ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন কাল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৫৬ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০২১ মঙ্গলবার

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ষষ্ঠ পরিষদের নির্বাচন বুধবার। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৭৩৫ কেন্দ্রে একটানা ভোটগ্রহণ হবে। ভোটে একজন মেয়র, ৪১ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৪ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। এবার মেয়র পদের জন্য ৭ জনসহ মোট প্রার্থী ২৩২ জন। ভোটার সংখ্যা সর্বমোট ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন।

নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাত প্রার্থী। এর মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত এম রেজাউল করিম চৌধুরী (নৌকা), বিএনপি মনোনীত ডা. শাহাদাত হোসেন (ধানের শীষ), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মাওলানা এমএ মতিন (মোমবাতি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর (আম), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ (চেয়ার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম (হাতপাখা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী (হাতি)।

১৪ সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী রয়েছেন ৫৭ জন। সাধারণ ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩৯ ওয়ার্ডে। ১৮নং পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর হারুনুর রশিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। আর ৩১ নং আলকরণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিম মৃত্যুবরণ করায় ওই পদে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। তবে ওই ওয়ার্ডে মেয়র ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ হবে। ৩৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী হোসেন মুরাদ ইন্তেকাল করলে সেখানে আবদুল মান্নানকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে ৩৯ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ১৬৮ প্রার্থী।

এদিকে, নগরীর ৪৩৯ ভোট কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ ও ৩০৬ টিকে সাধারণ হিসেবে চিহিৃত করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ১৬ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। এছাড়া ২৫ প্লাটুন বিজিবি, ৪১ টি র‌্যাবের টিম, ১৪০ স্ট্রাইকিং ফোর্স টিম এবং ৪১০টি মোবাইল টিম থাকবে। সব মিলিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবেন ১৪ হাজার ৩৭০ জন সদস্য।

এছাড়া, ভোট গ্রহণ ও গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দায়িত্ব পালন করবেন ৬৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ২০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে, বিজিবি প্লাটুন প্রতি একজন, র‌্যাব সিপিসির সঙ্গে তিন জন করে ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন।

চসিক নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। এজন্য প্রায় সাড়ে ১১ হাজার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুর থেকে নির্বাচনী কর্মকর্তারা ইভিএম মেশিন ও ভোটের সামগ্রী নিয়ে কেন্দ্রে যাওয়া শুরু করেছেন।

উল্লেখ্য, পঞ্চম নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ শেষের আগে গত বছরের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে দলীয় মনোনয়ন পর্যন্ত সবই সম্পন্ন হয়। করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় মাত্র কয়েক দিন আগে স্থগিত করা হয় নির্বাচন। এ অবস্থায় ৫ আগস্ট পঞ্চম পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৪ আগস্ট নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে প্রশাসক হিসেবে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়। সুজন ৬ আগস্ট দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁর দায়িত্ব পালনের কথা রয়েছে। পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হওয়ায় নতুন করে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ হয় এ বছরের ২৭ জানুয়ারি।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে ৭৩৫টি ভোট কেন্দ্রে বুথ ৪ হাজার ৮৮৬টি। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন এবং মহিলা ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন। ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন ১৬ হাজার ১৬৩ জন কর্মকর্তা। সকলকে ইভিএম বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ৫ হাজার ৯০২ জন এবং পোলিং অফিসার ১০ হাজার ২৬৮ জন।

চসিক নির্বাচনে এবার প্রথমবারের মতো সব কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোটের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৫৭২ ইভিএম। চার হাজার ৮৮৯ টি বুথের জন্য থাকবে একটি করে ইভিএম। এছাড়া দুইটি কক্ষের জন্য একটি করে ইভিএম অতিরিক্ত রাখা হবে। আর ঝুঁকি এড়ানোর জন্য বিশেষ ব্যাকআপ রাখা হচ্ছে।

সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ইভিএমের কন্ট্রোল প্যানেলের মাধ্যমে ভোটারকে ইলেক্ট্রনিক ব্যালট ইস্যু করবেন। ভোটার নম্বর অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে ভোটার শনাক্ত করা হবে। তারপর আঙ্গুলের ছাপের মাধ্যমে ভোটার শনাক্ত করার পর ভোটারের ছবিসহ পরিচয় পর্দায় ভেসে উঠবে। এরপর গোপন কক্ষে একজন ভোটার মেয়র, সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ তিনটি পদে ভোট প্রদান করতে পারবেন। ব্যালট ইউনিটে প্রার্থীর নাম ও প্রতীকের ডান পাশে সাদা বোতামে চাপ দিয়ে ভোটার তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। পরে সবুজ বোতাম চেপে ভোট নিশ্চিত করবেন।

ভোট গ্রহণ শেষে প্রতিটি কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমন্যাসিয়াম থেকে। ইতিমধ্যে পুরো স্টেডিয়াম এলাকার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন।
সূত্র : বাসস
এসএ/