ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৯ ১৪৩১

পাঁচটি কাজ করলে ঢাকা হবে স্বাস্থ্যসম্মত শহর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:০০ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০২১ সোমবার

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকাকে স্বাস্থ্যসম্মত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে মহাপরিকল্পনা দরকার।

সৌদি আরবের মদিনা স্বাস্থ্যসম্মত শহর হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতি পেয়েছে, এরকম একটা খবর অনেক পাঠকের আগ্রহ তৈরি করেছে।

বলা হচ্ছে, স্বাস্থ্যকর শহর হওয়ার সব মানদণ্ড অর্জন করার কারণে শহরটিকে এই স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে গিয়ে জানা যায় যে, বর্তমানে বিশ্বের হাজারো শহর সংস্থাটির স্বাস্থ্যসম্মত শহর নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত।

সবশেষে মদিনা শহরটি এই সংস্থাটির স্বীকৃতি পায় বলে সৌদি আরবের সরকারি সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়। এই নেটওয়ার্কের আওতায় শহরগুলোর মেয়র এবং মিউনিসিপালিটি শহরের মানুষের জীবনযাত্রা উন্নয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

অন্যদিকে বিশ্বের অনেক নেতিবাচকের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা, যেটির জনঘণত্ব রেকর্ড পরিমাণ। ঢাকার দূষণ নিয়েও কথা হয় নানা সময়ে। সোয়া কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তরপাশ থেকে শুরু করে উত্তরার উত্তরপাশ বা টঙ্গী খাল পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ৩৬০ বর্গকিলোমিটারের এই শহরটিকে কি স্বাস্থ্য ও পরিবেশের মানদণ্ডে আদর্শে পরিণত করার আর সুযোগ আছে?

নগর পরিকল্পনাবিদ প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলছেন, এতো বিশাল সংখ্যক মানুষের বাস যে শহরে সেটিকে স্বাস্থ্যসম্মত করে গড়ে তুলতে হলে মহা-পরিকল্পনা দরকার। তিনি প্রতিকারমূলক ও প্রতিষেধকমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছেন।

তবে ঢাকাকে মদিনার মত স্বাস্থ্যসম্মত শহরে পরিণত করার জন্য মোটা দাগে ৫টি সমস্যা সমাধাণের উপর জোর দিচ্ছেন প্রফেসর ইসলাম:

১. বায়ু দূষণ:
ধূলাবালি, ধোঁয়া ইত্যাদির কারণে ঢাকার বাতাসকে অত্যন্ত দূষিত বলে ধরা হয়। শহরের মধ্যে সারা বছরই নানা ধরণের নির্মাণ কাজ এবং যানবাহন চলাচল করার কারণে বায়ু দূষণ বেশি। তবে এই দূষণ দূর করা সহজসাধ্য নয় বলে মনে করেন প্রফেসর ইসলাম।

কারণ একদিকে যেমন চাইলেই নির্মাণ কাজ বন্ধ করা যায় না, ঠিক তেমনি নির্মাণ কাজ করলেও ধুলা উড়বে না এমন কোন প্রযুক্তিও সহজলভ্য নয়। আর দূষিত বাতাসের কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

২. পানি দূষণ:
রাজধানী চারদিকের যে পানির উৎস রয়েছে সেগুলো একদিকে যেমন দূষিত অন্যদিকে এই জলাশয়গুলো নানা ধরণের রোগ-বালাই ছড়িয়ে পড়ে বলেও মনে করেন প্রফেসর ইসলাম।যার মধ্যে পানিবাহিত নানা রোগ ছাড়াও উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মশা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের বিস্তার।

তবে এটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য বলে মনে করেন তিনি।

নজরুল ইসলাম বলেন, মশার বিস্তার কমাতে হলে আশপাশ পরিষ্কার এবং ডোবা নালা পরিষ্কার ও বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়া ঢাকাতে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব থাকলেও সেটি আগের তুলনায় কমে এসেছে বলে জানান তিনি।

৩. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা:
ঢাকায় বর্জ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা অনেক পুরনো। যারা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করেন তাদের যেমন স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই, ঠিক তেমনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয় যত্রতত্র। পচনশীল, কঠিন কিংবা নবায়নযোগ্য বর্জ্য আলাদাভাবে ব্যবস্থাপনার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয় না।

বর্জ্য অপসারণ ও ব্যবস্থাপনার সাথে জনস্বাস্থ্য জড়িত।

৪. সবুজ পরিবেশ:
প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, মানুষের শারীরিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড যেমন ব্যায়াম বা হাঁটার জন্য সবুজ পরিবেশ যেমন পার্ক, ফুটপাত থাকার নিয়ম থাকলেও ঢাকায় এর ব্যবস্থা খুবই কম।

৫. শব্দ দূষণ:
বাংলাদেশে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে নানা ধরণের নীতিমালা থাকলেও সেগুলোর প্রয়োগ নেই বলে জানান নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। যার কারণে শ্রবণশক্তি হ্রাস পাচ্ছে।

ডাব্লিউএইচও বলছে, স্বাস্থ্যসম্মত শহর শুধু একটি শহরের স্বাস্থ্যসেবার কাঠামোর উপর নির্ভর করে না। বরং শহরটির পরিবেশের উন্নয়নের অঙ্গীকার এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের আগ্রহের উপরও নির্ভর করে।

স্বাস্থ্যসম্মত শহরের এই ধারণা স্বাস্থ্য ও সেবার সমতা নিশ্চিতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং অংশগ্রহণমূলক শাসনের অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। সেবার অবকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার বলে মনে করেন প্রফেসর নজরুল ইসলাম।

প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা বাংলাদেশের নগর এলাকায় তেমন ভাল না। প্রয়োজনের তুলনায় হাসপাতাল বা হেলথ সার্ভিস সেন্টারের সংখ্যা কম। সেবা মোটামুটি মানের। অনেক বেসরকারি সংস্থা এগুলো নিয়ে কাজ করলেও এর প্রধান দায়িত্ব সরকারের বলে মনে করেন তিনি। সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসি