ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

যুব সমাজকে বাঁচাতে ভ্যানচালক বাবুলের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সরাইল সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ০৯:১৭ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২০ রবিবার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বুধল গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নান মিয়ার ছেলে বাবুল মিয়া পেশায় একজন ভ্যানগাড়ি চালক। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে তার সংসার চালানোর কর্ম। দুপুরের পর সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত পর্যন্ত চলে যুব সমাজকে মাদকের থাবা থেকে বাঁচানোর জন্য ব্যতিক্রমী প্রচারের কাজ। বিগত দুই বছর যাবৎ এই সেচ্ছাসেবীর কাজ করে চলেছেন তিনি। 

ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সংসার বাবুল মিয়ার। পড়াশুনা তেমন না করলেও তার রয়েছে দারুণ মেধা এবং ইচ্ছা শক্তি। সেই মেধা আর ইচ্ছা থেকেই তিনি নিজেই লিখেছেন "যুব সমাজ" নামক একটি কবিতা। যে কবিতাটি তার সেই ভ্যান গাড়িতে নিজের খরচে মাইক লাগিয়ে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে, হাটে ঘাটে নিজের কণ্ঠে পাঠ করে তরুণ-যুবক থেকে শুরু করে অসংখ্য মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাবুল মিয়া বলেন- আমি ইত্যাদির হানিফ সংকেত ভাইয়ের একজন অন্ধভক্ত, ওনার অনুষ্ঠানগুলো ছোটবেলা থেকেই নিয়মিত দেখি। এ থেকেই দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছা তৈরি হয়েছে আমারও। এটা আমি আমার নিজের ইচ্ছা থেকেই করছি, কেউ আমাকে শিখিয়ে দেয়নি বা একটি টাকা দিয়েও সহযোগীতা করেনি। তবে যদি আমি ওরকম কোনও সহযোগিতা পাই, তাহলে এই প্রচারণার কাজটাকে আরও বেগবান করার ইচ্ছা আছে। আমি ছাত্র, যুবক, অভিভাবকসহ সকলকে বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি, দেশের সম্মান এবং মাদকের কুফল সম্পর্কে। 

নিম্নে তার রচিত কবিতাটি তুলে ধরা হল-

"যুব সমাজ"
সমাজ নিয়ে চলতে হবে সমাজ সুখের ঘাঁটি
যুব সমাজ নষ্ট হলে বিদ্যা হবে মাটি।
সমাজ গড়তে আশায় আছি কেউ না দূরে রয়
ভবিষ্যৎ হইব খারাপ সবাই এক যদি না হয়।

দিনদিন বাড়তে আছে অসৎ আচরণ,
এই কথাটা তোমার আমার খুব তারাতারি ধরার প্রয়োজন, বোঝার প্রয়োজন।
সমাজ গেল ধ্বংস হয়ে দেশের কালচার,
যা হয়েছে এর বেশী হয়না যেন আর।

বাবা-মা কষ্ট করে আর তারা করে নেশা,
কাজের মতো কাজ করেনা এই কি তাদের পেশা?
নেশা করলে কোনও মেয়ে ভালো কি আর বাসে,
অন্তর থেকে ঘৃণা করে আঙ্গুল দেখায় শেষে।

অভিশাপের জীবন নিয়া জীবন গড়তে পারে?
তারে দেখলে থুথু ফেলায় গেলে কারও ধারে।
মানুষ হলো সভ্য জাতি সবখানে তার দাম,
কাজের মতো কাজ করিলে থাকবে তোমার নাম।

ঘৃণার পাত্র হইলে তুমি কে করিবে স্মরণ?
রাস্তা ঘাটে পশুর মতো হইব তোমার মরণ।
সমাজ বিহীন কাজ করিলে বলবে ধুরু ধুরু
মানুষ নামের জীব জানোয়ার তার চেয়ে ভালো গরু।

মরে গেলে হয় যে ভালো বলে তোয়া তোয়া,
নাম ধরিয়া মারে গালি পায় না কারো দোয়া। 
কাজের মতো কাজ করছে এটাই আমি পেলাম
শেখ হাসিনার কাছে আমার হাজার হাজার সালাম।

বাবুল বলে যুব সমাজ হয়ে গেলে ধ্বংস,
স্বপ্ন দেখা মিথ্যা হবে বাংলাদেশের অংশ।
কে হবে প্রধানমন্ত্রী কে চালাবে প্লেন,
শিক্ষা যে জাতির মেরুদণ্ড থাকবেনা তার চিন,

তারা মোদের স্বপ্ন কবি তারাই মোদের চন্দ্র,
বাবা মা কষ্ট পায় দেখে তাদের কাণ্ড।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই পুলিশ প্রশাসন,
দেশটা যে সঠিক হবে, হলে যুব উন্নয়ন।

আবর্জনা থাকলে পথে, পায়ে লাগে কাঁদা
সমাজবিহীন কাজ করিলে সবাই দিও বাঁধা।
আমরা সবাই ভালো চাই মুক্ত মনের মানুষ
চুল পরিমাণ পাই না যেন কারও কোনও দোষ।

ছাড় না দিলে ছাড় পাবে না, পুলিশ মোদের ভাই
এদেশটাকে করবে সুন্দর শাসন, এটাই আমরা চাই
বুঝে শুনে করি কাজ সবাই মিলেমিশে,
ভুলের মাসুল দিতে হবে নইলে অবশেষে।

ঘরের মাঝে করবে চুরি, বাইরে করবে খুন,
সময় থাকতে শাসন করো পাইবা তাহার গুণ।
নয়লে কিন্তু খারাপ হবে হয়ে যাবে ক্যাডার,
ঐশীর মতো বাবা মাকে করবে শুধু মাডার।

এই ধরনের নজিরবিহীন কাজ যদি হয়
ইতিহাসে লেখা থাকবে পশুর পরিচয়।
বন্ধু কি আর বন্ধু থাকে নেশাগ্রস্ত হলে
সোনার জীবন নষ্ট হবে তাদের সাথে গেলে।

বাবুল বলে সময় গেলে আর কি ফিরে আয়,
দিন মজুরের কাজ করিয়া আমি বলে যাই।
পায়ে ধরে মিনতি করি রাখি পায়ে হাত
র‍্যাব পুলিশে ধরার আগে হয়ে যাওরে জাত।

আমার বড় কষ্ট লাগে সমাজ হচ্ছে শেষ
হানিফ সংকেত ভেবে মরে নিয়ে আমার দেশ।
আমি একজন ভ্যানচালক রাস্তায় রাস্তায় চলি
বৃথা গেলে কষ্ট পাবো এই কলমের কালি।

এনএস/