ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

সফলরা যা করে না

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:৪৩ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২১ বুধবার | আপডেট: ০৯:১৪ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২১ বুধবার

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ গবেষণার পর বলেছেন, একজন প্রোগ্রামার যেভাবে কম্পিউটারকে পরিচালিত করে, তেমনি মন মস্তিষ্ককে পরিচালিত করে। মস্তিষ্ক হচ্ছে হার্ডওয়্যার আর মন হচ্ছে সফটওয়্যার। নতুন তথ্য ও নতুন বিশ্বাস মস্তিষ্কের নিউরোনে নতুন ডেনড্রাইট সৃষ্টি করে। নতুন সিন্যাপসের মাধমে তৈরি হয় সংযোগের নতুন রাস্তা। বদলে যায় মস্তিষ্কের কর্মপ্রবাহের প্যাটার্ন। মস্তিষ্ক তখন নতুন দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে নতুন বাস্তবতা উপহার দেয়।

নতুন বাস্তবতা ভাল হবে না খারাপ হবে, কল্যাণকর হবে না ক্ষতিকর তা নির্ভর করে মস্তিষ্কে দেয়া তথ্য বা প্রোগ্রাম-এর ভাল-মন্দের উপর। কল্যাণকর তথ্য ও বিশ্বাস কল্যাণকর বাস্তবতা সৃষ্টি করে আর ক্ষতিকর তথ্য বা বিশ্বাস ক্ষতিকর বাস্তবতা উপহার দেয়।

তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, জীবনের নতুন বাস্তবতার চাবিকাঠি হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি বা নিয়ত বা চিন্তা বা স্বপ্ন। সাধারণত যারা অসুখী বা হতাশায় ভোগে বেশি তারা নেতিবাচক চিন্তা বেশি করে। তাদের জীবনের কোনো স্পস্ট লক্ষ্য নেই। তারা কোনো পরিকল্পনা করতে পারে না। ফলে ব্যর্থ হয়। পরিণামে আরো বেশি হতাশায় ভোগে। নেতিবাচকতার শৃঙ্খলেই আবর্তিত হয় তাদের জীবন। জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে আপনাকে তাই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। আপনি কী বলেন আর কী ভাবেন তার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।

আপনি কি আত্মবিশ্বাসী? আপনার যা আছে তা নিয়ে কি আপনি কৃতজ্ঞ? আপনার ভবিষ্যৎ নিয়ে কি আপনি আশাবাদী? যদি না হয়, তাহলে আপনাকে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। ইতিবাচক চিন্তা করুন। এখন থেকে আপনি প্রতিনিয়ত কি শব্দ ব্যবহার করছেন সে ব্যাপারে সচেতন হোন।

আপনি কি ভাবেন, কি বলেন আর আপনাকে কি বলা হয় তা বিশ্লেষণ করুন। আপনার কথাবার্তা থেকে সকল নেতিবাচক শব্দ ও বাক্য বাদ দিন। কোনো নেতিবাচক শব্দ মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলে সাথে সাথে 'তওবা তওবা' বা 'বাতিল বাতিল' বলুন। নেতিবাচক শব্দটিকে বাতিল করে দিন।

প্রতিদিন অন্তত দশবার বলুন, 'অমূলক ভয়-ভীতি, নেতিবাচক চিন্তা ও কথার প্রভাব থেকে আমি সবসময় মুক্ত থাকব।' নেতিবাচক কথা হঠাৎ উচ্চারিত হলে ইতিবাচক কথা দিয়ে বক্তব্য শেষ করুন। ইতিবাচক কথাই আপনার জীবনে ইতিবাচক ফল আনতে সক্ষম।

অন্যের সাহায্যের অপেক্ষায় থাকা: আপনার অগ্রগতির পথে একটা বড় বাধা হতে পারে অন্যের সাহায্যের অপেক্ষায় থাকার মানসিকতা। বেশিরভাগ মানুষের অবস্থা আসলে একই রকমই। তারা ভাবে অমুকে তাকে সাহায্য করবে। অমুক একটু দেখলে বোধ হয় তার অবস্থা এরকম হতো না। তার তো কেউ নেই, তাই তার হবে না। বা তারা তাদের ব্যর্থতার জন্যে বাহ্যিক অবস্থাকে দায়ী করে। কিন্তু সফল মানুষেরা তাদের নিজেদের দায়িত্ব নিজেরা নেয় এবং অবস্থা বদলাবার জন্যে নিজেরা উদ্যোগ নেয়।

তারা বিশ্বাস করে প্রতিকূলতা যতই থাকুক সেটাকে তারা অতিক্রম করতে পারবে। অন্যদের অপেক্ষায় না থেকে তারা নিজেরাই শুরু করে দেয়। কাজেই আপনার ব্যর্থতার কারণ আপনি নিজেই খুঁজে দেখুন। দেখুন বসের সাথে ভুল বোঝাবুঝি নিরসনে আপনি নিজে কী উদ্যোগ নিতে পারেন? বার বার কি আপনি একই ভুল করছেন? কাজ না করে কাজের প্রস্তুতি নিতে গিয়েই কি সময় নষ্ট করে ফেলছেন?

অলীক কল্পনায় ভেসে বেড়ানো: মানুষের অগ্রগতির পথে একটা বড় বাধা হলো জীবনের একটা বড় সময় সে কাটায় অলীক কল্পনায় ডুবে থেকে। যে কারণে বাংলায় একটা প্রবাদই আছে, 'ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা'। স্বপ্নে সে অনেক রাজা-উজির মারে কিন্তু বাস্তবে সেই অফিসের সেকেন্ড ক্লাস কেরানি। ফাইলে কলম পিষে বা দলিল নকল করেই কেটে যায় সারাজীবন। জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে অলীক কল্পনা নয়, দিবাস্বপ্ন নয়, প্রয়োজন হলো মনছবি। অর্থাৎ বাস্তবতার নিরিখে স্বপ্ন দেখা এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নে পরিশ্রম করা। মনছবি আর দিবাস্বপ্নের মধ্যে পার্থক্য হলো দিবাস্বপ্ন আপনাকে বাস্তববিবর্জিত একধরনের সুখকল্পনায় বিভোর রাখে এবং বাস্তবে কোনো কর্মতৎপরতা সৃষ্টি করে না।

অন্যদিকে মনছবি হলো মনের পর্দায় গভীর বিশ্বাস আর একাগ্র মনোযোগে লালিত সাফল্যের ছবি। অর্থাৎ আপনি যা হতে চান বা পেতে চান তা প্রথমত চাওয়া, 'পাবো' বলে বিশ্বাস করা এবং 'পাচ্ছি' বলে অনুভব করার নাম মনছবি। ইতিহাসে সফল মানুষরা কখনোই বিরাজমান অবস্থাকে মেনে নিতে পারেন নি, অন্যের সাফল্য দেখে বিস্মিত হন নি; বরং বিশ্বাস করেছেন যে বিস্ময় সৃষ্টি করার শক্তি তার নিজের মধ্যেই রয়েছে। পরিবর্তনের ক্রমাগত স্বপ্ন তাদের প্রেরণা যুগিয়েছে জীবন বদলাতে, নতুন বাস্তবতা গড়তে। মনছবি শুধু আশা নয়, মনছবি হলো বিশ্বাস ও কর্মে লালিত ভবিষ্যতের বাস্তবতা।

সাফল্যের পথে আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হলো শর্টকাট খোঁজা। অর্থাৎ সে চায় অল্প আয়াসে কীভাবে পাওয়া যায়, পরিশ্রম না করে ফোকটে কীভাবে কামানো যায়। ফলে এরা প্রতারক-চালবাজদের কথা দ্বারা সহজেই প্রভাবিত হয় যারা মিষ্টিকথার জাল বুনে মানুষের এই লোভাতুর স্বভাবের সুযোগ নেয়।

সুতরাং ফোকটে পাওয়ার প্রত্যাশা করবেন না। ফোকটে যা পাওয়া যায় তা কখনো নির্ভেজাল হয় না। এমনকি ঘটনাচক্রে আপনি যদি পেয়েও যান আপনি তা ধরে রাখতে পারবেন না।

বিবিসি একবার মিলিয়ন ডলার লটারি জিতেছে এমন বেশ কয়েকজনকে নিয়ে একটা জরিপ করেছিল টাকা পাওয়ার পর তাদের কার অবস্থান কেমন সেটা যাচাইয়ের জন্যে। তারা দেখল, লটারি বিজয়ী অধিকাংশই আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। পুরস্কারের এত বিপুল অর্থও তাদেরকে সাময়িক কিছু বিলাস-ব্যসনের যোগান ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে নি।

ভুল থেকে না শেখা

একজন সফল মানুষ যে ব্যর্থ হন না, তা নয়। কিন্তু তিনি তার প্রতিটি ব্যর্থতা থেকে শেখেন। ব্যর্থতা তাকে হতোদ্যম না করে নতুনভাবে, নতুন কৌশলে কাজ করার উদ্দীপনা যোগায়। আর সাধারণ মানুষ ভুল থেকে শেখে না। একই ভুল বারবার করে।

অধিকাংশ মানুষের বৃত্ত হলো তারা একই ভুল বার বার করে। যেমন, দৈনন্দিন জীবনেও সে একই ভুল অভ্যাস, আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গিরই পুনরাবৃত্তি করে এবং সমস্যায় পড়ে। যেমন, স্বামী-স্ত্রী হয়তো রাগারাগি বা ঝগড়া করছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এই ঝগড়া, মনোমালিন্য একই ইস্যু নিয়ে, একই প্যাটার্নে।

আবার একজন ছাত্র/ছাত্রী পরীক্ষায় খারাপ করছে হয়তো অমনোযোগের কারণে, সময় নষ্ট করার কারণে বা বিশেষ কোনো ভুলের কারণে। ভালো রেজাল্ট করতে চাইলেও এই ভুলগুলো সে শোধরাচ্ছে না।

আবার কেউ হয়তো সময় মেনে চলে না। এর জন্যে অনেক রকম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লেও যে কারণগুলোর জন্যে তার দেরি হয় সে কারণগুলো সে দূর করছে না। এবং বারবার সময় মতো কাজ না করার ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

কেউ হয়তো বার বার প্রেমে পড়ছে এবং দুর্ভোগে পড়ছে। কিন্তু কিছুদিন পরই সে একই ধরনের ছেলে বা মেয়ের পাল্লায় একই রকমভাবে প্রতারিত হয়ে প্রেমের দুর্ভোগে পতিত হচ্ছে। কিন্তু বুদ্ধিমান মানুষ ভুল থেকে শেখে এবং কার্যকারণ বুঝতে পারে যে কেন এটা হচ্ছে? ভুলগুলো বিশ্লেষণ করে সমস্যাকে তারা উৎপাটন করে মূল থেকে। আর এর জন্যে মেডিটেশন হলো সবচেয়ে ভালো উপায়। মেডিটেশনের গভীর তন্ময়তায় সে তার ভুল বুঝতে পারে, শোধরাতে পারে। বেরুতে পারে ভুলের বৃত্ত থেকে।

এসি