উই’তে সেল করেই লাখপতি তানিয়া!
সাজেদুর আবেদীন শান্ত
প্রকাশিত : ০৩:৪২ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০২১ মঙ্গলবার
একমাত্র সন্তানের সঙ্গে তানিয়া
স্বপ্ন ছিলো উকিল তথা আইনজীবী হওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে দর্শনে অনার্স-মাস্টার্স-এর পাশাপাশি এলএলবি এবং এলএলএম সম্পন্ন করলেও হঠাৎ বিয়ে এবং স্বামী-সন্তান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় তার সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়, হয়ে যান একজন সুখী গৃহিণী। তবুও একটা শূন্যতা ও হতাশা থেকেই গৃহিণী থেকেই বনে যান লাখপতি ‘নন্দিনী’ উদ্যোক্তা।
বলছিলাম- রাজধানীর পুরান ঢাকায় জন্ম নেয়া তানিয়া আক্তারের কথা। বাবা মো. মানিক ব্যপারী ও মা আকলিমা বেগমের প্রথম সন্তান তানিয়া। তানিয়ারা চার বোন। দক্ষিণ মুহসেন্দী সরকারি স্কুল এবং দক্ষিণ মুহসেন্দী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তানিয়া। ইন্টারমিডিয়েট-এ ভর্তি হন ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে। কৈশোর থেকেই তানিয়ার স্বপ্ন ছিলো উকিল হওয়ার। সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এলএলবি (অনার্স) এবং এলএলএম সমপন্ন করেন প্রাইম ইউনিভার্সিটি থেকে। একইসঙ্গে দর্শন বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেন কবি নজরুল সরকারি কলেজে থেকে।
পড়াশোনা শেষ করে ঢাকা জজ কোর্টে প্রাকটিস শুরু করেন তানিয়া। দুই বছর প্রাকটিস করার পর হঠাৎ বিয়ে হয়ে যায়। তারপর তার একমাত্র সন্তানের জন্ম হলে সবকিছু ছেড়ে সংসার সন্তান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। যে কারণে তার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। হয়ে যান পুরোপুরি গৃহিণী। জন্ম পুরান ঢাকায় হলেও তিনি এখন খিলগাঁও দক্ষিণ গোড়ানের বাসিন্দা। স্বামী-সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকছেন তিনি।
উদ্যোক্তা হওয়ার গল্পে তিনি বলেন, ‘আট বছরের সংসার জীবনে স্বামী সন্তান নিয়ে আমি খুব সুখী। আমার চাওয়া পাওয়ার যথেষ্ট খেয়াল রাখেন আমার জীবনসঙ্গী। কিন্তু তারপরও নিজেকে শূন্য মনে হতো। নিজেকে অকর্মা মনে হতো। সব কিছু থাকার পরেও মনে হতো কি যেন নেই। গৃহিনী পদবীটা মোটেও আমার কাছে সুখকর মনে হতো না। নানা মানুষের ব্যঙ্গাত্মক কথাবার্তা মনে খুব কষ্ট দিতো। আর কখনোই আমার চাকরী পছন্দ ছিল না। তাই উদ্যেগের জীবনটাই বেছে নিয়েছি।’
তানিয়া বলেন, ‘উদ্যেগের শুরু ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে। আমার ছোট বোন মাহমুদা মুক্তাই আমাকে উই-তে যুক্ত করে। তখন প্রতিদিনই উই-এর পোস্ট দেখতাম কিন্তু কখনও গুরুত্ব দিইনি। ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে পোস্টগুলো পড়া শুরু করি। আমার ভালো লাগতে শুরু করে। কিছু একটা করার ইচ্ছা জাগে।’
নতুন স্বপ্ন নিয়ে তানিয়া বলেন, ‘আর এই ইচ্ছাটাই এক সময় স্বপ্ন হয়ে যায়। জুলাই মাস থেকে এক্টিভ হই উই-তে। তারপর জুলাইয়ের ১০ তারিখে ফেসবুকে বিজেনস পেইজ খুলি। যার নাম দেই ‘নন্দিনী’। নন্দিনীকে আমি প্রথমে জামদানি শাড়ি, মনিপুরী শাড়ি দিয়ে সাজাই। মাত্র ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে আমি আমার উদ্যেগের কাজ শুরু করি। এখান থেকেই আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরু। পরবর্তীতে সবার চাহিদার উপর ভিত্তি করে জামদানি থ্রি পিস নিয়ে কাজ শুরু করি’।
তিনি আরও বলেন, উইয়ের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, এত সুন্দর প্লাটফর্ম-এর জন্য। আমি আজ যতটুকু সফল হয়েছি একমাত্র উই-এর কারণে। এটা আমি কখনওই অস্বীকার করবো না যে, উই না থাকলে আমি দ্বিতীয়বার স্বপ্ন দেখতে পারতাম না এবং সে পথে চলতেও পারতাম না। শুধু উইতে সেল করে আমি লাখপতি হয়েছি।
তানিয়া আরও বলেন, আমার শাড়ি পড়তে ভালো লাগা থেকেই শাড়ি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু অনেকে আমাকে থ্রি পিস নিয়ে কাজ করার জন্য অনুরোধ করে। তাই থ্রি পিস নিয়ে কাজ শুরু করেছি। তাঁতির হাতের পরম মায়ায় বোনা জামাগুলো আমাকে দেশের ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। এখন আমার সিগনেচার পণ্য হয়েছে জামদানি থ্রি পিস। কারণ আমি নিজে তাঁতি ভাইদের দিয়ে কাস্টমাইজ করাই।
প্রেরণা প্রসঙ্গে তানিয়া বলেন, আমার কাজের প্রেরণা হলো- আমার একমাত্র ছেলে তানহিয়াত। ছয় বছরের ছেলেটা আমার খুব খুশি যে, তার মা কিছু একটা করে। সে অনেক হেল্প করে। বাসায় কেউ না থাকায় উদ্যোগের সব কাজে আমি তাকে সাথে নিয়ে যাই। সেও খুব উপভোগ করে আমার কাজগুলোকে। উদ্যোগের ভবিষ্যৎ আমার পেইজ নন্দিনীও আমার সন্তান।
ভবিষৎ পরিকল্পনার কথায় তিনি বলেন, ‘সবাই যেমন চায় সন্তান বড় হোক তেমনই আমিও চাই। আমার স্বপ্ন নন্দিনী একদিন ব্র্যান্ড হবে। ভবিষ্যতে নন্দিনীর জন্য শো রুম করতে চাই। যাতে সে নিজেকে ব্র্যান্ড হিসেবে আত্নপ্রকাশ করতে পারে’।
এনএস/