যমুনায় নাব্যতা সংকট: পণ্যবাহী জাহাজ আটকা পড়ছে ডুবোচরে
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৫:১৮ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ বুধবার
বাঘাবাড়ি বন্দরমুখী পণ্যবাহী জাহাজ আটকে আছে ডুবো চরে (বামে)। ছবি: একুশে টেলিভিশন
শুষ্ক মৌসুম আসতেই যমুনার নাব্যতা সংকটে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম নৌ-বন্দর বাঘাবাড়ী। ইতিমধ্যেই পেঁচাকোলা ও নাকালিয়া চরে বন্দরমুখী পণ্যবাহী কার্গোজাহাজ পদ্মা-যমুনার ডুবোচরে আটকা পড়েছে। নাব্যতা কমে যাওয়ায় যমুনায় ক্রমেই বেড়ে চলেছে ডুবো চরের সংখ্যা, সেই সঙ্গে বাড়ছে আটকে পড়া জাহাজের সংখ্যাও।
নাব্যতা সংকট এমন একপর্যায়ে এসেছে যে, পণ্যবাহী জাহাজ পূর্ণ লোড নিয়ে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে পৌঁছাতে পারছে না। সরাসরি কিছু কিছু জাহাজ ভিড়তে পারলেও পণ্যবাহী ভাড়ি জাহাজগুলো আটকে যাচ্ছে ডুবো চরে। ফলে মাঝ নদীতে আটকে পড়া এসব জাহাজ থেকে লাইটারেজ করে রাসায়নিক সারসহ বিভিন্ন দরকারি পণ্য বাঘাবাড়ী বন্দরে আনা হচ্ছে। এতে সময় বেশি লাগার পাশাপাশি বাড়ছে খরচও।
এদিকে, শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ী নৌবন্দরমুখী মালবাহী জাহাজ সময়মতো বন্দরে ভিড়তে না পারায় জ্বালানি তেল, সার ও কয়লা সরবরাহ কমে গেছে। এতে করে পণ্য সরবরাহে স্থবিরতার পাশাপাশি বন্দরটির কমর্চাঞ্চল্য হ্রাস পেয়েছে। দেখা দিয়েছে বোরো মৌসুমে সার-জ্বালানি সংকটের আশঙ্কা।
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম নৌ-বন্দর বাঘাবাড়ী। ১৬ জেলার সার, তেল, জ্বালানিসহ অনেক পণ্য পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দর। এজন্য বোরো মৌসুমে ব্যস্ততা বাড়ে এই রুটের। তবে, শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই প্রতিবছর নাব্যতা সংকটের মুখে পরে বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দর। ডুবোচরের কারণে ঘাটে ভিড়তে পারেনা বড় নৌযানও।
অনেকের অভিযোগ, সময়মতো ড্রেজিং না করায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। সামনে আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে আশঙ্কা তাদের। তবে, বন্দরে সচল রাখতে দ্রুত ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
নদীতে নৌযান চলাচলের জন্য ন্যূনতম ৯ থেকে ১০ ফুট গভীরতা থাকা দরকার। তবে, এখন এই রুটের অনেক জায়গায় গভীরতা ৭ ফুটেরও কম।
জানা যায়, বাঘাবাড়ী বন্দরমুখী যমুনা নদীর বেড়া উপজেলার পেঁচাকোলা পয়েন্টে ডুবোচর পড়ায় মালবাহী জাহাজগুলো প্রায়ই আটকে পড়ছে।
বাঘাবাড়ী নৌবন্দর সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর যোগাযোগ মাধ্যম দৌলতদিয়া-বাঘাবাড়ী নৌপথ। এ নৌপথে জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকার, রাসায়নিক সার, কয়লা ও বিভিন্ন পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল করে। বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলে চাহিদার ৯০ ভাগ জ্বালানি তেল ও রাসায়নিক সার সরবরাহ করা হয়।
আবার উত্তরাঞ্চল থেকে বাঘাবাড়ী বন্দরের মাধ্যমে চাল ও গমসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। এ নৌপথের তিনটি পয়েন্টে নাব্যতা সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও মোংলা বন্দর থেকে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে আসা এমভি আছিয়া খালেক গাজী, মেসার্স করিম শিপিং লাইন্স, ওটি শিপার্স ওয়ানন্ড-২, ওটি করিম-৬, এমটি সুলতানা, ওটি আছিয়া বেগম, এমভি সুমাইয়া হোসেন, এমভি ফয়সাল, এমভি ফয়সাল, এমভি ফয়সাল-৮ সহ ১২টি জাহাজ পেঁচাকোলা, চরশিবালয় ও নাকালিয়ার ডুবোচরে আটকা পড়েছে।
এমভি আছিয়া খালেক গাজীর মাস্টার মো. সোহেল রানা জানান, দৌলতদিয়া থেকে বাঘাবাড়ী নৌবন্দর পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার নৌপথের ছয়টি পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ থেকে ৯ ফুট। সরু হয়ে গেছে নৌ চ্যানেল। মোহনগঞ্জ, পেঁচাকোলা পয়েন্টে দুটি জাহাজ পাশাপাশি চলাচল করতে পারছে না। ওই পয়েন্টে জেগে ওঠা চরের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় দিনদিন চ্যানেলটি আরো সরু হয়ে যাচ্ছে। এই পয়েন্টে দ্রুত ড্রেজিং না করা হলে পণ্যবাহী ও জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক ও বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের পোর্ট কর্মকর্তা সাজ্জাদ রহমান বলেন, ‘বাঘাবাড়ী থেকে আরিচা পর্যন্ত এই নৌপথে আমাদের তিনটি ড্রেজার কাজ করছে। দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে সাত ফুটের বেশি ড্রাফট বা গভীরতা নিয়ে কোনো জাহাজ আসার কথা নয়। কিন্তু বেশির ভাগ জাহাজই ১০ থেকে ১২ ফুট ড্রাফট নিয়ে বন্দরে আসছে। ফলে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
এএইচ/