ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

পাচারকারীদের প্রধান টার্গেট প্রান্তিক নারীরা (ভিডিও)

খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৩:৩০ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার

মানবপাচারের ঘটনা কমছে না দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। আর পাচারকারীদের প্রধান টার্গেট প্রান্তিক জনগোষ্ঠির নারীরা। এই অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নেই বলে কমছে না পাচার। এমন মত স্থানীয় আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীদের। পুলিশ বলছে এবছর কমেছে মানবপাচার। 

ধরে নেওয়া যাক এই নারীর নাম জবা। ১৫ বছর আগে তার স্বামী দালালের মাধ্যমে ভারতে কাজ করতে গিয়ে নিরুদ্দেশ হন। তার জীবন সংগ্রাম শুরু হয় তখন থেকেই।

দুই সন্তানের লেখাপড়া আর সংসারের অভাবে যখন হাবুডুবু খাচ্ছেন, তখনই ২০১৮ সালে পাচারকারীদের টার্গেটে পড়েন তিনি। পাচারকারীদের ফাঁদে পড়ে যান সৌদি আরব। সেখানে দুই বছরের নির্যাতন, লাঞ্ছনা-বঞ্চনাই জুটেছে। প্রতিমাসে শ্রমের বিনিময়ে যে টাকা পাওয়ার কথা ছিল তাও পাননি। পরে অনেক কষ্টে দেশে ফিরেছেন। 

জবা (ছদ্মনাম) জানান, সেখানে আমাকে নির্যাতন করে, টাকা-পয়সা দেয় না। দালালকে ফোনও দিতে পারি না। বার বার মালিককে বলি যে, বাংলাদেশে ফোন দেন আমি একটু কথা বলবো। কিন্তু ওরা কথা বলতে দেয়নি। 

দক্ষিণাঞ্চলের অনেক নারী-পুরুষ বিদেশে গিয়ে আবার পালিয়ে দেশে ফিরেছেন তাদের জীবনের গল্পটাও একই রকম।

মানবপাচারের শিকার এমন একজন জানান, দালাল আমাকে নিয়ে গিয়ে ওখানে আটকে রাখে। তারপর তারা বলে এখানে কাজ করো, বললাম টাকা-পয়সা পাবো তো। তারা বললো কোনও টাকা-পয়সা হবে না।  

প্রতারণায় পড়ে এক মহিলা স্বামী, যিনি এই ফাঁদে পড়ে স্ত্রীকে পাঠান ভিনদেশে। তিনি জানান, তাদের কাছে জানতে চাইলাম মহিলা পাঠালে কি সুবিধা হতে পারে, কি বেতন পাওয়া যেতে পারে। উনি বললেন যে, বেতন যথেষ্ট আছে, কোন সমস্যা নেই।

মানবপাচারের মতো অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া এবং প্রতিরোধ কমিটিগুলো কার্যকর না থাকায় এই অঞ্চলে পাচার বেড়েছে, বলছে বেসরকারি সংগঠনগুলো।

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী তাহমাদ আকাশ বলেন, মামলা হওয়ার পরে তাদেরকে অনেক সময় গ্রেফতার করা সম্ভব হয় না। সেই ক্ষেত্রে মামলাটি কিন্তু ঝুঁলে যায়।

খুলনার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাডভোকেট এনামুল বলেন, জেলা প্রশাসন, পুলি প্রশাসন, প্রসিকিউশন এবং জাজসিপ সবাই মিলে মানবপাচার মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পাচার কমছে বলে জানান রেঞ্জ ডিআইজি। 

খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড. খঃ মহিদ উদ্দিন বলেন, নারী, শিশু এবং পুরুষ যেই হোক- এজন্য মূলত প্রয়োজন সচেতনতা তৈরি করা। তার কারণ একবার যখন দালালের খপ্পরে পড়ে যায়, তখন কিন্তু সে লক্ষ্য ধরে রাখতে পারে না। দালালের সিদ্ধান্ত মাফিকই তাদেরকে কোন একটা গন্তব্যে গিয়ে পড়তে হয়।

বেসরকারি সংস্থার হিসেবে গত তিন বছরে খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলায় মানবপাচারের শিকার হয়েছেন দুই হাজার দুইশত জনের বেশি মানুষ। কিন্তু শাস্তি হয়নি কোন পাচারকারীর।
ভিডিও :

এএইচ/এসএ/