে ফেইস টু ফেইস যোগাযোগ করার দক্ষতা কমে যায়। এছাড়া সহিংস এবং অ্যাডাল্ট ভিডিও শিশুরা যদি দেখে তাহলে তাদের মধ্যে এক ধরনের অপরাধ প্রবণতা বাড়ে। এটা দীর্ঘ মেয়াদে শিশুদের ক্ষতি সাধন করে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। 

অভিভাবকদের কাছে অনুরোধ, শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ নিশ্চিতকরণে ও নিরাপত্তার স্বার্থে আপনার সন্তানের হাতে অহেতুক স্মার্টফোন তুলে দিবেন না। আর প্রয়োজন সাপেক্ষে দিলেও সাবধানতা অবলম্বন করুন। আপনার সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখুন।

লেখক- তরুণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট, শিক্ষার্থী আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এনএস/