ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি 

নওগাঁ প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ০৫:০৯ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০২১ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৫:১৩ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০২১ মঙ্গলবার

ছবি- আ’লীগের নির্মল কৃষ্ণ, বিএনপির নজমুল হক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল। (বাম পাশ থেকে)

ছবি- আ’লীগের নির্মল কৃষ্ণ, বিএনপির নজমুল হক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল। (বাম পাশ থেকে)

নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরিতে প্রচারণা এখন তুঙ্গে। তৃতীয় ধাপে আগামী ৩০ জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিশ্রুতি আর প্রচারে পিছিয়ে নেই কোন প্রার্থী। পুরো পৌরসভাজুড়ে ব্যানার, পোস্টার ও লিফলেটের সমারোহ। 

প্রচন্ড শীত ও করোনার প্রভাবকে পিছনে ফেলে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন ভোটারের বাড়ি বাড়ি। পাড়া-মহল্লা, চায়ের স্টলে আড্ডাসহ সবখানে এখন নির্বাচনী আলোচনা। পৌরবাসীর মুখে মুখে নির্বাচনই এখন একমাত্র আলোচনার বিষয়। 

প্রার্থীরা ভোটারদের সঙ্গে করছেন কুশল বিনিময়, উঠান বৈঠক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের সঙ্গে মত বিনিময়। নিজেদের তুলে ধরতে লিফলেট ছাপিয়ে প্রচার করছেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে নিজেদের জানান দিচ্ছেন প্রার্থীরা। আবার পৌরসভার উন্নয়নে নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। 

এদিকে নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্মল কৃষ্ণ সাহা, বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পৌর মেয়র নজমুল হক সনি, স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন নওগাঁ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল, জাতীয় পাটি থেকে লাঙ্গল প্রতীকে ইফতারুল ইসলাম বকুল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী হাত পাখা নিয়ে লড়ছেন আতিকুর রহমান। তবে মেয়রের দাবিদার ৫ প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও ঘুরে ফিরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর নাম সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে। এতে লড়াই হবে ত্রিমুখী। 

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নওগাঁ জেলা আওয়ামীগের সহ-সভাপতি নির্মল কৃষ্ণ সাহা শুরু থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক উত্তরবঙ্গের জেনারেল প্রয়াত জননেতা আব্দুল জলিলের আদর্শে গড়া ও আস্থাভাজন এই নেতা মেয়র প্রার্থী হওয়ায় সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে সাড়া জেগেছে। 

এদিকে প্রবীণ এই নেতাকে মেয়র করার লক্ষ্যে প্রতিদিন নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে গণসংযোগ, পথসভা, মতবিনিময় করছেন। পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন সাধারণ মানুষদের কাছে।

মেয়র প্রার্থী নির্মল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত জননেতা আব্দুল জলিল নওগাঁ পৌরসভাকে একটি আধুনিক পৌরসভায় পরিণত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নিয়তির বিধানে তিনি আমাদের ছেড়ে পরপারে চলে গেছেন। তার স্বপ্নও মাটি হয়ে গেছে। নওগাঁ পৌরসভা প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়ার পরেও পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তা চলাচলের অযোগ্য বিশেষ করে ড্রেনেজ ব্যবস্থা একেবারে অচল। এর অন্যতম কারণ নওগাঁর পৌর মেয়র অন্য মতাদর্শের হওয়ার ফলে সহযোগিতার অভাব। এই প্রথম দল থেকে আমাকে মনোনীত করা হয়েছে। তাই নওগাঁ পৌরবাসী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জননেতা আব্দুল জলিলের স্বপ্ন আধুনিক পৌরসভা গঠনে সহায়তা করবেন এবং দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সার্বিক উন্নয়নে আওয়ামীলীগ সরকারের বিকল্প নেই। তার প্রমাণ দেশবাসী পেয়েছে। যদি আমি জয়ী হই তবে নওগাঁ পৌরসভাকে মাদক, সন্ত্রাসমুক্ত, আধুনিক ডিজিটাল পরিকল্পিত মডেল নগরী হিসাবে গড়ে তোলা, বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে নওগাঁর ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনাসহ সর্বোপরি ঐতিহ্য, বাণিজ্য ও পর্যটন নির্ভর নান্দনিক পৌরসভা হিসেবে পৌরবাসীকে উপহার দিব।’

এদিকে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী নজমুল হক সনি ধানের শীষ প্রতীকে ৩৪ হাজার ৮৮৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়ে মেয়র পদে দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত হন এবং তৎকালীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দেওয়ান ছেকার আহম্মেদ শিষাণ ২২’শ ভোটে পরাজিত হন। এবারেও নজমুল হক সনি বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নির্বাচন প্রসঙ্গ নিয়ে বিএনপি প্রার্থী নজমুল হক সনি বলেন, ‘আমি জনগণের ভোটে পর পর দু’বার নির্বাচিত পৌর মেয়র। পৌরবাসীর দোয়া ও সমর্থনের কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। ’

আসন্ন পৌর নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘পৌরবাসীকে আধুনিক ও মানসম্মত পৌরসভা উপহার দিতে মহা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাস্তা নির্মাণ, রাস্তা প্রসস্থকরণ, ড্রেন নির্মাণ কাজকে তরান্বিত করা, পৌরসভার সকল রাস্তার পাশাপাশি আরসিসি ড্রেন নির্মাণ, পৌর এলাকাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় নিয়ে আসাসহ নানামুখী উন্নয়ন কার্যক্রম করেছি। সভার উন্নয়নে যে সব কাজ করেছি এগুলোর কাজের জন্য প্রিয় পৌরবাসী আমাকে পুনরায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। আমি যদি আবারও জয়ী হই তবে নওগাঁ পৌরসভাকে সার্বিকভাবে একটি উন্নত পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলবো সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে। আমি আশা করছি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে আশা করি।’

এদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল পৌরসভা নির্বাচন করবেন বলে অনেক আগে থেকেই সমাজের নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। ইতিমধ্যে শহরের কোমাইগাড়ীতে প্রয়াত জননেতা আব্দুল জলিল নামে একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন, পৌর একালায় দুটি মসজিদ নির্মাণ, নওগাঁ সদর হাসপালে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার মেশিন প্রদান, একটি ময়লা ফেলার গাড়ি প্রদান, অস্বচ্ছল ও দুস্থ মহিলাদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে পৌর এবং নওগাঁ সদর উপজেলার ৫০০ জনকে সেলাই মেশিন প্রদান, নওগাঁ পৌর এলাকার বিভিন্ন স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগা ও মন্দিরের উন্নয়নকল্পে বিভিন্ন সময় অনুদান প্রদানের কথা উল্লেখ ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল বলেন, ‘ভোটারদের কাছে আমার প্রতাশ্যা প্রতীক না, ব্যক্তি দেখে ভোট দিবেন। আমি নির্বাচিত হলে সবার আগে প্রমাণ করবো আমি এই পৌরবাসীর লোক। আমার অফিস হবে আপনাদের অফিস। আর পৌর ভবন হবে আপনাদের বাড়ি। আমার সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রিয় ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন বলে আমি আশাবাদী।’

নওগাঁ সদর উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে ছোট যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। ১৯৬৩ সালে নওগাঁ পৌরসভা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৮৪ সালে এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা পায়। ১৯৮৭ সালে মূল শহরের সঙ্গে আরও শতাধিক মহল্লাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে এর আয়তন ৩৮ দশমিক ৩৬ বর্গ কিলোমিটার। 

নওগাঁ পৌরসভায় মোট ৯টি ওয়ার্ড ও ৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড। নির্বাচনে মোট ৪১টি কেন্দ্রে ৩৩২টি বুথে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নওগাঁ পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ২৪০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫৭ হাজার ২৩৯ জন এবং নারী ভোটার ৫৯ হাজার ১ জন। 

নওগাঁ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান জানান, ‘নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে এরইমধ্যে প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫৭ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।’

এআই//