দায়িত্ব পালনে দুজন, ৩ জনের নামে বিল উত্তোলন!
হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৭:০৪ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ শনিবার
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের চেকপোষ্ট রেলগেটে গেটম্যান হিসেবে দু’জন দায়িত্ব পালন করলেও বিল উত্তোলন করা হচ্ছে তিন জনের নামে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী সাতকুড়ি রেলগেটে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন গেটম্যানের পরিবর্তে অন্যজনের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে- হিলি স্থলবন্দরের চেকপোষ্টে অবস্থিত রেলগেটে পালাক্রমে সুজন ও নাজমুল নামের দু’জন দায়িত্ব পালন করছেন। তবে বিল শীটে নাম থাকা আব্দুর রহমানকে সেখানে পাওয়া যায়নি গত বেশ কিছুদিন।
একইভাবে পার্শ্ববর্তী সাতকুড়ি রেলগেটে গিয়ে দেখা যায়- সেখানেও নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজন গেটম্যানের মধ্যে ইব্রাহিম ও মাকছুদুর নামের দু’জন ও সোহেল নামের বাইরের একজনকে দায়িত্ব পালন করতে গেছে। কিন্তু ফরিদ উদ্দিন নামে নিয়োগপ্রাপ্ত তৃতীয় জনকে পাওয়া যায়নি।
জানা যায়- সোহেল স্থানীয় রেলওয়ের পিডাব্লু অফিসের কর্তাবাবুর শ্যালক। তবে এ নিয়ে সাংবাদিকের খোঁজ-খবর নেয়ার তথ্য ছড়িয়ে পড়লে এবং জয়পুরহাটে সম্প্রতি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটলে, গত দু’দিন থেকে হিলি চেকপোষ্ট রেলগেটে ৩ জন এবং সাতকুড়ি রেলগেটে নিয়োগকৃত দু‘জনকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে এবং বহিরাগত সোহেল রানা নামের ব্যক্তিকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
হিলি স্থলবন্দর, সিএন্ডএফএজেন্ট ও রেলওয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে- হিলি স্থলবন্দরের চেকপোষ্ট গেটে অবস্থিত রেলগেটে মোট তিনজনকে নিয়োগ দিলেও সেখানে বর্তমানে কাজ করেন দুজন। বাঁকি একজন দেশের বাহিরে যাবে মর্মে সে ট্রেনিং করতে চলে গেছে। কিন্তু তার বেতনের ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা উত্তোলন করে তা থেকে দশ হাজার টাকা স্থানীয় কতৃপক্ষ নিয়ে বাকি টাকা তাকে দিয়ে আসছিলেন।
একইভাবে সাতকুড়ি রেলগেটে নিয়োগকৃত তিনজনের মধ্যে ইব্রাহিম ও মাকছুদুর দায়িত্ব পালন করেন, আর ফরিদ নামের একজনকে বাদ দিয়ে তার পরিবর্তে স্থানীয় পিডাব্লু অফিসের কর্তার শ্যালক সোহেল রানাকে দিয়ে দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরেই এই ধরনের কর্মকাণ্ড চলে আসছে বলে জানা গেছে।
হিলি স্থলবন্দরের চেকপোষ্ট রেলগেটে দায়িত্বপালনকারী সুজন ও নাজমুল নামের দুই গেটম্যান বলেন- আমরা এখানে বর্তমানে দু’জন দায়িত্ব পালন করছি, মাস্টারের খাতায় উপস্থিতির সাক্ষর করছি দু’জনেই। আজ এক বছরের মতো সময় ধরে আমরা এখানে দু’জনই দায়িত্ব পালন করে আসছি। তবে এর আগে আব্দুর রহমান নামের একজন ছিল, কিন্তু বর্তমানে নেই।
এ বিষয়ে আব্দুর রহমান বলেন- আমি গত তিন মাস ধরে অসুস্থ অবস্থায় রয়েছি। আমি স্থলবন্দরের চেকপোষ্টের রেলগেটেই দায়িত্ব পালন করেছি। তবে আমি অন্যদের তুলনায় দায়িত্ব পালন কম করেছি।
গত একবছর ধরে সেখানে তার অনুপস্থিতি সম্পর্কে আব্দুর রহমান বলেন- অতোদিন হবেনা, তার চেয়ে একটু কম হবে, আমি দায়িত্ব পালন করিনি।
তবে দায়ীত্ব পালন না করেও বেতন উত্তোলনের সুবিধা পাওয়ায় স্থানীয় কতৃপক্ষকে টাকা দিতে হয়েছে বলে স্বীকার করেন আব্দুর রহমান।
এদিকে, সাতকুড়ি রেলগেটে দায়িত্ব পালনকারী গেটম্যান ইব্রাহিম ও মাকছুদুর রহমান বলেন- এখানে আমাদের পিডাব্লু অফিসের শ্যালক সোহেল রানা ফরিদ উদ্দিনের পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করছিল। আজকেও তার দায়িত্ব ছিল। সম্প্রতি দুর্ঘটনা ঘটায় অফিস থেকে তাকে না করছে। যার কারণে এখন থেকে ফরিদ দায়িত্ব পালন করবে এবং সোহেল আর দায়িত্ব পালন করবে না।
ফরিদের পরিবর্তে দায়িত্ব পালনকারী সোহেল রানা বলেন- এখানে ফরিদ উদ্দিনের পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করছিলাম বা এখনও করি। বদলি হিসেবে আমাকে এইখানে দায়িত্ব পালন করানো হচ্ছে। নিয়ম অনুসারে করা ঠিক না, কিন্তু একজন অনুপস্থিত সেক্ষেত্রে আমি করতেছি এটাইতো বড় বিষয়। ফরিদের নামে বেতন উঠতো সেখান থেকে আমাকে বেতন দিতো।
জানতে চাইলে হিলি রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার তপন কুমার বলেন- হিলি স্থলবন্দরের চেকপোষ্ট রেলগেটে তিনজনকে গেটমেন হিসেবে দেখায় হিলি পিডাব্লু অফিস। কিন্তু বাস্তবে এখানে ডিউটি পালন করতেছেন ২ জন। ওপরজন নেই, সে যোগদান করার পর থেকেই নেই। আর আমাদের এখানে যে হাজিরা খাতা রয়েছে, তাতে সুজন ও নাজমুল নামের দুজন গেটমেনের নিয়মিত স্বাক্ষর রয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিলি কার্যালয়ের সময় রক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন- বিগত ২০১৮ সাল থেকে হিলি স্থলবন্দরের চেকপোষ্ট গেটে সুজন, নাজমুল ও আব্দুর রহমান এবং সাতকুড়ি রেলগেটে ইব্রাহিম, মাকছুদুর ও ফরিদ উদ্দিন গেটমেন হিসেবে কাজ করে আসছেন।
আরেক ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিলি কার্যালয়ের এসএসএই বজলুর রশিদ বলেন- বিগত একবছর ধরে আব্দুর রহমান সেখানে দায়িত্ব পালন করেন না- এটি ঠিক নয়। আব্দুর রহমান থাকেন, তবে সিপি গেটটি রাতেরবেলা বন্ধ থাকায় তাকে আমরা অন্যত্র দায়িত্ব পালন করিয়েছি আমাদের প্রয়োজনে।
এসময় আব্দুর রহমান নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেছেন বলে দাবী করেন তিনি। যদিও সে কোন গেটে ডিউটি করেছে, তার কোনও নির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি এবং এর কোনও লিখিত কাগজও দেখাতে পারেননি এসএসএই বজলুর রশিদ।
আর স্টেশন মাস্টারের কাছে থাকা এটেনডেন্ট শিটে দু’জন গেটম্যানের স্বাক্ষর থাকলেও অন্যজনের নাম নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন- তাকে অন্য একটি কাঁচা শিটে দেখানো রয়েছে।
এছাড়া সাতকুড়ি রেলগেটে যে তিনজন নিয়োগপ্রাপ্ত রয়েছেন তারাই দায়িত্ব পালন করছেন। মাঝে সোহেল রানা কয়েকদিন একজন গেটম্যান না থাকায় তার পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেটি আমাদের প্রয়োজনেই তাকে ডিউটি করিয়েছি- বলেই জানান তিনি।
কিন্তু আব্দুর রহমানের বেতনের ১৪ হাজার ৪৫০ টাকার মধ্যে ১০ হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি বজলুর রশিদ।
এনএস/