ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

৪৯ শিশুকে জেলে পাঠানোর পরিবর্তে বই উপহার!

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৭:৩৩ পিএম, ২০ জানুয়ারি ২০২১ বুধবার

সুনামগঞ্জে বিচারাধীন ৩৫টি মামলায় ৪৯ জন শিশুকে সংশোধনের জন্য কারাগারের পরিবর্তে বই উপহার দিয়ে বাবা-মায়ের কাছে পাঠানোর আরও একটি ব্যতিক্রমী রায় দিয়েছেন সুনামগঞ্জ শিশু আদালত। বুধবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনাল এবং শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই রায় দেন।

মুক্তি পাওয়ার পর আদালতের দেওয়া শর্ত প্রতিপালন করবে বলেই জানায় শিশুরা। এর আগে আরও ১৪ জন শিশুকে সংশোধনের জন্য প্রবেশনে মুক্তি দিয়ে পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন এই বিচারক। সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট নান্টু রায় এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

আদালত সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন সময়ে দায়ের করা ৩৫টি মামলায় ওই ৪৯ জন শিশুকে দণ্ডবিধির ৩২৩ ধারায় অভিযোগ এনে মামলায় জড়ানো হয়েছিল। ছোট একটি অভিযোগে এসব শিশুদের আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হতো। ফলে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে শিক্ষাজীবন ব্যবত হয়। স্বাভাবিক জীবনে বেড়ে ওঠা হুমকির মধ্যে পড়ে। ওই ৪৯ জন শিশুকে দীর্ঘমেয়াদী ঝামেলা থেকে মুক্তি দিয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন আদালত। তাদেরকে সংশোধনের জন্য ১০টি শর্ত দিয়ে কারাগারের পরিবর্তে পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়।

সংশোধনের শর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- একশ মনীষীর জীবনী গ্রন্থ পাঠ, বাবা-মাসহ গুরুজনদের আদেশ মেনে চলা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, ২০টি করে গাছ লাগানো, মাদক থেকে দূরে থাকা, ভবিষ্যতে কোনওপ্রকার অপরাধের সাথে নিজেকে না জড়ানো ইত্যাদি।

একইসঙ্গে মুক্তি পাওয়ার পরবর্তী এক বছর পর্যন্ত সমাজসেবা কার্যালয়ের একজন প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে থাকবে এই শিশুরা।

সুনামগঞ্জ জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা মো. শফিউর রহমান বলেন, আদালত নিদের্শনা মোতাবেক ওইসব শিশুকে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে যথাযথ তত্ত্বাবধান ও সহযোগিতা প্রদান করা হবে। আদালত থেকে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যাতে তারা প্রতিপালন করে সেই বিষয়গুলো মনিটরিং করা হবে।

সুনামগঞ্জ জজ আদালতের আইনজীবী আইনুল ইসলাম বাবলু বলেন, অনেক সময় কোনও কারণ ছাড়াই শিশুদের মামলায় জড়ানো হয়। আদালত যে রায় দিয়েছেন সেটা ব্যতীক্রমী। ফলে যে কোনও মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার আগে শিশুদের বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তারা আরও গভীরভাবে তদন্ত করে দেখবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এনএস/