ঢাকা, সোমবার   ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ১৫ ১৪৩১

বেনাপোল রেলপথ

সিন্ডিকেট থেকে বেরিয়ে ছয় মাসে আয় ২৬১ কোটি টাকা

বেনাপোল প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ০৩:৪৭ পিএম, ২৮ জানুয়ারি ২০২১ বৃহস্পতিবার

বেনাপোল বন্দর দিয়ে রেলপথে চলতি অর্থ বছরের ছয় মাসে ২৬১ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছে সরকার। অন্যদিকে রেল কর্তৃপক্ষ ভাড়া বাবদ ২ কোটি ৮৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা আয় করেছে। এ সময়ে রেলপথে পণ্য আমদানি হয়েছে ৮২২ কোটি টাকার। যার পরিমাণ ২ লাখ ৩৯ হাজার ৪৫৪ দশমিক ৩ টন। 

তবে চলতি অর্থ বছরের শেষে এ পথে দ্বিগুণ পরিমাণ রাজস্ব ও ভাড়া আদায় হবে বলে জানিয়েছেন বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শাহিদুজ্জামান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভারতের বনগাঁ পৌরসভার অধীনে কালিতলা আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাক দিনের পর দিন পার্কিংয়ে  রেখে একটি সিন্ডিকেট নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিল। ওই পার্কিং থেকে কন্ট্রাকের মাধ্যমে ৩০/৪০ হাজার টাকায় ট্রাক ভাড়া নিয়ে বেনাপোল বন্দরে ট্রাক পাঠাতো সিন্ডিকেটের সদস্যরা। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এতে করে অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে বাংলাদেশি আমদানিকারক ও ভারতের রফতানিকারকরা হিমশিম খাচ্ছিল। 

এর ফলে প্রতিটি পণ্য চালানে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ায় যার প্রভাব এসে পড়ছিল বাংলাদেশের বাজারে। তারপরও দুদিন পর পর নানা ধর্মঘটের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা। 

ওখান থেকে প্রতিদিন নিজেদের ইচ্ছেমত কবে কোন ট্রাক বাংলাদেশে যাবে তা তারাই নির্ধারণ করে দেয়ালে কাগজ সেটে দেন। দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে আমদানিকৃত পণ্যগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তদুপরি, শিল্পের কাঁচামাল সময়মতো কারখানায় পৌঁছাতে না পারায় শিল্প কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। ট্রাক চালকরাও এই প্রক্রিয়াটিতে লোকসানে পড়ছে। 

এর মধ্যে দু’দেশের কাস্টমস, রেল মন্ত্রণালয় ও সকারের উচ্চ পর্যায়ে নীতি নির্ধারকরা ২০২০ সালের ৪ জুন রেলপথে পণ্য আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর করোনার আগে বেনাপোল রেলপথে কেবল কার্গো রেলের মাধ্যমে ভারত থেকে সপ্তাহে একটি বা দুটি রেল আসতো। আবার কখনো দেখা গেছে মাসে একটি রেল আসছে না। 

কিন্তু বর্তমানে চিত্র ভিন্ন। প্রতিদিন কার্গোরেল, সাইডোর কার্গো রেল এবং প্যার্সেল ভ্যানের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হচ্ছে। এতে সরকারের যেমন রাজস্ব আয় হচ্ছে, তেমনি রেলেরও বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আহরণ হচ্ছে। এর ফলে কমছে ট্রাক চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম, সাশ্রয় হচ্ছে ব্যবসায়ীদের সময় ও খরচ।

বেনাপোল রেল স্টেশন সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল স্থলবন্দর রেলপথে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৪৫৪ দশমিক ৩ টন। যা থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ১১ কোটি ৮৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। 

এদিকে গত বছরের ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ পথে ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৭৩ দশমিক ৯ টন। যা থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮ কোটি ৮৮ লাখ ২৬ হাজার টাকা।

বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শাহিদুজ্জামান জানান, ‘বর্তমানে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে স্থলপথের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রেলপথে পণ্য আমদানি হচ্ছে। এতে বন্দরের রেল ইয়ার্ড না থাকায় পণ্য রাখতে কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে ইতোমধ্যে বন্দরে দুটি রেল ইয়ার্ড নির্মাণের ভিত্তি স্থাপনা করা হয়েছে। আশা করি খুব শিগগিরই এ সমস্যা সমাধান হবে।’

তিনি আরও জানান, ‘আগে এ পথে চাল, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, শুকনা ঝাল, পাথর ও ফ্লাই অ্যাশ আমদানি হতো বর্তমানে বিভিন্ন প্রশাধনী পণ্য, দেশের বিভিন্ন গামেন্টেসের ডেনিম ফেবিক্স, পিকআপ, ট্রাক্টরসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হচ্ছে।’

এভাবে যদি রেলপথে পণ্য আমদানি অব্যাহত থাকে তাহলে এ বছর রেল খাতে সরকারের রাজস্ব দিগুণ আদায় হবে বলে জানান তিনি।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, ‘প্রায় দুই দশক ধরে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ভারতীয় ট্রাক পার্কিং সিন্ডিকেট জিম্মি করে রেখেছে। ভারতীয় হাই কমিশনারসহ বিভিন্ন মহলে আবেদন করার পরেও আমরা কোনও সমাধান পাচ্ছি না। বর্তমানে রেলপথে সব ধরনের পণ্য আমদানি সচল রয়েছে। এতে গত বছরের তুলনায় এ বছর রেল খাতে সরকারের দিগুণ রাজস্ব আদায় হবে।’

বেনাপোল কাস্টম কমিশনার মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘কন্টেইনানের মাধ্যমে আমদানি বাণিজ্য শুরুতে আমাদের স্টক হোল্ডারসহ সকল ব্যবসায়ীর বাণিজ্য সম্প্রসারণে নতুন দিগন্তের সুচনা হয়েছে। এতে সময় খরচ যেমন বাঁচবে তেমনি যথেষ্ট নিরাপত্তাও রয়েছে। ভারত থেকে রেলযোগে মালামাল আসলে আমাদের রেল খাতেও উন্নয়ন হবে। বন্দর একটি চার্জ পাবে। ব্যবসায়ীদের খরচ কম হবে। আগে সাধারণ রেলে পণ্য এসেছে ভারত থেকে। এখন থেকে কার্গোরেল, সাইডোর কার্গোরেল, প্যার্সেল ভ্যান ও কন্টেইনারের মাধ্যেমে পণ্য আসা অব্যাহত রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘রেলপথে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানিকারকরা পণ্য আমদানি করতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। গত ছয় মাসে সরকার ২৬১ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছে।  চলতি অর্থবছরে এটি বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
এআই/এসএ/