নারায়ণগঞ্জে পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩:২১ পিএম, ৯ জানুয়ারি ২০২১ শনিবার
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী ইপিজেডের ভেতর কুংতন এ্যাপারেলস লিমিটেড (ফ্যাশন সিটি)-এর সাড়ে ৬ হাজার শ্রমিক তাদের বকেয়া বেতনের দাবিতে দ্বিতীয়বারে মতো আজ শনিবার সকালে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। দুই দফা পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ার সেল নিক্ষেপের পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
আন্দোলরত শ্রমিকরা নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-চিটাগাংরোড সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে আগুন জ্বালিয়ে যান চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। ফলে সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়ে যাত্রী সাধারণ।
এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিসের সামনে একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা-মেট্টো-গ-৩৯-০১৪৮) গাড়ি ভাঙচুর করে এবং কারের চালক নুর ইসলামকে মারধর করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেলা ২টার দিকে সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু করে।
আন্দোলত শ্রকিকরা জানায়, তাদের ৪ মাস ১০ দিনের বেতন বকেয়া পড়েছে। এছাড়া আরও অন্যান্য পাওয়া রয়েছে। কিন্তু মালিক তাদের কোন বকেয়াই পরিশোধ করছে না। তাদের বাড়ি ভাড়া বকেয়া পড়েছে। বাসায় খাবার নেই। অত্যন্ত অমানবিক দিন কাটাচ্ছে তারা। ফলে নিরুপায় হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ফ্যাক্টরির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন তারা।
শ্রমিকরে অভিযোগ, শন্তিপূর্ণ আন্দোলন চলাকালে আকস্মিকভাবে বেপজার আনসাররা শ্রমিকদের বেধড়ক লাঠি পেটা করে। এতে অনেক শ্রমিক আহত হয়। এই ঘটনার পর শ্রমিকরা আদমজী ইপিজেডের রেমি ফ্যাক্টরির সামনে সড়ক আবরোধ করে বিক্ষোভ করে।’
বেলা ২টায় ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল পুলিশ-৪ এর এসপি আইনুল হক এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শরিফ শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মালিকপক্ষের সাথে তাদের কথা হয়েছে। তারা শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে দিবে।’
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আরও জানায়, গত বছরের ১০ আগস্ট হঠাৎ দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করে ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেয় মালিক। সেই বন্ধ পরবর্তীতে ক্রমশ বৃদ্ধি করতে করতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধ হওয়ার পরেও শ্রমিকদের ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা করে বেতন পরিশোধ করে আসছিল। তার ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ বেতন দেয়নি।
কিন্তু মালিকপক্ষের কোন আশ্বাস না পেয়ে শ্রমিকরা দ্বিতীয়বারের মতো শনিবার সকালে পুনরায় আদমজী ইপিজেডের সামনে সড়ক অবরোধ করে বকেয়া পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
শ্রমিকরা বলেন, ‘আমাদের বকেয়া পাওনা কবে কখন দিবে আগে এটা বলেন।’
কিন্তু কোন সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে না পেরে নেতারা ফিরে যান। দুপুর দেড়টায় দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ যৌথভাবে এ্যাকশনে যায়। তারা লাঠিচার্জ ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম জানা যায়নি।
এদিকে ছাত্রভঙ্গ হয়ে শ্রমিকরা রেমি ফ্যাক্টরির সামনের সড়কে আগুন জ্বালিয়ে পুনরায় বিক্ষোভ করে। পরে পুলিশ সেখান থেকে শ্রমিকদের ধাওয়া দেয়। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। প্রতিবাদে শ্রমিকরা রেমি ফ্যাক্টরির সামনের রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশ ধাওয়া দিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেয় তাদের।
এরপর শ্রমিকরা সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ অফিসারের সামনে একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা-মেট্টো-গ-৩৯-০১৪৮) ভাঙচুর করে এবং কারের চালক নুর ইসলামকে মারধর করে আহত করে। পরে পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, ‘বেপজা ও শিল্প পুলিশ কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ বলেছে, ১৮ জানুয়ারি ১ মাসের বেতন পরিশোধ করবে। কিন্তু শ্রমিকরা মানছেন না।’
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৪-এর সিনিয়র এএসপি আইনুল হক জানান, ‘আমরা মালিকপক্ষ থেকে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন আদায় করে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
এআই/ এসএ/