ঢাকা, বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৩ ১৪৩১

অকালে চলে গেলেন শিল্পী সেলিম আহমেদ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫৫ এএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার

বহুমাত্রিক শিল্পী সেলিম আহমেদ আর নেই। শিল্পের নানা শাখায় তার অবাধ বিচরণ ছিল। একাধারে তিনি ভাস্কর, চিত্রশিল্পী, কবি, কথাসাহিত্যিক, অভিনেতা, শিল্পনির্দেশক ও প্রচ্ছদশিল্পী। বুধবার রাজধানীর আসগর আলী হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর। সেলিম আহমেদের মৃত্যুতে দেশের শিল্পাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।

শিল্পীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ ডিসেম্বর বুকে ব্যথা নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকরা জানান, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটলে চিকিৎসকদের পরামর্শে সেদিনই তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। সেলিম আহমেদ হৃদরোগ ছাড়াও কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। এ ছাড়া ফুসফুসে গুরুতরভাবে নিউমোনিয়া ছড়িয়ে পড়ে।

বুধবার ইস্কাটন গার্ডেন মসজিদে বাদ আসর জানাজা শেষে তাকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সেলিম আহমেদের জন্ম ১৯৬৩ সালের ২৪ মার্চ রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার শাল্টিগোপালপুর গ্রামে। রংপুর ও দিনাজপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে ভাস্কর্য বিভাগে লেখাপড়া শেষে আড়ংয়ের সিনিয়র ডিজাইনার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি দীর্ঘকাল আড়ংয়ের চিফ ডিজাইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ডিজাইন কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন। সেলিম আহমেদ কর্মজীবনের ইতি টেনে শিল্পচর্চায় মনোনিবেশ করেন। তার পেশা হয়ে ওঠে ক্রাফটস, সিরামিক, ইন্টেরিয়র, ফার্নিচার, গ্রাফিকস ও বইয়ের প্রচ্ছদ নির্মাণ।

বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পে সেলিম আহমেদ অনিবার্য ও শীর্ষ এক ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। দেশের অন্যতম সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঠক সমাবেশের সঙ্গে শুরু থেকেই তিনি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। ৩০ বছর ধরে পাঠক সমাবেশের অধিকাংশ গ্রন্থের প্রচ্ছদ তিনি এককভাবে করেছেন। সেলিম আহমেদের শিল্পনির্দেশনায় পাঠক সমাবেশ প্রতিষ্ঠানে আলাদা নন্দনমাত্রা যুক্ত হয়, যা সবার প্রশংসা অর্জন করে।

সেলিম আহমেদ অভিনয় ও নির্দেশনার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তার অভিনীত প্রথম নাটক ‘জয়িতা’। গোলাম মুক্তাদির পরিচালিত ‘লোটাকম্বল’ শিরোনামে ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছেন। তিনি বেশ কয়েকটি একক, ধারাবাহিক ও বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন। সম্প্রতি শিল্পনির্দেশক হিসেবে কাজ করেছেন ‘চিরঞ্জীব মুজিব’ সিনেমায়। এখানে একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন তিনি। অভিনয়ের পাশপাশি নাটক লিখেছেন সেলিম আহমেদ। ২০২০ সালের বিজয় দিবসে তার লেখা ও গোলাম সোহরাব দোদুলের পরিচালনায় ‘রানার’ নাটক টেলিভিশনে প্রচারিত হয়।

কবিতা ও কথাসাহিত্যেও সেলিম আহমেদ সমান পারদর্শী ছিলেন। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে উপন্যাস- ‘রাধা প্রেমে বারো অধ্যায়’ (১৯৯৯), ‘শীল বর্ষা ও একজন নেহাল’ (২০০০) ও ‘তুমি ভাস আমি ভাসি স্রোতে’ (২০০০); কাব্যগ্রন্থ- ‘অদ্ভুত মেঘযান’ (২০১৮), ‘মনের সবুজ পাতার ওপিঠে’ (২০০১); ছোটগল্প- ‘লেবু চায়ে আড্ডা’ (২০০৭)। তিনি সম্পাদনা করেছেন ২০০৭ সালে প্রকাশিত ‘আরজ আলী মাতুব্বর সমগ্র-৩’।

শিল্পী সেলিম আহমেদ স্ত্রী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন।
এসএ/