ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

আশ্রিত যুবকের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে কলেজছাত্রী ও তার মা!

মিরসরাই সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ০৬:৩০ পিএম, ১৮ জানুয়ারি ২০২১ সোমবার

বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেওয়ায় আশ্রিত যুবকের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে মিরসরাইয়ের এক কলেজ ছাত্রী ও তার মা। উপজেলার মিরসরাই সদর ইউনিয়নের আবুনগর গ্রামে ঘটেছে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা। 

ভুক্তভোগী ওই কলেজছাত্রী উপজেলার অধ্যাপক কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীতে অধ্যয়নরতা। চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গত ১১ জানুয়ারি বখাটে ইকবাল হোসেনকে (৩২) আসামি করে মামলা (নং ৩৫/২০) দায়ের করেছেন ওই শিক্ষার্থীর মা। 

আদালতে মামলা হলেও ইকবাল পুলিশের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ। একই গ্রামের মরহুম নুরুল আলমের ছেলে ইকবাল হোসেন মিরসরাই থানা পুলিশের সোর্স হিসাবে কাজ করে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করে আসছে বলে অভিযোগ এলাকার ভুক্তভোগীদের।

জানা গেছে, স্থানীয় আবুনগর গ্রামে মিঠাছড়া ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুর রউফের বাড়ীতে দীর্ঘদিন যাবৎ আশ্রিত ছিলো ভূমিহীন নুরুল আলমের পরিবার। গত বছর নুরুল আলমের পরিবার ওই বাড়িতে স্থায়ীভাবে ঘর করার চেষ্টা করলে বাঁধা দেন আবদুর রউফ। এসময় গ্রাম্য শালিসি বৈঠকে নুরুল আলমের পরিবারকে অনত্র চলে যাওয়ার বিনিময়ে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য আবদুর রউফকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী গত বছরের ডিসেম্বরে তিন ধাপে নুরুল আলমের পরিবারকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেন শিক্ষক আবদুর রউফ। 

টাকা পাওয়ার পর নুরুল আলমের পরিবার বাড়ি ছেড়ে দিলেও তার ছেলে বখাটে ইকবাল হোসেন আবদুর রউফের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছে। এরই জেরে গত ৫ জানুয়ারি শিক্ষক আবদুর রউফ-এর কলেজ পড়ুয়া দুই মেয়েকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দিয়ে যায় ইকবাল। সর্বশেষ গত ৯ জানুয়ারি দুপুরে আবদুর রউফের ঘরে ঢুকে তার মেয়েদের না পেয়ে তার স্ত্রীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে ইকবাল। এসময় তার চিৎকার শুনে বাড়ির আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ইকবাল পালিয়ে যায়।

এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুর রউফ বলেন, গ্যাংরিন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ২০০১ সালে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে তাঁর দুই পা কেটে ফেলা হয়। এরপর থেকে পঙ্গু হয়ে হুইল চেয়ারে ঘরবন্দী জীবনযাপন করছেন তিনি। স্ত্রী আর দুই মেয়েকে নিয়ে কোনওরকম জীবনপার করছি। জায়গার অভাবে থাকতে না পারায় আমি নুরুল আলমের পরিবারকে আমার বাড়িতে বিনা পয়সায় থাকতে দিই। সেটাই এখন আমার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। নুরুল আলমের ছেলে ইকবাল হোসেন আমার বাড়ি দখল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। সে আমার মেয়ে, স্ত্রীকে নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে। আমার মেয়ে এবং স্ত্রী ইকবালের নিয়মিত হুমকীতে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সে তাদেরকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দিচ্ছে। 

তিনি আরও জানান, ইকবাল সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী। সে নিজেকে পুলিশের সোর্স দাবী করে; তার বিরুদ্ধে আমরা কোনও আইনগত সহায়তা পাবো না মর্মে বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়াচ্ছে। আমার স্ত্রী বাদী হয়ে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তাকে আসামি করে মামলা করায় সে আমাদের ফাঁসানোর জন্য বিভিন্ন চক্রান্ত করছে। 

এ বিষয়ে ইকবাল হোসেন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি এই ধরনের কোনও হুমকি দেয়নি। বরং তাঁরা সন্ত্রাসী দিয়ে আমার মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে। 

মিরসরাই সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমরান উদ্দিন বলেন, ইকবাল হোসেন সাবেক শিক্ষক আবদুর রউফের পরিবারকে বিভিন্নভাবে হয়রানী করছে। আমাকে জানানোর পর আমি থানায় অভযোগ দেওয়ার জন্য বলেছি। 

তিনি আরও বলেন, ইকবাল নিজেকে পুলিশের সোর্স দাবী করে নির্বিঘ্নে মাদক ব্যবসা করে আসছে। সে বখাটে ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির ছেলে। 

মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুর রউফের পরিবারকে হুমকির বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এনএস/