ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

নওগাঁয় বোরো ধান চাষাবাদে চলছে উৎসব

নওগাঁ প্রতিনিধি: 

প্রকাশিত : ০৮:০৯ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২১ বুধবার

নওগাঁয় একদিকে বইছে পৌর নির্বাচনের উৎসবের আমেজ অন্যদিকে ফসলের মাঠে বোরো চাষাবাদেও চলছে মহোৎসব। খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা নওগাঁর মাঠে মাঠে এখন বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। প্রচন্ড শীত আর ঘন কুয়াশা কাবু করতে পারেনি তাদের। আমন ধানের অভাবনীয় মূল্য পাওয়ায় ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে কৃষকরা ইরি-বোরো ধান চাষাবাদে ঝুঁকে পড়েছেন। জমিতে পানি সেচ, বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন এবং সেই চারা তৈরী জমিতে রোপনের কাজ চলছে পুরোদমে। এসব মাঠে কেবলই কলের লাঙ্গলের শব্দ, কোথাও গরুর পায়ে পানির ঝপ ঝপ শব্দ, কৃষান কৃষানীদের গুন গুন গানে মুখরিত। তাই লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশী পরিমান জমিতে এবার বোরো চাষ হবে বলে স্থানীয় কৃষি বিভাগ দাবি করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ শামসুল ওয়াদুদ জানিয়েছেন যদিও চলতি বোরো মওসুমে জেলায় বোরো চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৬শ ২৫ হেক্টর জমিতে। বিগত আমন মওসুমে কৃষকরা ধানের নায্য মুল্য পাওয়ার ফলে বোরো মওসুমে এই লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ৮৫ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চারা রোপন সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মওসুমে কৃষকরা হাইব্রীড এবং উন্নত ফলনশীল উফশী জাতের ধান রোপন করছেন। হাইব্রীড জাতের মধ্যে সিনজেনটা-১২০৩ ও  ছক্কা এবং উফশী জাতের মধ্যে কাটারী, ব্রি-ধান ২৮, ব্রি-ধান ২৯, ব্রি-ধান ৫০, ব্রি-ধান ৮১, জিরাশাইল ইত্যাদি ধান রোপন করছেন জেলার কৃষকরা। 

কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে চলতি মওসুমে জেলায় মোট ১ লাখ ৮০ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রীড জাতের ১১ হাজার ৭১০ হেক্টর ও ১ লাখ ৬৮ হাজার  ৯১৫ হেক্টর উন্নত ফলনশীল উফশী জাতের। চালের আকারে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫৮ হাজ্রা ৬৯৬ মেট্রিক টন। এর মধ্যে হাইব্রীড জাতের ৬২ হাজার ৭৬৬ মেট্রিক টন এবং উফশী জাতের ৬ লক্ষ ৯৫ হার্জা ৯৩০ মেট্রিক টন।  

বোরো চাষের উপজেলা ওয়ারী আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে নওগাঁ সদর উপজেলায় ১৭ হাজার ৯৫৫ হেক্টর, রানীনগরে ১৮ হাজার ২০০ হেক্টর, আত্রাইয়ে ১৮ হাজার ৮৮৫ হেক্টর, বদলগাছিতে ১০ হাজার ৯৯০ হেক্টর, মহাদেবপুরে উপজেলায় ২৬ হাজার ৬০০ হেক্টর, পতœীতলায় ১৯ হাজার ৩৯০ হেক্টর, ধামইরহাটে ১৬ হাজার ৫ হেক্টর, সাপাহারে ৫ হাজার ৪৫৫ হেক্টর, পোরশায় ৮ হাজার ৪৫ হেক্টর, মান্দায় ১৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর ও নিয়ামতপুর উপজেলায় ১৯ হজার ২৫০ হেক্টর। 

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কেউ কেউ তীব্র শীত উপেক্ষা করে বীজতলা থেকে চারা তুলে জমা করছে।  আবার কেউ পাওয়ার টিলার দিয়ে হাল বয়ে জমি তৈরি করছে। আবার কোথাও কোথাও কৃষকরা তাদের তৈরিকৃত জমিতে ইরি-বোরো ধানের চারা রোপন করছে। কোথাও গভীর অথবা অগভীর নলকূপ দিয়ে পুরোদমে চলছে জমিতে সেঁচকাজ।

গত কয়েকদিন থেকে সূর্যের দেখা মিলছে না। ঘনকুয়াশার সঙ্গে হালকা বাতাসে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। প্রচন্ড শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছেন মানুষ ও গৃহপালিত পশু।

আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক আক্কাছ আলী বলেন, এ বছর আমি ৩বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করার জন্য হালচাষ করে প্রস্তুত করেছি। এখন বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন করে ৩-৪দিনের মধ্যে রোপনের চেষ্টা করবো। একই এলাকার মির্জাপুর গ্রামের কৃষক মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, আগাম ধান রোপন করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। ধানের রোগ বালাই কম থাকে। তাই আমি প্রতি বছর আগাম ইরি-বোরো ধানের চারা রোপন করে থাকি। 

নওগাঁ সদর উপজেলার কিত্তিপুর গ্রামের কৃষক আয়েন উদ্দিন মন্ডল বলেন দীর্ঘদিন পর এবার ধানের দাম পেয়েছি ভাল। পরিবারের সারা বছরের খাবার রেখে ধান বিক্রি করে টাকাও পেয়েছি অনেক। তাই ধান রোপনে শীত কোন বিষয না। একই কথা বলেন হাপানিয়া এলাকার কৃষক বেলাল।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ শামসুল ওয়াদুদ জেলার ফসলের মাঠে এখন মহোৎসব চলছে উল্লেখ করে বলেন আর অল্প কয়েকদিনের মধ্যে বোরো ফসলের চাষাবাদ সম্পন্ন হবে। আবহাওয়া জনিত কারণে প্রতিবছর বীজতলা কম বেশী নষ্ট হলেও এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বীজতলায় তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। এ বছর বোরো ধানের চারার কোনো সংকট বা কাটতি হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

আরকে//